আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ডিজিটাল বাংলাদেশে ছনের তৈরী সরকারি বিদ্যালয়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-২৪ ১০:২৮:৪৮

শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা :: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ১২ কি.মি. দুরে সাতগাঁও চা বাগানের ছনখলা এলাকায় অবস্থিত ছনখলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় যার অবকাঠামো বাঁশ ও ছনের তৈরী। নেই কোন অবকাঠামো উন্নয়নের ছাপ, ধু ধু খোলামাঠে এ বিদ্যালয়টি এলাকার চা শ্রমিক সন্তান ও  নৃ-তাত্বিক জনগোষ্টির শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার আধাঁর হলেও এ বিদ্যালয়ে আধুনিকতার ছোয়া তো দুরে থাক, নিম্নতম সুযোগ-সুবিধা নেই। নড়বড়ে ঘর সামান্য বাতাস বৃদ্ধি পেলেই ঝুলতে থাকে। ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে সবসময় ভীতসন্ত্রস্থ থাকে শিশুরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বিদ্যালয়টি সাতগাঁও চা বাগান কর্তৃপক্ষের অধীনে ২০০৯ সালে স্থাপিত হয়। পরে, ২০১৩ সালে জাতীয়করণের আওতায় আসে বিদ্যালয়টি। জাতীয়করণের আগ পর্যন্ত চা বাগান কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করলেও, জাতীয়করণের পর তারা আর এ ব্যাপারে নজর দিচ্ছেন না।

সরেজমিনে  বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে দেখা যায়, জরাজীর্ণ স্কুল, টিনের দেয়াল, ছনের তৈরি ছাদ ও সিমেন্টের কাগজ ও বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে বিদ্যালয়টি। ভিতরে পার্টিশন দিয়ে ছোট ছোট ৪ টি কক্ষ তৈরী করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এখনও রয়েছে ছন বাঁশের তৈরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত ছনের তৈরি এই ছনখলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। জরাজীর্ন ভাঙ্গা ঘরে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

ঐ স্কুলে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী বর্ষা কালিন্দ জানায়, ক্লাস চলাকালীন ঝড় তুফান আসলে ভয়ে তারা কান্না করে। 
রিমা ভৌমিক নামের ৫ম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী জানায়, বসার জন্য বড় কষ্ট হয়ে তাদের। ব্রেঞ্চ সল্পতার কারণে গাজাগাজি করে বসতে হয়।আর বৃষ্টির দিনে শ্রেনী কক্ষে পানি পড়ে।

সহকারী শিক্ষক রিজভী আক্তার জানান, শুধুমাত্র অবকাঠামোগত সমস্যাটাই আমাদের প্রধান সম্যসা। বিশেষ করে ঝড় বৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুব সমস্যায় পরতে হয়। ঝড় আসলে স্কুল ঘরে থাকার পরিবেশ থাকে না। বাচ্চারা ভয়ে কান্না করে। অনেক কষ্টে তাদের আটকে রাখি।

সহকারী শিক্ষক ঝর্ণা কৈরী বলেন, শীতের দিনে বাচ্চাদের পাঠদানে মনযোগ থাকলেও, গ্রীষ্মের দিনে তাদের শ্রেণীকক্ষে রাখা কঠিন হয়ে যায়। সুর্যের তাপ সরাসরি এসে প্রচন্ড গরম সৃস্টি করে, বিদ্যুৎ বা সৌরবিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝড় - বৃষ্টির দিনে ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদেরকে রাখতে হয়। আকাশে কালো মেঘ আর দমকা হাওয়া দেখলেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত কৈরী জানান, এ বিদ্যালয়টিতে বিশেষ করে চা শ্রমিকদের  শিশুরা লেখাপড়া করে। বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসা খুবই জরুরী।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সাতগাঁও চা বাগান ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘জাতীয়করণের আওতায় আসার পর বাগান কর্তৃপক্ষ সংস্কার কাজ করেনি। শিক্ষার ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অতি শীঘ্রই বাগান কর্তৃপক্ষ সেমি পাকা ভবন নির্মাণ করে অবকাঠামো সংস্কার কাজ করবে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, ‘এ স্কুলটি ২য় পর্যায়ে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ ধরনের বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নকাজের জন্য সরকারের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। শীঘ্রই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। চা বাগান কর্তৃপক্ষের যেকোন উদ্যোগকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪ফেব্রুয়ারি২০১৮/এসটি/আআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন