আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট নগরীর ব্যস্ততম সোবহানীঘাট পয়েন্টের ‘হোটেল মেহেরপুর’ থেকে উদ্ধার হওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় জানা গেছে নতুন তথ্য। তারা একে অপরকে ভালোবাসতেন। তরুণীর বিয়ে অন্যত্র ঠিক করেছেন তাঁর পরিবারের লোকজন। বিষয়টি তাঁদের প্রেমে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। সেটি তাঁরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। পরিবারকে বুঝিয়ে-শুনিয়েও কাজ হচ্ছিলো না। সেজন্যই দু\'জন একসাথে অাত্মহত্যার মতো জঘন্য পাপের পথে পা বাড়ালেন। তবে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ২০৬ নাম্বার কক্ষটিতে তরুণের লাশ ঝুলানো ছিলো; অার তরুণীর লাশ বিছানার মধ্যে।
হতভাগ্য তরুণী হচ্ছেন রুমী পাল; তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট উজানীনগর গ্রামের মিলন পালের মেয়ে। আর তরুণ মিন্টু দেব; জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথবাড়ি গ্রামের মতিলাল দেবের ছেলে।
রবিবার দুপুরে মুসলিম দম্পতি পরিচয়ে দু\'জন হোটেল কক্ষটিতে উঠেন। পরে রাত ১০ টার দিকে দরজা ভেঙে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর অাগে হোটেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানা পুলিশ ধারণা করছে- মিন্টু দেব প্রথমে রুমী পালকে হত্যা করেছেন। পরে তিনি রুমীর ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে অাত্মহত্যা করেছেন।
বিষয়টি এখনো খোলাসা হয়নি। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। ‘আজ পোস্টমর্টেম পরে বোঝা যাবে হোটেল মেহেরপুরে আসলে কি ঘটেছিলো?’ এমনটিই বলছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন।
হোটেলের একটি সূ্ত্র রুমী পালের দুলাভাইয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘হোটেলে উঠার পর সন্ধ্যার দিকে রুমী পাল তাঁর দুলাভাইয়ের মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠান। মেসেজটি ছিলো এমন ‘হোটেলে মেহেরপুরের ২০৬ নাম্বার কক্ষে আমরা আছি। আমরা আত্মহত্যা করছি...।’ মেসেজটি পেয়ে তিনি দ্রুত হোটেল মেহেরপুরে হাজির হন।’’
সূত্রটি অারো জানায়- রুমীর দুলাভাই হোটেল কর্তৃপক্ষকে রুমটি খোলার কথা বলেন। তখন তারা বলেন রুমে তো মুসলিম দম্পতি রয়েছেন। এভাবে রুমে ডাকা নিয়মের মধ্যে পড়েনা। পরে তিনি মোবাইল ফোনের মেসেজ দেখালে হোটেলের ম্যানেজার পুলিশকে বিষয়টি জানান। এরপর রুমে গিয়ে ডাকাডাকি করেও কোন সাড়া মেলেনি। একপর্যায়ে পুলিশ দরজা ভেঙে ফেল দেখতে পায় দু\'টি মরদেহ।’
তখন রুমের ভিতরে মিন্টু দেবের মরদেহ রুমী পালের ওড়না দিয়ে ঝুলানো ছিলো। আর রুমী পালের মরদেহ একটি বিছানাতে ডান দিকে মুখ করে শোয়ানো ছিলো। কক্ষে অারেকটি বিছানা ছিলো ফাঁকা। সেটি পরিপাটিও ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে দু\'জনই একই বিছানাতে ছিলেন।
ঘটনাস্থলে থাকা ওই দুলাভাইয়ের বরাত দিয়ে হোটেল সূত্রটি অারো জানায়- ‘মেয়েটির বিয়ে অন্যত্র ঠিক করেছিলেন তার পরিবারের লোকজন। বিষয়টি মানতে না পেরেই তিনি এই পথ বেছে নিয়েছেন। এমনটি নাকি বলাবলি করছিলেন নিহত রুমী পালের দুলাভাই। যাকে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন রুমী।’
পরে নারী পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে রুমীর মরদেহ এবং আর পুরুষ পুলিশ সদস্য ছেলের মরদেহ নামিয়ে ব্যাগে ভরে ময়না তদন্তের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেলে পাঠান। আজ সোমবার মরদেহ দু’টির ময়না তদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর স্বজনদের কাছে শেষকৃত্যের জন্য দেয়া হবে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন। রবিবার রাত ১০ টার দিকে পুলিশ মরদেহ দু’টি উদ্ধার করার পর লাশ দু’টি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন- ‘পুলিশ রাতে দরজা ভেঙে হোটেলের কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পায়, তরুণের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায়। আর তরুণীর লাশ বিছানাতে শোয়ানো। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে ওঠে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মিন্টু দেব প্রথমে তরুণীকে হত্যা করে পরে নিজে আত্মহত্যা করেছে।’
হোটেলে রেজিস্টার খাতা জব্দ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি হোটেলে থাকা দু’জন লোককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২২ জানুয়ারি ২০১৮/ ডিজেএস/ এমইউএ