Sylhet View 24 PRINT

কোম্পানীগঞ্জ ওসির অপসারণ চেয়ে আ.লীগ নেতা শামীমের স্মারকলিপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১২ ১৮:৩৪:৫৩

সিলেট :: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাইয়ের অপসারণ ও ‘সাজানো মামলা’ থেকে অব্যাহতি চেয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা হাজী শামীম আহমদ। বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, অতিরিক্ত আইজিপি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এনএসআই পরিচালক বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম।

স্মারকলিপিতে শামীম আহমদ উল্লেখ করেছেন, তার বাবা আব্দুল বাছির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বড় ভাই জয়নাল আবেদীন সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান। তিনি একজন চুনাপাথর আমদানি ও রফতানিকারক। সিলেট চেম্বার অব কমার্স ও চুনাপাথর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সদস্য তিনি (শামীম)।

স্মারকলিপিতে তিনি বলেছেন, ‘সিলেট শহরের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জ থানার বহুল বিতর্কিত ওসি আব্দুল হাইয়ের রোষানলে পড়ে একের পর এক সাজানো ও মিথ্যা মামলায় আক্রান্ত হচ্ছি। গত রবিবার রাতে ওসি আব্দুল হাই শারপিন টিলায় একটি অভিযানের এজাহারে কাল্পনিকভাবে আমাকে ও আমার পরিবারের ৫ সদস্যকে আসামি করেছেন। যে ঘটনা আমরা কখনোই জানি না আমাদের ন্যুনতম সম্পৃক্ততা নেই, সেখানে দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করায় আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেই যাচ্ছেন ওসি আব্দুল হাই। এর কারণে ওসির বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ।’

তিনি বলেন, ‘গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসিল্যান্ড মাসুদ রানার নেতৃত্বে কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরফিন টিলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় বোমা মেশিন জব্দ ও এলাকা থেকে হোসেন আহমদ নামের এক পাথর ব্যবসায়ীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। শাহ আরফিন টিলা এখন বিধ্বস্ত জনপদ। এখানে কিছু কিছু অসাধু পাথর ব্যবসায়ীরা বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছিল। টাস্কফোর্স ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে বোমা মেশিনের মালিক হোসেনকে (পুলিম অ্যাসল্ট মামলার আসামি) আটক করে নিয়ে আসে। এরপর রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই স্বপন মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন (মামলা নং-১১/৯/৯/১৮)। এ মামলায় আমাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আমার অসুস্থ বড় ভাই বিল্লাল আহমদ, তার ছেলে কেফায়েত উল্লাহ, মাইনুল্লাহ ও আমাদের ভগ্নিপতি মামুন চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ নেতা শামীম দাবি করেন, অভিযান পরিচালনার সময় বোমা মেশিনের মালিক ও পূর্বের পুলিশ অ্যাসল্ট মামলার আসামি হোসেন আহমদকে এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে মর্মে উপজেলা প্রশাসন থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কিন্তু ‘রহস্যজনকভাবে ওই অভিযানের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় হোসেনকে আসামি করা হয়নি।’ পুলিশ হোসেনকে অ্যাসল্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তিনি বলেন, ‘অভিযানের পুরো সত্য ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে কাল্পনিক গল্প তৈরি করে এজাহার তৈরি করে আমাদের আসামি করা হয়েছে। আপনি প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালালেই ওসি আব্দুল হাইয়ের আক্রোশমূলক মামলার সত্যতা পাবেন।’

শামীম আহমদ আরো উল্লেখ করেন, ‘মামলার এজাহারে বর্ণিত তারিখে আমি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নানা কাজে সিলেটের আদালতে উপস্থিত ছিলাম। আদালতের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করলে সত্যতা পাবেন। আমি বর্তমানে সিলেট নগরীর বাসিন্দা। আমি দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় যাই না। কিংবা এলাকায় আমার কোনো বোমা মেশিন নেই। বৈধ কিংবা অবৈধ কোনোভাবে পাথর উত্তোলনে আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ জড়িত নয়। আমার ভাই বিল্লাল আহমদ সহ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারাও সিলেট নগরীতে বসবাস করেন। ভাতিজা কেফায়েত উল্লাহ পরিবারের সদস্যরা সিলেটে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। কিন্তু অভিযান হলেই মামলায় আমাদেরকে আসামি করেন ওসি আব্দুল হাই।’

তিনি স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করেছেন, ‘ওসি আব্দুল হাই দুর্নীতিবাজ। তিনি এর আগে গোয়াইনঘাট থানায় লাগামহীন দুর্নীতি করেছেন। দুর্নীতির কারণে সিলেটের কোনো থানায় টিকতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সিলেট রেঞ্জ থেকে তাকে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তিনি আবার সিলেট রেঞ্জে যোগদান করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির দায়িত্ব পান। তার কাছে কোম্পানীগঞ্জের মানুষ নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার। তিনি বোমা মেশিন মালিকদের সাথে আঁতাত করে গোটা কোম্পানীগঞ্জে পাথর লুটপাট শুরু করেন। তার অবাধ পাথর লুটপাটের ফলে ইতিমধ্যে শাহ আরফিন টিলা, কালাইরাগ, লিলাইবাজার, ধলাই সেতুর নিচ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।’

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এর আগে গত ১৬ আগস্ট বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দিয়েছিলেন শামীম আহমদ। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘ওই অভিযোগের পর ১৯ আগস্ট ওসি আক্রোশমূলকভাবে আমি সহ আমার পরিবারের সদস্যদের আসামি করে একটি মামলা করেন। টাস্কফোর্সের অভিযানের পর মূল আসামিদের নাম টাকার বিনিময়ে এজাহার থেকে বাদ দিয়ে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আমি সহ অন্যদেরও তিনি মামলায় আসামি করেন।’

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির দ্রুত অপসারণ দাবি করেছেন শামীম আহমদ। একইসাথে ওসি ঘুষ, দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি। মামলা থেকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের অব্যাহতি কামনা করেন শামীম।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.