আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ম্লান হয়ে আসছে সিলেটি ঐতিহ্য!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-১৩ ০০:০৭:৩৪

আব্দুল আহাদ :: হিম হিম ঠা-ায় গরম গরম পিঠা খেতে সবাই থাকেন অধির আগ্রহে। সিলেট বিভাগে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিশেষ বিশেষ পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তাছাড়া দু-তিন পদের পিঠা নিয়ে বাপের বাড়ি হতে শ্বশুর বাড়িতে আসা সিলেট বিভাগের মানুষের চিরায়ত ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত। কালের বিবর্তণে এ ঐতিহ্য এখন ম্লান হয়ে আসছে।

তবে শীত এলে প্রকৃতির এই সুন্দর জনপদে এখনো পিঠা তৈরির উৎসব শুরু হয়। শীতের পিঠার স্বাদের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই ছন্দে ছন্দে বলেন, ‘শীতের পিঠা ভারি মিঠা’। চুলার পিঠে বসে পিঠা খাওয়ার শৈশব স্মৃতি সবারই কম বেশি রয়েছে। ‘পৌষ-পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে, আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’ কবি সুফিয়া কামাল তার কবিতায় পিঠা খাওয়ার দৃশ্য এভাবেই তুলে ধরেছেন।

এক সময় শুধু গ্রামের মানুষই পিঠা উৎসব করতো। শহুরে ব্যস্ততার কারণে পিঠার স্বাদ নিতে নগরজীবীদের কেউ গ্রামে গিয়ে পিঠা খেয়ে আসতো। অথবা গ্রাম থেকে শহরে বসবাসকারী প্রিয়জনদের জন্য পিঠা তৈরি করে পাঠাতো কেউ কেউ। কিন্তু এখন সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই দৃশ্যপটও আমূল বদলে গেছে। এখন গ্রামের মত শহরেও শীতের সব ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। বিভিন্ন সংগঠন সিলেট নগরীতে পিঠা নিয়ে উৎসবেরও আয়োজন করে।

বিগত তিন বছর ধরে সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্টির আয়োজনে রিকাবীবাজরস্থ পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পিঠা উৎসব হয়ে আসছে। প্রতিবছর শীত এলে এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর আর বিভিন্ন বয়সের পিঠাপ্রেমীরা উদরপুর্তি করতে আসেন এই পিঠা উৎসবে।

তাছাড়া নগরীর বিভিন্ন খাবারের দোকানগুলোতে পুরো শীতের মৌসুমজুড়ে চলে পিঠা উৎসব। সেইসঙ্গে খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুতকারক অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করে ভোক্তাদের জন্য অপেক্ষা করেন।

শীতের মজাদার পিঠার মধ্যে রয়েছে ভাপা, পাটিসাপটা, পাকন, পুলি, মিঠা, ক্ষীরপুলি, নারকেলপুলি, আনারকলি, দুধসাগর এবং চিতই, মালপোয়া, ঝিনুক পিঠা, তিলের বরফি, নারিকেলের পপ, তিলের পুলি, মাছ পিঠা, খাজা পিঠা, হৃদয়হরণ, গোলাপ জামান, লবঙ্গ লতিকা, পান্তুয়া, নকশী পিঠা, তালের পিঠা, সুজি পিঠা, সবৌ পিঠা, সন্দেশ, নুনগড়া পিঠা, কামরাঙ্গা পিঠা, বিরনপুলি পিঠা, পায়েস, রঙ্গীলা পাটিসাপটা, ডুঙ্গা পিঠা, চৈ পিঠা, কলা পিঠাসহ প্রভৃতি।

এছাড়াও নগরীর অলিতে-গলিতে কিংবা ব্যস্ততম বিভিন্ন সড়কের পাশে মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন। তবে এসব দোকানে চিতই ও ভাপা পিঠা ছাড়া অন্য পিঠা তেমন একটা পাওয়া যায় না। স্বল্প আয়ের মানুষরাই মূলত এই পিঠা খেয়ে থাকেন।

শীতের সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার ঠান্ডা বাতাসে ভাপা পিঠার গরম আর সুগন্ধি ধোয়ায় মন ব্যাকুল হয়ে যায়। সরষে বা ধনে পাতার বাটা অথবা শুঁটকির ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে শরীরের শীত অনেকটাই কমে যায়। তাই বলা যায়, পিঠা ছাড়া শীত সত্যিই জমে না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ জানুয়ারি ২০১৮/আআ/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন