আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিষ খাইয়ে ফ্রিজ-টিভি-অটো দিচ্ছে আবুল খায়ের!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০২-২০ ০০:১২:২৪

এনামুল কবীর :: ধুমপানে বিষ পান-সচেতনতামূলক গালভরা শ্লোগান আজকাল সবার মুখে মুখে। গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই বিষের খপ্পর থেকে মানুষকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে।

তবে সিগারেট কোম্পনিগুলো এসব পাত্তা দিতে মোটেও রাজি নয়। সাধারণ মানুষকে নানা প্রলভোনের ফাঁদে ফেলে তাদের মুখে বিষ তুলে দিচ্ছে তারা।

আর এক্ষেত্রে আবুল খায়ের টোবাকো সবাইকে ছাড়িয়ে। তারা তাদের গ্রাহককে বিষের বিনিময়ে তুলে দিচ্ছে ফ্রিজ টিভিসহ আরও নানান লোভনীয় উপহার। এসব নিয়ে প্রচুর লেখালেখী হলেও কোন লাভতো হচ্ছেই না, উল্টো কোম্পানিটির প্রভাব প্রতিপত্তি কেবল বাড়ছেতো বাড়ছেই।

সারাবিশ্বে এখন ধুমপানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। এর ক্ষতিকর বিভিন্ন দিকে আলাপ আলোচনা সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও নানা বেসরকারি সংস্থা। বাংলাদেশে চলছে এমন প্রচারণা।

সরকার প্রতিবছর সিগারেটের উপর ট্যাক্স বাড়াচ্ছেন। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর দাম। কিন্তু তবু ধুমপায়ীর সংখ্যা কমছেনা। উল্টো বাড়ছেতো বাড়ছেই। এই বৃদ্ধির নেপথ্যে আছে সিগারেট কোম্পানিগুলোর প্রচার প্রচারণা।

সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সিগারেটের বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর তাই আবুল খায়ের টোবাকো কোম্পানি লিমিটেড ভিন্ন কৌশলে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

তারা তাদের ব্র্যান্ড প্রমোশন কর্মিদের পাঠাচ্ছে মানুষের ঘরে ঘরে। ধুমপায়ীদের কাছে গিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ডগুলোর বিভিন্ন গুণগান যেমন গাইছে, তেমনি বেশি বেশি সিগারেট খেয়ে তার মোড়ক জমা দিলে ফ্রিজ টেলিভিশনসহ আরও নানা ধরণের মূল্যবান উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বিতরণ করছে এ সংক্রান্ত পোষ্টার বা লিফলেট।

এমনকি, বিভন্ন সিগারেট বিক্রেতার দোকানে বা বাক্সে এসব পোষ্টার বা লিফলেট লাগিয়ে দিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সিগারেট কিনতে। তাদের প্রত্যাশা, কেউ জিতবেন ফ্রিজ কেউ জিতবেন সিগারেট কেউবা এলইডি টিভি, হটপট, ছাতা ইত্যাদি।

সম্প্রতি এমন একটি ছোট রঙিন প্রচারপত্র এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। সেটিতে এই কোম্পানির দেওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।

কোম্পানিটি তাদের উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত সিগারেটের মোড়ক জমা দিলেই যেমন ফ্রি সিগারেট দিচ্ছে, তেমনি দিচ্ছে আকর্ষণীয় নানা পুরস্কার। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে কাঁচের গ্লাস, প্লেইট, গামলা, বালতি, হটপট, প্রেসার কুকার, রুটির তাওয়া, ছাতা, রাইস কুকার, পানির ফিল্টার, এলইডি টেলিভিশন, মোটরসাইকেল, অটোবাইক বা ইজিবাইক ইত্যাদি।

৪৩ হাজার ৫শ’টি মোড়ক জমা দিলে মিলবে অটো বা ইজিবাইক, মানে এই পুরষ্কারটি জিততে হলে আপনাকে পান করতে হবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার শলাকা সিগারেট (প্রতি মোড়কে ১০টির হিসাবে)।

আর মোটরসাইকেলের জন্য আপনাকে মোড়ক জমা দিতে ৩০ হাজার ৫শ’টি। মানে পান করতে হবে ৩ লাখ ৫ হাজার শলাকা সিগারেট। রেফ্রিজারেটরের জন্য ১৪ হাজার মোড়ক জমা দিতে হবে, খেতে হবে ১ লাখ ৪০ হাজার সিগারেট।

এইভাবে সর্বনিম্ন ১০টি মোড়ক থেকে শুরু হয়েছে তাদের অফার। তারা দোকানে দোকানে গিয়ে বা কাস্টমারের কাছে গিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলে ধুমপানে উৎসাহ দিচ্ছে।
তাদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে মানুষ ধুমপানের নামে বিষ পান করছে। আর মোড়ক জমা দিয়ে নিচ্ছে নানা পুরষ্কার।

কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় এমন প্রচারণা চালালেও তাদের বিরত রাখার কোন উদ্যোগই চোখে পড়ছেনা সচেতন মানুষের।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন