আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

নেই বাণিজ্যিক চাষ, তবুও মৌ মৌ ঘ্রাণে সুবাসিত প্রতি আঙ্গিনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০২-২০ ১০:৪৩:৪৯

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। তবে ছয় ঋতুর মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর হচ্ছে বসন্ত। বসন্তে গাছে গাছে ফুল আর কচি পাতায় চেয়ে যায় চারপাশ। বসন্তের ছোঁয় পেলেই প্রকৃতি সাজে তার আপন মহিমায়। শীতের শুষ্কতায় বিবর্ণ প্রকৃতি ফিরে পায় প্রাণ, দক্ষিনা হাওয়া মাতিয়ে তুলে চারিদিক। কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্র মল্লিকা, গাঁদা, মালতি, মাধবী, বকুল, পলাশ, শিমুলসহ নানান ফুলে সুবাসিত হয়ে উঠে বসুন্ধরা। তাইতো প্রকৃতির সব চেয় সুকখর ঋতু বলা হয় বসন্তকে। সেই সাথে বসন্তকে ভূষিত করা হয়েছে ‘রাজা’ (ঋতুরাজ) উপাধিতে।

শিক্ষিত বা শহুরে জীবনে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে হয়তো বসন্তের আগমন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গ্রামীণ জীবনে বসন্তরের আগমন দেখতে ক্যালেন্ডারের প্রয়োজন পরে না। প্রকৃতির অবলীলায় গ্রামীণ মানুষজন উপলব্ধি করনের ঋতুরাজ বসন্তকে। কারণ বসন্ত এলেই আ¤্র মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে সুভাষিত হয়ে উঠে গ্রামের প্রতিটি আঙ্গিনা। ডালে ডালে নতুন রূপে দেখা মেলে আমের মুকুল।

হবিগঞ্জে একসময় আমের বাণিজ্যিক চাষ হলেও এখন আর আগের মতো আম বাগান নেই। জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল ও বানিয়াচঙ্গে কয়েকটি আম বাগান থাকলেও সেগুলো থেকে উৎপাদিত আম জেলার বাহিরে রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। বরং এ জেলায় আমের চাহিদা মেটাতে হয় বাহির থেকে আমদানি করেই।

তবে বাণিজ্যিক চাষ না হলেও প্রত্যেকটি গ্রামের কম বেশি আঙ্গিনায় দু’একটা করে দেশি-বিদেশী আম গাছ লক্ষ করা যায়। আর এসব গ্রামে গাছে গাছে এসেছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের ঘ্রাণ। বাতাসে মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তার। এতে সবুজ পাতার মাঝে হলদে ফুলে আমের ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন সখের চাষিরা।

হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলার মধ্যে বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ এবং বাহুবল উপজেলার গ্রামগুলোতে আম গাছ সব চেয়ে বেশি। এসব গ্রামে দেশীয় ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, গোপালভোগ, ফজলি, আশ্বিনা, বোম্বাই, অগ্নি, অমৃত ভোগ, কৃষ্ণচূড়া, কালিভোগ, কাজল ফজলি, চম্পা, বাওয়ানী, দুধসর, বাদশা ভোগ, রানি ভোগ, রাজ ভোগ, কালিভোগ, জিবাভোগের সাথে রয়েছে বিদেশী আলী চৌরস, আ¤্রপালী, মল্লিকা, চৌসা, তোতাপুরী, বোম্বাই গ্রিন ইত্যাদি আম গাছ।

স্থানীয়রা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর আমের মুকুল বেশি এসেছে। ফলন ঠিক থাকলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করা যাবে। যা থেকে অতিরিক্ত আয়ের উৎস খুজছেন অনেকে। আবার এভাবে প্রতি বছর আমের ফলন আসলে এবং সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলার সৌয়দপুর গ্রামের আওয়াল মিয়া বলেন- ‘এক সময় আমাদের গ্রামে কয়েকটি আম বাগান ছিল। কিন্তু এখন আর আম বাগান নেই। তবে আমাদের গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দু’একটা আম গাছ রয়েছে। যে গাছগুলোতে প্রচুর মুকুল এসেছে।’
তিনি বলেন- ‘যে পরিমাণ মুকুল এসেছে, সে পরিমাণ আম আসলে এ বছর আম খাওয়ার পাশাপাশি বাজারে বিক্রিও করতে পারব।’

অন্য এক ব্যাক্তি আব্দুল মতিন বলেন- ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমের মুকুল বেশি এসেছে। কিন্তু সময়ের ব্যধানে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই কোন বছরই কাঙ্কিত আম পাওয়া যায় না। যদি এ বছর মুকুল নষ্ট না হয় তাহলে কাঙ্কিত ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

নবীগঞ্জ উপজেলার কড়িয়া গ্রামের বাসিন্ধা সনজিৎ সরকার বলেন- ‘সারা বছর আম গাছগুলো অযথনে অবহেলায় পড়ে থাকে। পরিচর্যা না নেয়ার কারণে ডালগুলো শুকিয়ে যায়। তবে ফালগুন মাস এলেই আম গাছগুলো নিজে থেকে সতেজ হয়ে উঠে এবং মুকুল আসে। তখন আমাদের খুব ভালো লাগে।’

এ ব্যাপরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি মোহাম্মদ আলী বলেন- ‘বসন্ত এলেই আম গাছগুলোতে যৌবন ফিরে আসে। হবিগঞ্জে বাণিজ্যিক চাষ না হলেই প্রতিটি গ্রামেই আমের মৌ মৌ ঘ্রাণ অনুভূত হয়। এবার আমের প্রত্যাশিত মুকুলের প্রধান কারণ আবহাওয়া অনুকুলে থাকা। এখন একটি বৃষ্টি হলে মুকুলের আরও উপকার হবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিচর্যার অভাবে অনেক সময় মুকুলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। বিশেষ করে যখন মুকুল আসে তখন গাছের দিকে একটু বেশি নজর দিতে হবে। তাহলেই মুকুল নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।’ এর জন্য জেলা কৃষি অফিস সব সময় তাদের পাশে আছে বলেও জানান তিনি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/কাস/ইআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন