Sylhet View 24 PRINT

কোনো তদবিরই কাজে এলো না ওসি আতাউরের!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৪-০৭-২৫ ০৪:১২:৫২

রফিকুল ইসলাম কামাল, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০১৪ :: কনস্টেবল হিসেবে পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। তারপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের তোষামোদি করে তরতরিয়ে উঠে যান উপরের দিকে। একে একে গড়ে তুলেন সাম্রাজ্য। সেই সাম্রাজ্যে তিনিই ছিলেন একচ্ছত্র অধিপতি। সিলেট কোতোয়ালি থানায় যোগদানের পর তার সাম্রাজ্য আরো বেশি বিস্তৃত হয়। তার মদদেই কোতোয়ালি থানায় চলতে থাকে একের পর এক অপকর্ম। তিনি দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলেন থানাকে। কিন্তু তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি কেউই। তবে শেষ রক্ষা আর হয়নি আতাউরের। তারা ‘প্রিয় দুর্নীতির আখড়া’ কোতোয়ালি থানা ছাড়তেই হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিটের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ক্লোজড হওয়ার শেষমুহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্নভাবে উচ্চমহলে তদবির করেন যান তিনি। কিন্তু কোনো তদবিরেই কাজ হয়নি!

সম্প্রতি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আতাউরের সাম্রাজ্যে পতন ধরে। গত ১৭ জুলাই সিলেট নগরীর নয়াসড়কস্থ এলাকায় গাড়ি পার্কিংকে কেন্দ্র করে ছাতক পৌরসভার মেয়র কালাম আহমদ চৌধুরীর ভাই কামাল আহমদ চৌধুরীকে কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য থানা হাজতে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করেন। এ সংক্রান্ত খবর গত বুধবার একটি শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এর ঠিক পরদিন, বৃহস্পতিবার ওসি আতাউরের কুকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশ হয় ওই দৈনিক পত্রিকা এবং সিলেটভিউ টোয়েন্টিফোর ডটটম-এ।

ওই নির্যাতনের ঘটনায় কামাল আহমদ চৌধুরীর ছোট ভাই শামীম আহমদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী ও মো. হাবিবুল গনির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ পুলিশের আইজিপি এবং সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে ওসি আতাউরসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর নির্দেশ দেন। ঘটনাটি তদন্ত করে চার সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

ওই খবর প্রকাশ এবং হাইকোর্টের এমন নির্দেশনার পর নিজের আসন্ন বিপদ টের পেয়ে অতীতের মতো সাম্রাজ্য বাঁচাতে তৎপর হয়ে ওঠেন আতাউর। পুলিশের উর্ধ্বতন মহল তো বটেই, সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরকেও বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করতে চেষ্টা চালান আতাউর। ‘তার বিরুদ্ধে পুলিশের উর্ধ্বতন মহল ষড়যন্ত্র করছে’ এমনটা বলে তিনি বিভিন্ন উচ্চমহলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালান। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার সিলেট সফরে থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পেছনে পেছনে ঘুরে কোতোয়ালি থানাকে কেন্দ্র করে নিজের অপকর্মের সাম্রাজ্যকে বাঁচাতে জোর তদবির চালান আতাউর। কিন্তু অর্থমন্ত্রী তাকে কোনো পাত্তাই দেননি। এরপরও দমে যাননি আতাউর। একের পর এক উর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ করে সিলেটে থাকতে এবং নিজের চাকরি বাঁচাতে তদবির চালান তিনি।

কিন্তু অতীতে এমন তদবিরে সফল হলেও এবার আর শেষ রক্ষা হলো না তার। সিলেট থেকে তার বিদায়ের ঘন্টা বেজে যায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত প্রায় ১১টার দিকে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার ঢাকা থেকে তাকে ক্লোজড করা হয়। কোতোয়ালি থানা থেকে ক্লোজড করে রংপুর রেঞ্জে তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে- নগরীর জিন্দাবাজারের সন্ধ্যা রাতে নেহার মার্কেটের দারোয়ানকে খুন করে স্বর্ণের দোকান লুট করার ঘটনায় ২০১৩ সালের ৭ জুলাই আতাউরকে মৌলভীবাজার সদর থানায় বদলি করা হয়। এরপর থেকে আতাউর পুনরায় কোতোয়ালী থানায় ফেরার জন্য সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে তদবির করে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর আবারও কোতোয়ালীতে ফিরে আসেন আতাউর। এরপর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। কাউকেই পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে গড়ে তুলেন এক অপরাধ সাম্রাজ্য। সেই সাম্রাজ্য এবার ভেঙ্গে খান খান!

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.