Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে অভিযান নেই কালো গ্লাসওয়ালা গাড়ির বিরুদ্ধে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-০৮ ০০:১১:২৬

মিসবাহ উদ্দীন আহমদ :: সারাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও চলছে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ। সিলেট মহানগর এলাকার প্রায় সবক’টি এলাকাতে চালানো হচ্ছে অভিযান। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এবারই প্রথম বার ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশের অতিরিক্ত রিজার্ভ ফোর্সের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের কাজে সহযোগিতা করছেন রোভার স্কাউট সদস্যরা।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) আওতাধীন ৬টি থানা পুলিশ ও রিজার্ভ পুলিশের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে বিশেষ এই ট্রাফিক সপ্তাহ। এর আওতায় আইন বহির্ভূতভাবে গাড়ি চালনার দায়ে প্রায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগরে প্রায় সাড়ে ৮শ’ গাড়িতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রায় ২ শতাধিক চালকের বিরুদ্ধে হয়েছে মামলা। আটক করা হয় অর্ধশতাধিক গাড়ি। পাশাপাশি গাড়ি ও চালকদের উপর জরিমানা হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।

যেসব অভিযোগে যানগুলোতে মামলা দায়ের, গাড়ি আটক ও জরিমানা করা হয়েছে এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অপরাধে অভিযুক্ত গাড়িগুলো ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। সেটির দিকে সংশ্লিষ্টরা উদাসীন। কালোগøাসওয়ালা যানবাহন চলাচলে আইনে অপরাধ থাকলেও সেটির ব্যাপারে ট্রাফিক সপ্তাহে কোন তৎপরতা বা মামলা দায়েরের ঘটনা এখনো ঘটেনি। সিলেট মহানগর পুলিশ সূত্রও এই অভিযোগে মামলা দায়ের না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তারা ট্রাফিক সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে কালো কাচওয়ালা যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানাগেছে।

মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তায় দিয়ে পথ চলতে চোখে পড়ে কালো কাচের গাড়ি। অথচ যানবাহনে কালোকাচ আইনত নিষিদ্ধ, দণ্ডনীয়। অপরাধ সংঘটনে নিরাপদ হওয়ায় কালো কাচওয়ালা গাড়ি বেশিই পছন্দ অপরাধীদের। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব গাড়ি দিয়ে বহন করা হচ্ছে ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ নানারকম মাদকদ্রব্য। অস্ত্রবহন কাজেও নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহৃত কালো কাচওয়ালা গাড়ি। আর এরকম গাড়ি দিয়ে ছিনতাই ঘটনারও অভিযোগ তো অনেক দিনের পুরনো। এরকম শত শত অভিযোগ আর আইনত নিষিদ্ধ হওয়ার পরও কালো কাচওয়ালা কার-মাইক্রোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়েনি চলমান ট্রাফিক সপ্তাহেও।

১৯৮৩ সালে প্রণীত আইনের ১৫১ ধারা মতে, গ্লাসসহ গাড়ির আঙ্গিক পরিবর্তন দণ্ডযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার সর্বোচ্চ দু’বছরের জেল হতে পারে। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা নগদ জরিমানার বিধান রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কিছু ক্ষেত্রে কেবল এটি শিথিল রয়েছে।

সিলেট নগরীর রাস্তায় কালো কাচ ব্যবহারে কোনো ভেদাভেদ চোখে পড়ছে না। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় গত কয়েক বছর ধরে সিলেট নগরী ও আশেপাশের এলাকাসমূহে কালো কাচওয়ালা কার-মাইক্রোর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এ সংক্রান্ত আইনটি কেবল ভিআইপিদের ক্ষেত্রে শিথিল থাকলেও অনেক রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তারাও গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার করছেন। বাড়তি ঝামেলা এড়াতে পুলিশ তাদের কিছুটা ছাড় দিয়ে থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। কালো কাচের আশ্রয়ে অপরাধীরা নিজেদের আড়াল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।

চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের দুই দিনে সিলেটে ৭১০টি গাড়ি এবং ১৮৫ চালকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। এই দুইদিনে ৪০টি গাড়ি আটক করা হয়। এসব মামলা থেকে জরিমানা আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৪ লক্ষ ৮২ হাজার ৬ শত টাকা। মঙ্গলবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত মহানগরীতে ১৩৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। এসময় ১৫টি গাড়ি আটক করা হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ৭টি এবং অন্যান্য ৮টি গাড়ি রয়েছে। রবিবার শুরুর দিন থেকে মঙ্গলবার বেলা ১ টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মামলা দায়েরের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮শ’। এরমধ্যে গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহারের অভিযোগে কোন মামলা নেই।‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করুন; ট্রাফিক শৃঙ্খলা একটি জাতির সভ্যতার প্রতীক’ স্লোগান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গত রবিবার থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও মিডিয়া মুখপাত্র মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব সিলেটভিউকে কালো কাচওয়ালা যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছেন। বিষয়ে বলেন- ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে অভিযান পরিচালনা করবো। বিগতদিনে এরকম যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।’

এদিকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কালো কাচওয়ালা মাইক্রোবাসের চালক জানান, তারা তো নিজেরা গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার করছেন না। এগুলো অরিজিনালি কালোকাচের তৈরি। এখন নতুন করে কাচ পরিবর্তনে আমাদের বড় অঙ্কের টাকা গুনতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তাদের অনুরোধ অপরাধী দমনের নামে পেশাদার চালকদের যেনো হয়রানী না করা হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ০৮ আগস্ট ২০১৮/ এমইউএ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.