আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বিশ্বনাথে সওজের সড়কে ডালপালা ছাটাইর নামে চলছে গাছ কর্তন, লুট

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২১ ২০:০৬:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় থাকা ‘সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)’র একমাত্র সড়কের পার্শ্বে থাকা গাছের ডালাপালা ছাটাই, বাঁশ ও কলাগাছ অপসারণের নামে অবাদে চলছে বড় বড় গাছ কর্তন। প্রায় দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ‘রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়কে সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এসব গাছ কর্তন শেষে মিনি ট্রাকে লু করা হলেও অদৃশ্য কারণে সওজের সেই কর্মকর্তা’সহ সওজ কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব।

জানা গেছে, ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কের পার্শ্বস্থ বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা, বাঁশ ও কলাগাছ সড়কের উপরে আসার ফলে পেভমেন্টের ক্ষতি হচ্ছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই গাছ থেকে পানির ফোঁটা পড়ে সড়কের কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘœ হয়। তাই উক্ত সড়কে গাছের ডালপালা ছাটাই এবং বাঁশ ও কলাগাছ অপসাণের জন্য জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিলেটের সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর সওজ’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এরপর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশ্বনাথের ৩ ইউপি চেয়ারম্যান ও পল্লী বিদ্যুৎ’র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কাছে অবগতির জন্য উক্ত অনুলিপিটি প্রেরণ করা হয়। এরই ভিত্তিতে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল ধলিপাড়া গ্রামের জনৈক আকবর আলী গত ২/৩ দিন ধরে সড়কের পার্শ্বস্থ গাছের ডালপালা ছাটাই কাজ শুরু করেছেন। কিšুÍ ডালপালা ছাটাইর নামে তিনি সওজের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সড়কের পার্শ্বস্থ বড় বড় সরকারি গাছ কর্তন করে পিকআপ গাড়িতে করে অন্যত্র সড়িয়ে নিচ্ছেন এম অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে, রোববার দুপুরে সড়কের মদনপুর গ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায় গাছ কর্তনের উৎসব চলছে। আকবর আলীর নিযুক্ত শ্রমিকরা গাছ কর্তন করে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। গাছ কর্তনরত শ্রমিকদের কাছে স্থানীয় সাংবাদিকরা গাছ কর্তনের ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানায় (সাংবাদিকদেরকে) তারা (শ্রমিক) জানায় ‘সওজ ও স্থানীয় প্রশাসনের’ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির ভিত্ত্বিতেই গাছগুলো কাটছেন। এসময় প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে (প্রতাবপুর) অবস্থান করছিলেন সেই আকবর আলী ও সওজের সুপারভাইজার মুজিবুল হক। সেখানে গিয়ে গাছ কর্তনের ব্যাপারে সাংবাদিকরা আকবর আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি গাছ কর্তনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি গাছের ডালপালা ছাটাই করছি। মদনপুর এলাকার গাছটি স্থানীয় লোকজন কর্তন করেছেন বলে তিনি জানান। এসময় আকবর আলীর কথার সাথে নিজের সম্মতি জানান সওজ’র সুপারভাইজার মুজিবুল হক।

এরপর সাংবাদিকরা সুপারভাইজার মুজিবুল হককে কর্তনকৃত গাছগুলোর সমানে নিয়ে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি (মুজিবুল) বলেন, উপড়ে পড়া একটি গাছ ও মরে যাওয়া একটি গাছ কর্তন করা হয়েছে। কর্তনকৃত গাছগুলো ও ডালপালা কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি (মুজিবুল) বলেন, এগুলো আকবর আলীকে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকায় কর্তনকৃত কিছু গাছগুলো গাড়িতে করে নিয়ে এসে প্রথমে আমতৈল গ্রামের ভিতরে রাস্তার পার্শ্বে রাখা হলেও সাংবাদিকরা সেখান থেকে চলে আসার পর সেই গাছগুলো পূর্বের রাখা স্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়ে।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)’র এসডিই আবদুল মজিদ বলেন, আমরা শুধু গাছের ডালপালা ছাটাই করার অনুমতি দিয়েছি, গাছ কাটার কোন অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি।

বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, সরকারি গাছ কর্তনের খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে তলিশদারকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়েছে। তশিলদারের সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরপরই গাছ কর্তনের সাথে জড়িতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যদি গাছ কর্তনের সাথে সওজ’র কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ মে ২০১৮/পিবিএ/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন