আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরে খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৩-১৩ ১৮:৩৫:৫৪

সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে নলুয়া হাওরের হামহামি খাল খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন নামমাত্র দায়সারা খনন কাজ করে অধিকাংশ টাকা লুটপাটের পায়তারা চলছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খাল খনন কাজে ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজ না করে বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটের চেষ্ঠা করছেন। নাম মাত্র খনন কাজ করে খাল থেকে সামান্য মাটি উত্তোলন করে খালের পাড়ে মাটি স্তুুপ করে রাখা হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই বৃষ্টির পানিতে ওই মাটি গুলো আবার খালে চলে যাবে। এতে করে সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া কিছু নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয় সুত্র জানায়, উদয়ন ট্রেডার্স সিলেট নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জগন্নাথপুর উপজেলার তিনটি খালে খনন কাজের দায়িত্ব পায়। ৩০ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। খালগুলো হচ্ছে ভুরাখালি খালের আড়াই কিলোমিটার, মনাই খালি খালে ২কিলোমিটার অংশ ও বেতাউকা খালে তিন কিলোমিটার অংশ। তিনটি খালে সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশ খনন কাজের জন্য সরকার কর্তৃক ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে নলুয়ার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ভুরাখালি স্নুইট গেটের সামনের খাল থেকে মাটি তুলে খালের এক পাশে মাটি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। একই ভাবে মনাইখালি খাল থেকে মাটি তুলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।  বেতাউকা  খালে এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে খাল থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। খননকাজ চলাকালে ঠিকাদার ও পাউবোর কোন লোককে পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয় কৃষক ভুরাখালী গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের সাথে তিনি অভিযোগ করে বলেন, খাল খননের কাজ দেখে মনে হচ্ছে খাল খননের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে খাল খননের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এখন নাম মাত্র খনন কাজ করে সরকারের অর্থ অপচয় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব খনন কাজ পাউবোর কোন কর্মকর্তা তদারকি করছেন না। ফলে নাম মাত্র কাজ হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি সরকাররের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা  করেছেন।  

ভুরাখালি গ্রামের কৃষক সুলতান মিয়া বলেন, হাওরের ফসলক্ষায় জলাবদ্ধতা সংকট নিরসনে র্দীঘদিন ধরেই এলাকাবাসী খাল খননের দাবী জানিয়ে আসছিলেন। যার প্রেক্ষিতে এবার হামহামি খালে খনন কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু দায়সারা কাজ করায় এলাকাবাসীর কোন উপকারই আসবে বলে মনে হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, সামান্য পরিমানের মাটি তোলে ওই মাটিতে স্তুুপ করে খালের একপাড়ে রাখা হয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই মাটিগুলো খালের মধ্যে পড়ে যাবে। যে কারনে উপকৃত হবে না কৃষকরা। 

খাল খনন কাজের দায়িত্বে থাকা উদয়ন ট্রেডার্স এর পরিচালক সৈয়দ সুমন আহমদ জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করেছি। ভুরাখালি ও মনাইখালি খাল খনন কাজ শেষ হয়েছে। বেতাউকা খাল খনন কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন,কার্যাদেশ অনুযায়ী মাটি যেভাবে রাখার কথা আমি সেভাবে রেখেছি। বৃষ্টি হলে মাটি খালে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি কর্মকর্তারা জানেন।

জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, কৃষকরা খাল খননকাজে  অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। আমি খাল খনন কাজ সরজমিনে দেখে কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। খাল খনন কাজ যাতে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী সঠিকভাবে হয় এ ব্যাপারে পাউবোর সুনামগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিকের সাথে আলাপ করব।   

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, কাজ দেখে বিল পরিশোধ করা হবে। এখনো ঠিকাদারকে কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি। সঠিকভাবে কাজ না হলে বিল দেয়া হবে না।

তিনি আরো বলেন, বোরো ফসল মৌসুমে জলাবদ্ধতা সংকট দুর করতে পানি সম্পদ মন্ত্রীর নির্দেশে জগন্নাথপুর উপজেলার তিনটি খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ মার্চ ২০১৮/এসএইচএস/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন