আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ডেইজির চোখ সিলেট-৬ আসনে!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-০২ ০০:১১:০৩

ছবি: শেখ হাসিনার সাথে ডেইজি সারোয়ার।

রফিকুল ইসলাম কামাল :: রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তিনি। রাজনীতির মাঠে পা রাখাটাই তাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পথটা কন্টকমুক্ত নয়, বরঞ্চ ছিল কন্টকপূর্ণ। সেই কন্টকের বাধা ডিঙিয়ে ডেইজি সারোয়ার এগিয়েছেন নিজের লক্ষ্য পানে। প্রতিবন্ধকতার দেয়াল গতিরোধ করতে পারেনি তাঁর। দৃঢ়তা, সাহসিকতা, রাজপথে সক্রিয়তা-এসব দিয়েই ক্রমেই সাফল্যের রঙিন পথে ছুটছেন ডেইজি; হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র। এবার তাঁর চোখে আরো বড় স্বপ্ন; হতে চান সংসদ সদস্য। সিলেট-৬ আসনকে লক্ষ্য বানিয়ে আগামীর পানে হাঁটছেন ডেইজি।

ডেইজি সারোয়ার সিলেটের মেয়ে; নির্দিষ্ট করে বললে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার চন্দ্ররপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তাঁর চাচা এ কে এম গউছ; আর সিলেট পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন মামা বাবরুল হোসেন বাবুল, যিনি পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ডেইজির রাজনীতিতে আসার পেছনে এই পারিবারিক রাজনৈতিক আবহ কাজ করেছে প্রবলভাবে।

সম্প্রতি সিলেটভিউ২৪ডটকম’র এ প্রতিবেদকের মুখোমুখি হয়েছিলেন ডেইজি সারোয়ার। বলেছেন নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আর আগামীর স্বপ্নের কথা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১, ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ডের (সংরক্ষিত আসন নং ১২) কাউন্সিলর ডেইজি সারোয়ার স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের এলাকা সিলেট-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। এজন্য দলের হাইকমান্ডে মনোনয়ন চাইবো।’

রাজনীতির প্রধান ময়দান ঢাকায় প্যানেল মেয়র থাকার পরও কেন সিলেটে এসে সংসদ নির্বাচন করতে চান ডেইজি? শোনা যাক তাঁর মুখেই, ‘সিলেটের মেয়ে হিসেবে আমি গর্বিত। আমি ঢাকায় থাকলেও সিলেটের প্রতি আমার হৃদয়িক টান, মায়া কোনো কিছুরই কমতি নেই। যে মাটিতে আমি জন্মেছি, বেড়ে ওঠেছি, সেখানকার মানুষের সেবা করার জন্যই এখানে নির্বাচন করতে চাই; যাতে এখানকার মানুষের সুখ-দুঃখের কথা উচ্চস্বরে মহান জাতীয় সংসদে বলতে পারি।’

ডেইজি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, ‘জনপ্রতিনিধির জন্য জনগণ নয়, বরঞ্চ জনগণের জন্যই জনপ্রতিনিধি’। এই মূলমন্ত্রখে আমি প্রমাণ করতে চাই। প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিই যেন এই স্লোগান ধারণ করেন, আমি সেটাই চাই।’

নিজের কর্মক্ষমতার প্রতি অগাধ আস্থার কথাও ফুটলো ডেইজির মুখে, ‘আমি যে পর্যায়ে আছি, সৎ সাহস, সততা, আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজ করছি। যে কোন জায়গায় মানুষের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত আমি।’

সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন সময়েই ডেইজির সৌভাগ্য হয় নেতৃত্ব দেয়ার। তিনি যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী, তখনই গার্লস গাইড লিডার ও ইয়েলো গাইড লিডার ছিলেন। ডেইজির জীবন ছিল উচ্ছ্বলতায় ভরা; সীমাবদ্ধ গন্ডিতে আবদ্ধ ছিলেন না তিনি। স্কুলে ভলিবল টিমের সদস্য ছিলেন তিনি; গান গাইতেন, গিটার বাজাতেন, ওইটুকুন বয়সেই শিখে ফেলেছিলেন গাড়ি চালানো। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই সিলেটের তৎকালীন শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘ঝুমকো জবা’য় সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সময়ের পরিক্রমায় ডেইজি যে অনেক দূর এগিয়ে যাবেন, তার বীজ যেন তখনই বোনা হয়ে গিয়েছিল।

এসএসসি পরীক্ষা পাসের পর ডেইজিকে চলে যেতে হয় ঢাকায়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে সেনা কর্মকর্তা গোলাম রাসূল ভুঁইয়ার সাথে বিয়ে। এরপর দীর্ঘ সময় সেনানিবাসে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরের জীবন। সেই জীবনের অবসান ঘটে ২০০০ সালে, গোলাম রাসূল ভুঁইয়া যখন সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে অবসরে যান। সেখান থেকে নতুন পথে পা বাড়ান ডেইজি, বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ।

ডেইজি সারোয়ার সিলেটভিউকে জানান, ওই সময় ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে একটি গানের অনুষ্ঠানে দেখা হয় যুব-মহিলা লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সাথে। অপুর কাছ থেকেই যুব-মহিলা লীগের রাজনীতিতে জড়ানোর প্রস্তাব পান ডেইজি। সেই থেকে শুরু। তবে শুরুতে পরিবারের কেউই তাঁর রাজনীতিতে আসাকে উৎসাহ দেননি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ২০০০ সালে দেখা করেন অপু উকিল, নাজমা আক্তার, ডেইজি সারোয়ারসহ কয়েকজন। যুব-মহিলা লীগ শুরু করতে দিকনির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। তিনিই পরে নাজমা আক্তারকে আহবায়ক ও অপু উকিলকে যুগ্ম-আহবায়ক করে যুব-মহিলা লীগের কমিটি করে দেন। কমিটিতে সদস্য ছিলেন ডেইজি। শুরু হয় সারাদেশে যুব-মহিলা লীগের কমিটি গঠনের কাজ।

ঢাকার গুলিস্তানে ছিল যুব-মহিলা লীগের কার্যালয়। সেখানে মাঝেমধ্যে আসতেন শেখ হাসিনা। একদিন সেখানে এসে ডেইজিকে সিলেটে কমিটি গঠন করার কথা বলেন তিনি। কাজে নেমে পড়েন ডেইজি। কিন্তু সিলেটে আসার পর তাঁকে সহজভাবে নিতে পারেননি অনেকেই। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই দাঁড় করান যুব-মহিলা লীগ, সিলেটের কমিটি। পরে শেখ হাসিনা এ কমিটি ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিভাগে যুব-মহিলা লীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। সফলতার সাথে তা পালন করেন ডেইজি। সময় হয় যুব-মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ চেয়ে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিলেন ডেইজি। কমিটিতে পদ পেতে বিভিন্নজন তখন চালাচ্ছেন লবিং। শেখ হাসিনার উপর বিশ্বাস রেখে নিরব থাকলেন ডেইজি। কমিটি ঘোষণা হলো, ঠিকই সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেলেন ডেইজি।

বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন ডেইজি সারোয়ার। তাঁকে দমিয়ে রাখতে দেয়া হয় মামলা, যেতে হয় কারাগারে। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা, তাঁকে রাখা হয় সাব-জেলে। নিজের প্রিয় নেত্রীকে দেখতে সাব-জেলের সামনে গিয়ে বসে থাকতেন ডেইজি। তাঁর মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন রাজপথেও। এবারও তাই বরণ করে নিতে হয় কারাজীবনকে।

তত্ত্বাবধায় সরকার বিদায় নিল। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাবেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে। ডাক পড়লো ডেইজির, জানানো হলো তিনিও হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী। ডেইজি বলছিলেন, ‘স্বপ্নের মতো যেন ঘটে গেল সবকিছু!’

পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলো। দলের নির্দেশে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন করে বিজয়ী হলেন ডেইজি। যাঁর প্রতি ভরসা রেখে রাজনীতির ময়দানে পা চালাচ্ছেন ডেইজি, সেই শেখ হাসিনা এবার তাঁকে করলেন ঢাকার উত্তর সিটির প্যানেল মেয়র। এ সিটির নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের প্রয়াণে বর্তমানে মেয়রের দায়িত্বের অনেকটাই পালন করতে হচ্ছে ডেইজিকে। কাজ করছেন পরিচ্ছন্ন ঢাকা উত্তর সিটি গড়ে তুলতে।

সেই ডেইজি সারোয়ার সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করতে চান। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, যিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। নাহিদ থাকা সত্ত্বেও এ আসনটিতে নির্বাচন করার স্বপ্ন বুনছেন ডেইজি।

নাহিদের সাথে এ নিয়ে দূরত্ব তৈরী হবে না? ‘আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তিনি তাঁর মতো কাজ করছেন। আমি আমার মতো কাজ করে এগিয়ে যেতে চাই। তাঁকে নিয়ে খারাপ কিছুই বলবো না আমি। ভালো কাজের মাধ্যমে জনগণের কাছে যেতে চাই।’ বলছিলেন ডেইজি।

অবশ্য ‘পেতেই হবে’-এই আগ্রাসী মনোভাব নেই ডেইজির। নিজের চাওয়া যাতে পাওয়ায় পরিণত হয়, সেজন্য অপেক্ষা করতেও রাজি তিনি, ‘দল যদি এবার আমাকে মনোনয়ন না দেয়, তবে আমি অপেক্ষা করবো, কাজ করে যাবো। আশা থাকবে, আগামীতে মনোনয়ন পাওয়ার।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন