আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এত অতিথি আগে দেখেনি সিলেট!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০২-২২ ০০:১২:০০

এনামুল কবীর :: এ যেন রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত কবিতার মতো ‘ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই ছোট এ তরণী’র মতো অবস্থা। কোথাও জায়গা নেই! না বন্দরবাজার-জিন্দবাজারের মধ্যমানের হোটেলগুলোতে, না দরগাগেইট এলাকার। সবগুলোতে ঝুলানো ‘সিট খালি নেই’। তো কি আর করার থাকে? বড়বড় ভবনের বারান্দায় হেলান দিয়ে মুখ ভার করে বসে থাকা ছাড়া আর উপায়ইবা কি? হোটেল মালিক বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও অবাক! অনেকেই বলছেন, এত অতিথি আগে দেখেনি সিলেট!

বৃহস্পতিবারের সিলেট নগরীর চিত্রটা ছিল এমনই। একেতো মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি, তার সাথে শুক্র ও শনিবারের নিয়মিত সরকারি ছুটি মিলিয়ে যারা ৩ দিনের সিলেট সফরে এসেছিলেন বসন্তটাকে আরও রাঙিয়ে নিতে, তাদের অভিজ্ঞতাটা মোটেও সুখকর যে নয়, তা বলাই বাহুল্য।

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সিলেটের আকর্ষণ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন ওলিকুল শিরোমনি হযরত শাহ জালাল (র.) ও তাঁর সুযোগ্য ভাগ্নে হযরত শাহপরাণ (র.)। তাঁদের সাথে আছেন এ অঞ্চলের আদি মুসলিম হযরত গাজী বুরহান উদ্দিন (র.)।

জাফলং-রাতারগুল-লালাখাল-পাংথুমাই-লোভাছড়া-শাপলা বিল-ভোলাগঞ্জসহ সিলেটের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো যেমন সারাদেশের পর্যটকদের সিলেটমুখী করছে, তেমনি আধ্যাত্মিকতাবাদে বিশ্বাসী ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছেও এই মহানগরী অতিগুরুত্বপূর্ণ।

আর শুক্রবার সামনে রেখে বৃহস্পতিবার শাহজালাল (র.) এর দরগাহ প্রাঙ্গনে যেসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি হয় তাও মুসল্লীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাই এই দিনটিতে এমনিতেই সিলেটে পর্যটকরা আসেন অন্যান্য দিন থেকে বেশি।

২১ ফেব্রুয়ারিকে (বৃহস্পতিবার) সামনে রেখে তাই ঘটেছে। ৩ দিনের ছুটি উপভোগে সিলেটমুখী মানুষের ঢল নেমেছিল। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই মাজার এলাকা ও রাত ৯টার পর থেকে সিলেট মহানগরীর প্রায় সব আবাসিক হোটেলের রিসিপশনে ‘সিট খালি নেই’ ঝুলতে থাকে।

অনেকেই সিট জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে চেনা-জানাদের ফোনে সমস্যাটি অবগত করতে থাকেন। এতে সমাধানও জোটেছে কারও কারও ভাগ্যে। কারও বাসায় আড্ডা দিয়ে রাত কাটিয়েছেন। কেউবা ভ্রমনক্লান্তি দুর করতে মেঝে বা বারান্দায় অন্তত ঘুমাতে পেরেছেন।

তবে সিলেট নগরীতে যাদের চেনা-জানা কেউ নেই, তারা সমস্যায় পড়েছেন বেশি। গোটা পরিবার নিয়ে তাদের হোটেল বা কোন ভবনের সিঁড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

তেমনি একটি পরিবারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। চট্টগ্রামের খুলশী থানার শহীদুল ইসলাম (৪০) তার মা বোনসহ ৭ জন সদস্য নিয়ে এসেছিলেন সিলেটে। উদ্দেশ্য ছিল মাজার জিয়ারত ও আশপাশের চা-বাগানগুলো ঘুরে বেড়ানো। ভোর ৫টার দিকে সিলেট পৌঁছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে গোটা নগরী তন্ন তন্ন করেও কোন হোটেলে সিট পাননি।

বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দরগাগেইট এলাকার একটি বহুতল ভবনের বারান্দায় মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখা যায়।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে শহীদুল বলেন, এমনটি হবে জানলে আসতাম না। তবে চেষ্টা চলছে। দেখি কোথাও সিট পাওয়া যায় কি-না।

কথা হয় বেশ কয়েকজন হোটেল মালিক বা ব্যবস্থাপকের সাথে। তারাও অবাক! ভীড় হবেই তেমন একটা অনুমান তারা আগে থেকেই করেছিলেন, তবে তা এমন পর্যায়ের হতে পারে তা কিন্তু কেউ কল্পনাই করেন নি।

যেমনটা বলছিলেন দরগাগেইট এলাকার হোটেল অর্কিড গার্ডেনের চেয়ারম্যান এম এইচ ইলিয়াসি দিনার। বললেন, তিন দিনের ছুটি সামনে রেখে সিলেটে যে পর্যটকদের ঢল নামবে তা আন্দাজ করেছিলাম আগেই। তবে বাস্তবে যা হয়েছে, তা অকল্পনীয়। আগে কখনোই এমন অভিজ্ঞতা আমাদের হয়নি।

কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সিলেটে যেভাবে পর্যটক আসছেন তাতে আরও মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জোরালো হচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হবেন বলেও মনে করছেন তিনি।

প্রায় একই মতামত জানালেন হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার দরগাহ রোডের আলমাস হোটেল, হোটেল আল-আরব, হোটেল উর্মি, হোটেল অনুপম, আল জালাল, আকসা, ময়রুন নেছা, আল আমিন, হোটেল জিয়া, হোটেল কোরেইশী, হোটেল ইয়ামেনের মালিক বা ম্যানেজাররা।

আর দরগা প্রাঙ্গণেও ফাঁকা কোন জায়গাই ছিলনা বলেও জানালেন ব্রাম্মনবাড়িয়া থেকে আসা মুসল্লী আমিনুল ইসলাম (৪৪)।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন