আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

তাহিরপুরে দুই আধ্যাতিক সাধক শাহ্ আরেফিন (র.) ওরস ও গঙ্গাস্নান শুরু

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৩-১৪ ০০:১১:৪৩

এমএ রাজ্জাক, তাহিরপুর :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউডেরঘর সীমান্তবর্তী এলাকায় বুধবার থেকে তিনদিন ব্যাপি ৩৬০ আওলিয়ার অন্যতম সফর সঙ্গী হযরত শাহ্ আরেফিন (র.) বৃহৎ ওরস মোবারক এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ গঙ্গাস্নান বুধবার থেকে শুরু।

দুই ধর্মের বৃহৎ দুইটি উৎসবকে তাহিরপুর উপজেলায় এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দুইটি উৎসবকে ঘিরে এখানে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে সীমান্ত নদী যাদুকাটায় এবং সীমান্ত ঘেষা লাউড়েরঘর শাহ আরেফিন (র.) আস্তানায়।

শাহ আরেফিন (র.) অস্তানায় বাৎসরিক ওরস ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের ঢল নামে এবং শাহ আরেফিন (র.) আস্তানায় জমে উঠে পাগল ফকিরদের ওরস মেলা।

প্রতি বছর চৈত্র মাসের চান্দের সঙ্গে তাল রেখে হিন্দু ধর্মালম্বীদের দোল পূজার ২১ দিন পর যাদুকাটা নদীর দুই তীরে ধর্মীয় উৎসবে আসা পূন্যার্থীরা গঙ্গাস্নান এবং সোমবার ভোর থেকে শাহ আরেফিন (র.) আস্তানার মাঠে বসবে ওরশ মেলা। প্রায় ৫শ বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারও বুধবার সকাল থেকে একনাগারে শনিবার সন্ধা পর্যন্ত চলবে এ ওরশ মেলা।

গত কয়েকদিন ধরে ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান ও ওরশকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তবৃন্ধ ও সাধারন মানুষ জমায়েত হচ্ছেন। অনেক মানতের সফল ভক্তরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রাম থেকে শাহ আরেফিন (র.) আস্তানায় মানত নিয়ে ওরস আস্তানায় আসছেন। সেই সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাদুকাটা নদীর দুই তীরে গঙ্গাস্নান করার পূর্বে হাস, মুরগী, খাসি নদীতে ছেড়ে দিয়ে পাপ মোছনের আসায় স্নান করবেন। প্রতি বছর এ সময়ে দেশের দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা গরু, খাসি, মোরগসহ বিভিন্ন মানত নিয়ে ওরসকে ঘিরে সমবেত হচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ।

উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, শাহ আরেফিন (র) আস্তানায় ও পণাথীর্ত নদীর দুই তীরে প্রতি বছর ভক্তবৃন্ধসহ অন্যসম্প্রদায়ের মানুষও মানত নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। ওরস ও পণাথীর্ত মেলাকে ঘিরে শাহ আরেফিন (র.) আস্তানায় ও যাদুকাটা নদীর তীরে দোকানিরা তাদের বিভিন্ন পণ্যের জিনিস সাজিয়ে বিক্রি করার জন্য বসেছেন।

তিনি জানান, ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ একত্রে হয়ে মেলায় বুধবার সকাল থেকে কেনাকাটি চলবে শনিবার সন্ধাপর্যন্ত। শাহ আরেফিন (র.) আস্তানায় ওরশ উপলক্ষে মাজারের চারপাশে সারারাত চলবে ভক্তদের বাউলগান, দেহতত্ত্বগান, হালকা জিকির এবং হালকা নাছ। পাপ মোচন ও পুণ্য লাভের আসায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষাধীক নারী- পুরুষ এসে শাহ আরেফিন (রঃ) আস্তানায় মানত করেন এবং শাহ আরেফিন (র.) উসিল¬াই বিপদ- আপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জন্য বিশেষ মোনাজাত করবেন।

এইদিকে একই সময়ে দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে আসা পূন্যার্থীরা প্রতি বছরই চাঁদাবাজি, অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনের চালকগনের দ্বারা প্রতারণার শিকার হন। গঙ্গাস্নান  এবং শাহ্ আরেফিন(র.) ওরস উপলক্ষে উৎসবের তিনদিন এবং আগে-পরে ৫ দিন সুনামগঞ্জ থেকে যাদুকাটা নদীর পাড় ও লাউড়েরগড় পর্যন্ত, একইভাবে মধ্যনগর থেকে লাউড়েরগড় পর্যন্ত, সুরমা নদীর বিভিন্ন খেয়াঘাটে,তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুরে একই নদীর দুই খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হয়।

বাদাঘাটের পাতারগাঁওয়ে সড়কের একটি অংশে চাঁদাবাজি হয়। বীরেন্দ্রনগর থেকে বড়ছড়া পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের টাকা আদায় হয়। কাউকান্দি বাজার এলাকায় কাচা রাস্তায় চাঁদা আদায়ের শিকার হন মোটর সাইকেল যাত্রীরা। সীমান্ত সড়ক দিয়ে আসা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার কমলাকান্দার পুন্যার্থীরা চাঁদাবাজদের বিভিন্ন জায়গায় বখরা দিয়েই গঙ্গাস্নান ও শাহ আরেফিন (র.) আস্তনায় ওরস এলাকায় পৌঁছান। এসব স্থানে যাতে চাদাবাজী না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে এলাকাবাসী প্রসাশনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্নেন্দু দেব জানান, ‘খেওয়াঘাট এবং পরিবহন চালকদের হয়রানি রোধে প্রত্যেক এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সর্তক্য থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ এলাকায় আইনশূংখলা বাহিনীর লোকজন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।

তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, এবার মেলা ও গন্নস্নান উৎসব এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার  নিয়োজিত থাকবে।

সুনামগঞ্জ ২৮ বর্ডার গার্ট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় দুটি বৃহৎ উৎসব এক সঙ্গে শান্তিপূর্ন ভাবে পালন করার জন্য লাউড়েরঘর সীমান্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান বিজিবি ও চেকপোষ্ট মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে বাংলাদেশের মানুষ সীমান্তরেখা অতিক্রম করতে না পাওে এবং ভারতের মানুষ বাংলাদেশে না আসতে পারে সে জন্য বিজিবি সর্বাত্বক সর্তক্য থাকবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ মার্চ ২০১৮/এসএআর/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন