আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

কমলগঞ্জে কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক ভবন, বিপর্যস্ত হচ্ছে কৃষি জমি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-১৯ ১৭:১০:৫৪

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় চা বাগান, বনাঞ্চল ও টিলাঘেরা সবুজের সমারোহে সাজানো এক জনপদের প্রকৃতি এখন বদলে যাচ্ছে। যা পূর্বে যে জমিতে আউস, আমন, সাইলসহ রবি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের চাষাবাদ হত সে জমিতে আজ গড়ে উঠতেছে বাসাবাড়ি, আবাসিক, বাণিজ্যিক বহুতল ভবন।

রাস্তার পাশে কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বসতঘরসহ দালানকোঠা গড়ে উঠছে। এসব জমি ভরাট হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিসহ পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

জানা যায়, দেশে এক শতাংশ হারে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন তথা লাগামহীনভাবে কৃষিজমি ধ্বংসের যে প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে তা অধিকতর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারে আবাদি কৃষিজমির মধ্যে দু’ফসলি এমনকি তিন ফসলি জমিও রয়েছে। জেলার কৃষি ভান্ডার হিসাবে খ্যাত কমলগঞ্জে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো। দু’ফসলি, তিন ফসলি ধান, রবি শস্য উৎপাদনে কৃষকদের প্রানান্তকর চেষ্টা দেখা যেতো। তবে কৃষিজমি রূপান্তরিত হওয়ায় খাদ্যশস্যের ওই জায়গায় এখন স্থান করে নিচ্ছে ইটের ঘর দালানকোঠা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশ বাসা-বাড়ি, দালান, অট্রালিকা নির্মাণে। এদের পঁচাত্তর ভাগই রাস্তার ধারের আবাদি কৃষিজমি।

এ উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ৩৫২ হেক্টর। এর মধ্যে ফসলি জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ৭২৮ হেক্টর। এক ফসলি জমির পরিমাণ ৫ হাজার ১৬১ হেক্টর, দুই ফসলি জমির পরিমাণ ৯ হাজার ৫০১ হেক্টর, তিন ফসলি জমির পরিমাণ ২,৮৫৫ হেক্টর, আবাদ যোগ্য পতিত জমি ২৬ হেক্টর। প্রতি বছর দশমিক ২৫ শতাংশ বা ৪৫ হেক্টর পরিমাণ কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। বছরে ৪৫ হেক্টর কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।

সমাজ কর্মী তোয়াবুর রহমান, কৃষক নেতা কবি শহীদ সাগ্নিক জানান, চার-পাঁচ বছর আগেও কৃষিজমির পরিমাণ যা ছিল আবাসিক চাহিদা, শিক্ষা প্রতিষ্টান বা নদী ভাঙ্গনে মারাত্মক হারে কমেছে কৃষিজমির পরিমাণ। বন্যা, খরা, ঝড়, নদীভাঙ্গন, বাঁধ ভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে একদিকে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।

তাদের মতে, কোন পরিকল্পনা ছাড়াই কৃষিজমিতে গৃহ নির্মাণে নীতিমালার অভাবে অট্রালিকা গড়ে তুলছেন। ফলে খাদ্য ঘাটতিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ে দেখা দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, বিভিন্ন চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাসাবাড়ি নির্মাণ করার কথা। মানুষের সচেতনতার অভাব ও নীতিমালা কার্যকর না থাকায় কিছু সংখ্যক মানুষ প্রয়োজনে আবাদি কৃষিজমি ভরাট করে দালানকৌঠা গড়ে তুলছে। তবে এসব বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতা কার্যক্রম চলছে।



সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ মার্চ ২০১৯/জেএ/এসডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন