আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

লাখাইয়ে সংঘর্ষে আহত বৃদ্ধের মৃত্যু, বসতঘরে আগুন-লুটপাট

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-১৪ ২১:০৬:৪২

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জের লাখাইয়ে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত কুদ্দুছ মোল্লা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা, লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে পুরুষশুন্য পরিবারের ঘুমন্ত নারী-শিশুদের বসতঘরসহ গোয়াল ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় দূর্বৃত্বরা। এ ঘটনায় অন্তত ২০/২৫টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই সাথে গবাদিপশুসহ হাঁস, মোরগ ও কবুতর পুড়ে মারা যায়। লুটপাট করা হয় টাকা-পয়সা, স্বর্ণলঙ্কারসহ যাবতীয় মালামাল। সব কিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

জানা যায়, উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মোল্লা ও মুড়িয়াউক গ্রামের মাসুক মিয়া তালুকদারের লোকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে গত ৯ ফেব্রæয়ারি সকালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। এর মধ্যে গুরুত্বর আহত অবস্থায় নুরুজ্জামান মোল্লার পক্ষের কুদ্দুছ মোল্লাকে উদ্ধার করে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানে চারদিন চিকিৎসা নেয়ার পর মঙ্গলবার ভোররাতে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে মাসুক মিয়া তালুকদারের পক্ষের পুরুষরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

এদিকে, মঙ্গলবার রাতে নিহতের লাশ বাড়ি নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। পরে ওই রাতেই নুরুজ্জামান মোল্লার পক্ষের রফিক, নুরু, মাসা, মামুন, খুর্শেদ, বশির, আক্কাস, আবুল কালাম, উজ্জ্বল ও শফিকসহ একদল লোক প্রতিপক্ষ মাসুক মিয়ার লোকজনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় মাসুক মিয়ার পক্ষের নারীরা শিশুদের নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা প্রথমে বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালায়। তাদের ঘরে থাকা টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, ও গরুছাগল নিয়ে যায়। পরে তারা অন্তত ১০/১২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পরিবারের লোকজন নিজেদের শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেলে ঘরে থাকা গরু, ছাগল, হাস, মোরগ ও কবুতসহ গৃহপালিত পশু ও পাখিগুলো মারা যায়। এছাড়া লুটপাটের পর অবশিষ্ট পরে থাকা ধান, চাল, স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাপত্রসহ যাবতীয় মালামাল পুরে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

বুধবার সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০/২৫টি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাই থেকে ধুয়া ভের হচ্ছে। সারা দিন শিশু সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে বসে উঠানে বসে কান্নাকাটি করছেন নারীরা। অন্যদিকে শিশুরাও খাবাররে জন্য কান্নাকাটি করছে।

এ ব্যাপারে বৃদ্ধা আলেয়া খাতুন জানান, মুক্তিযোদ্ধের সময় রাজাকাররা যা কিছু দেখেছিলাম, আজ আবার প্রতিপক্ষের লোজনের এমন তান্ডব দেখলাম। তারা হানাদার বাহিনীর মত আমাদের বড়ি-ঘরে হামলা চালিয়েছে সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। কোন রখমে নিজের প্রাণটা নিয়ে ঘর থেকে ভের হই।

এ ব্যাপারে এক পক্ষের মাসুক মিয়া তালুকদার বলেন, নির্বাচনে তৃতীয় স্থান পাবার পর নুরুজ্জামান মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সে পর পর চার চারবার মারামারি ঘটনা ঘটায়। তার উদ্ধ্যত আচরণ ও মারামারি সৃষ্টির জন্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার পর আবার ছাড়া পেয়ে আমাদের গ্রামের ২০/২৫ বাড়ী-ঘর সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়। ৫০/৬০ বাড়ীতে লুটপাট করে। বাড়ী-ঘরে থাকা গরু-ছাগল, মোরগ, মোরগী, কবুতর আগুলে পুড়ে মরে যায়। প্রত্যেক্যের বাড়ীর সব ধান-চাল, ক্ষেতে সবজী নিয়ে যায়। এদেখে মনে হবে যে এক ধ্বংষ লীলা।
অভিযুক্ত নুরুজ্জামান মোল্লার ছোট ভাই জানান, আমাদেরকে ফাঁসানোর জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন দিয়েছে। আমাদের পক্ষের লোকজন এ ধরণের কোন হামলা চালায়নি।

লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) দেওয়ান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

লুটপাটের বিষয়ে তিনি বলেন- রাতে লুটপাট হয়েছে, এখন আর হচ্ছে না।

পুলিশের উপস্থিতি এখনও সবজি ক্ষেতে লুটপাট হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- এমনটা হওয়ার কথা না। তবে আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/কেএস/এমকে-এম

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন