আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটে ভাড়া বাসায় আয়কর অফিস’র কার্যক্রম, গ্রাহক ভোগান্তি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০২-২০ ১১:০৪:৩৯

মারুফ খান মুন্না :: সিলেট কর অঞ্চলের সদর দফতরসহ অধীনস্থ আরেকটি কার্যালয়ের কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা বাসায়। আয়কর বিভাগের অধীনে পরিচালিত হাউজিং এস্টেটের আয়কর সিলেট কর অঞ্চলের হেড অফিস ও নগরীর নয়াসড়কের অফিস বাবত প্রতিমাসেই ভাড়া গুণতে হয় ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মতো। বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো। ২০০১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরুর দেড় যুগেও নিজস্ব ভবন বা অফিস নির্মাণ করতে না পারায় একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় টাকা ব্যয় হচ্ছে সেই সাথে নিরাপত্তাসহ নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের, বাড়ছে জনভোগান্তি।

সিলেটে প্রায় ৫০ হাজার আয়কর প্রদানকারীর মধ্যে ২৬ হাজার নিয়মিত আয়কর প্রদান করেন। বাকী ২৪ হাজার অনিয়মিতভাবে আয়কর প্রদান করে আসছেন। সিলেট আয়কর অফিস সুত্রে জানা গেছে তারা এই সংখ্যাটি নিয়ে যেতে চান অন্তত এক লক্ষের কোঠায়। তবে বর্তমান গ্রাহকরাই বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহক বাড়লে ভোগান্তি চরমে পৌছাবে- এমনটিই ধারণা করছেন নিয়মিত আয়কর প্রদানকারী অনেকেই।

তবে গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে আশার বাণী শোনাচ্ছেন সিলেট কর অঞ্চলের দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তাবৃন্দ।  সিলেট কর অঞ্চলের কর কমিশনার আবু হান্নান দেলওয়ার হোসেন জানান, গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে উপজেলা পর্যায়ে আয়কর অফিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সিলেট অঞ্চলের কয়েকটি উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করেছি। বেশ কয়েকটি উপজেলায় এ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

তাছাড়া খুব শীঘ্রই আয়কর অফিস নতুন ভবন পাচ্ছে এমন আশার বাণীও শোনাচ্ছেন তারা। সিলেটে গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে আয়কর অফিসের নিজস্ব ভবন করা প্রসঙ্গে সিলেট কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার (সদর দপ্তর ও প্রশাসন) কাজল সিংহ  জানান, সিলেটে আয়কর বিভাগের নিজস্ব ভবনের জন্য নগরীর নর্থ ইস্ট মেডিকেলের পার্শ্বে ২.৩০ একর জমি ইতিমধ্যে প্রশাসনিক অনুমোদন নেওয়া হয়ে গেছে। সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।

সিলেট কর অঞ্চলের এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা হলেও অন্তত ৬০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত করতে চান সিলেট কর কর্মাকর্তাবৃন্দ।  সিলেট কর অঞ্চলে ২০১৭-১৮ সালে শুধু আয়কর বাবত ৭২৫ কোটি টাকা লক্ষমাত্রার মধ্যে অর্জিত হয়েছিলো ৫১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর ২০১৮-১৯ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ৮৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার মধ্যে ডিসেম্বর’১৮ পর্যন্ত ছয় মাসে অর্জিত হয়েছে ১৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।প্রতি বছরে সরকারের কোষাগারে এতো কোটি কোটি টাকা জমা হলেও নিজস্ব অফিস না থাকায় সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের।

আয়কর, কাস্টমস, এক্সইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সদর দফতর সিলেটসহ এর অধীনস্থ প্রায় সব অফিসের কার্যক্রম ভাড়ায় চলে। তার উপর একেকটা অফিস একেক জায়গায় হওয়ায় কর দাখিল, রিটার্ন দাখিল, নতুন ই-টিআইএন গ্রহণ, ই-টিআইএন রি-রেজিস্ট্রেশনসহ কাজের জন্য এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় গ্রাহকদের। আয়করের সিলেট শহরে দুটি অফিসের একটিতে কোম্পানী আর আরেকটি ব্যাক্তি ট্যাক্স আদায় হওয়ায় একই ব্যাক্তিকে তার কোম্পানির এবং ব্যাক্তি ট্যাক্স প্রদানে একবার এ অফিসে তো আরেকবার যেতে হয় অন্য অফিসে। তাছাড়া দুই এক বছর পর বদলে যায় গ্রাহকদের সার্কেল। তাতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের।

সিলেট আয়কর অফিস সুত্রে জানা গেছে,  ২০০১ সালের ৪ নভেম্বর থেকে চট্রগ্রাম কর অঞ্চলের অধীন থেকে মুক্ত হয়ে সিলেট নগরীর নবাব রোডের একটি ভাড়া বাসায় যাত্রা শুরু হয়েছিলো আয়কর অফিস সিলেট সদর দফতরের। অফিস বদলে বর্তমান ঠিকানা হয়েছে নগরীর হাউজিং এস্টেটে।

সিলেট অঞ্চলে করদাতাদের ভোগান্তি কমাতে ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানালেন সিলেট কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার (সদর দপ্তর ও প্রশাসন) কাজল সিংহ। আগামীতে গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে সিলেটেই দুটি কর অঞ্চল করা হতে পারে-এমনটিই জানালেন তিনি।  তাছাড়া গ্রাহকদের বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তবে নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য স্মার্ট কার্ড প্রদান পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে রয়েছেও বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে আয়কর অফিস ছাড়াও সিলেটে অন্তত ৩০ এর অধিক সরকারী অফিসের কার্যক্রম চলছে ভাড়া বাসায়। সিলেট নগরীতেই সরকারী বিভিন্ন জায়গা থাক সত্ত্বেও ভাড়া বাসায় কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় প্রতি মাসে মাসে, বছরে বছরে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে সরকারকে। তাছাড়া ভাড়া বাসায় গ্রাহকদের নিরাপত্তাসহ নানা ভোগান্তিতে গ্রাহকরা চান- একই জায়গায় পাশাপাশি সরকারী সকল অফিসের কার্যক্রম।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/এমকে-এম

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন