Sylhet View 24 PRINT

সিলেটের তালতলায় ‘শয়তানের বাবা’ ও `হনুমাণ’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-১৫ ০০:৩০:১৬

এনামুল কবীর :: মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা। সিলেট মহানগরীর ভিআইপি রোডের তালতলাস্থ পরিত্যাক্ত দিলশাদ সিনেমা হলের সামনের ফুটপাত। বিদ্যুতের খুঁটির নিচে একটি কম্বল মুড়ি দিয়ে ৪টি শিশু-কিশোর শোয়া। ঘুমানোর কোন চেষ্টা নেই। চলছে বক্ বক। পাশেই ৮/৯ বছরের আরেকটি শিশুকে কচ্ছপের মতো করে শাস্তি দিচ্ছেন ১৪/১৫ বছরের আরেকজন। মাঝেমাঝে শিশুটির পশ্চাদদেশে মারছেন জুতা দিয়ে।

আলাপ জমানোর পর জানা গেলো, শাস্তি দাতা ওর ভাই। দোষ করেছে, তাই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কি দোষ? ড্যান্ডি খেয়েছে। দেখা গেলো শাস্তিদাতা নিজেই ড্যান্ডি টানতে টানতে বড় ভাইয়ের কর্তব্য পালন করছেন।

জানালেন, তার নাম সোহাগ। বাড়ি সুনামগঞ্জের ওদিকে। তবে সিলেট মহানগরীর আম্বরখানা এলাকার কোনএক বস্তিতে থাকছেন তাদের পিতামাতা। আর তারা এভাবে ড্যান্ডি টানতে টানতে ‘যেখানে রাত সেখানে কাত’ হয়ে দিন গুজরান করছেন।

নিজেদের কাজের ব্যাপারে জানালেন, কখনো কিনব্রিজে রিকশা ঠেলানো (ওদের ভাষায় ‘পুল ঠেলানো'), রেলওয়ে স্টেশনে মালামাল উঠানো-নামানোসহ যখন যা পাওয়া যায়, তাই করছেন তারা।

ড্যান্ডি টানলে কি হয়, জানতে চাইলে একজন জানালো- আকাশো ঘুরাই। খাইতায়নি?

বলেই একটা ছোট চিপসের প্যাকেটের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে শ্বাস টানতে শুরু করল। ততক্ষনে ঘুমানোর কসরৎরতরাও হইচই করে উঠে এলেন। মোটামুটি একটা গোলমেলে অবস্থা।

নাম জিজ্ঞেস করতেই তার চঞ্চল মুখে বিদ্রুপের হাসি- আমি উলুমান (হনুমাণ)। সাথে সাথে সমবেত হাসির জোয়ারে ভেসে যাওয়ার জোগাড়।

পুলিশ ধরেনা? এবার যেন অট্টহাসিতে কালোপিচ আর আশপাশের ভবনগুলোর দেয়াল ফাটানোর উপক্রম। তারপর জবাব, ধরেতো, ধরিয়া ১শ’ টাকা চায়। আমি কই, আমারে পারলে দেরে বাবা, মজায় চাইট্টা ভাত খাই।

তারপর কোর্টে চালান দেয় এবং মাজিষ্ট্যাট মুক্ত করে দেন।

ওদের মধ্যে আরেকজন নিজের পরিচয় দিলো ‘শয়তানোর বাবা’ বলে। ড্যান্ডি কি দিয়ে হয়, জানতে চাইলে প্রতিবেদকের জুতোর তলায় টান দিয়ে বলল-অনো যে গাম লাগায় ঔ অতা দিয়া।

এসব খেলে যে ক্যান্সার হয় তা জানো? আবার হাসতে হাসতে তার জবাব, অয় অয়, ক্যান্সার অয়, বলতে বলতে আবারও সমবেত হাসির জোয়ার।

সিলেট শহরে সুলভ নেশা এখন ‘ড্যান্ডি’। বিশেষ করে পথশিশুদের একটি বড় অংশ ড্যান্ডিতে আশক্ত হয়ে পড়েছে। নিয়মিত তারা এই মরণ নেশা সেবন করছে আর নানা প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্তও হচ্ছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ধরণের অপরাধের সাথেও জড়িত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে চুরি-ছিনতাই ইত্যাদিতে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অবগত পুলিশ প্রশাসন।

এ ব্যাপারে আলাপকালে সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা পুরো সচেতন। অনেক কিশোর অপরাধের সাথে তারা জড়িয়ে পড়ছে।

তাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে তিনি বলেন, সেটা সরকারের অন্যান্য দফতরের কাজ। বিশেষ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন তাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্চোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাবো।

সিলেটে ড্যান্ডি সেবকদের আরেক নাম ‘টানা’ পার্টি। আগামীতে এই ‘হনুমাণ’ আর ‘শয়তানের বাবা’রা যে সিলেটবাসীর অশান্তির জন্য বড়ধরণের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, পরোক্ষভাবে তাও স্বীকার করলেন এসএমপির এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৫ মার্চ ২০১৯/এক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.