আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে ‘হিরো’ থেকে ‘জিরো’ বিএনপি, ‘ভিলেন’ যারা...

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২০ ১২:৪৩:০৮

মারুফ খান মুন্না :: সিলেটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্রের ব্যানারে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির এক ডজন নেতাকর্মী । দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাদেরকে দলীয় ‘ভিলেন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদেরকে দলীয় সকল কার্যক্রম থেকে করা হয় বহিস্কার। তবে তারা চেয়েছিলেন জনতার রায় নিয়ে দলের কাছে ফিরবেন ‘মহানায়ক’ হিসেবে। তবে সে আশা গুড়েবালি, উল্টো বিগত (৪র্থ) উপজেলা নির্বাচনের জোটগত দল হিসেবে ‘হিরো’ বিএনপিকে নামিয়ে আনা হয়েছে ‘জিরো’র কোঠায়। নির্বাচন অনুষ্টিত হওয়ার দুদিন পার হয়ে গেলেও সিলেট জেলাজুড়ে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।   

বিগত উপজেলা নির্বাচনে জোটগত দল হিসেবে বিএনপি শুধু সিলেট জেলা নয়, সফল ছিলো পুরো সিলেট বিভাগজুড়ে। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদের সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সিলেটে পাত্তাই পাননি বিএনপি জোটের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কাছে। সিলেটের ১৩ উপজেলায় (ওসমানীনগর উপজেলাসহ) ছিলো বিএনপি জোটের জয়জয়কার। ১৩ উপজেলায় আওয়ামী লীগ জিতেছিলো মাত্র ৪টি উপজেলায়। আর বাকি ৯টি উপজেলায় বিএনপি জোট প্রার্থীদের দাপুটে জয়ে ‘হিরো’য় পরিণত হয়েছিলো বিএনপি। তবে, এবারে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির বিভিন্ন প্রার্থী নানা চরাই উৎরাই পার হয়ে কৌশলে প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত সবাইকে পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে সিলেটের ১২টি উপজেলার মধ্যে ৭টিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন বিএনপির ১২ নেতা। তারা হলেন- সিলেট সদর উপজেলায় মাজহারুল ইসলাম ডালিম (দল থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী), দক্ষিণ সুরমায় জিল্লুর রহমান সোয়েব, বিশ্বনাথে সুহেল আহমদ চৌধুরী ও মিসবাহ উদ্দিন আহমদ, গোলাপগঞ্জে মাওলানা রশীদ আহমদ, গোয়াইনঘাটে লুৎফুল হক খোকন ও শাহ আলম স্বপন, ফেঞ্চুগঞ্জে ওয়াহিদুজ্জামান সুফী, মনির আলী নানু মিয়া ও হারুন আহমদ চৌধুরী, বালাগঞ্জে আবদাল মিয়া ও গোলাম রব্বানী। বিএনপির জিরো হওয়ার পিছনে এই নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণোকে দায়ী করছেন বিএনপির সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবী দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তারা যদি নির্বাচন থেকে সরে দাড়াতেন তবে বিএনপি ‘শুন্য’ একথা শুনতে হতো না। বরং ফাকা মাঠে গোল করে আওয়ামী লীগের উল্লাস হাস্যকর হতো এমনটিই মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।

দেশের ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১ম (১০ মার্চ)ও ২য় ধাপে (১৮ই মার্চ) সিলেট বিভাগের সব জেলার উপজেলাগুলোতে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় ‘বিএনপি’ ঘরনার একাধিক প্রার্থী বিজয়ী হলেও ২য় ধাপে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার কোন উপজেলাতেই জয়ের স্বাদ পায়নি বিএনপি। এ যেনো ‘হিরো’ থেকে ‘জিরো’ বিএনপি।

দেশের ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে সিলেট জেলার সদর উপজেলায় আশফাক আহমদ (আ.লীগ), বালাগঞ্জে আবদাল মিয়া (বিএনপি), বিয়ানীবাজারে আতাউর রহমান খান (আওয়ামী লীগ), বিশ্বনাথে সুহেল আহমদ চৌধুরী (বিএনপি), কানাইঘাটে আশিক আহমদ চৌধুরী (বিএনপি), কোম্পানীগঞ্জে আব্দুল বাছির (আওয়ামী লীগ), ফেঞ্চুগঞ্জে সাইফুল্লাহ আল হোসেইন (বিএনপি জোট), গোলাপগঞ্জে নজমূল ইসলাম (বিএনপি জোট), গোয়াইনঘাটে আব্দুল হাকীম চৌধুরী (বিএনপি), জৈন্তাপুরে জয়নাল আবেদীন (বিএনপি জোট), জকিগঞ্জে ইকবাল আহমদ চৌধুরী (বিএনপি), দক্ষিণ সুরমায় আবু জাহিদ (আওয়ামী লীগ), ওসমানীনগরে ময়নূল হক চৌধুরী (বিএনপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আর এবারে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০১৯ সালে সিলেট জেলায় বিএনপির কোন প্রার্থী জিততে না পারলেও বাজিমাৎ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের হারিয়ে দিয়েছেন ১২টির মধ্যে ৫টি উপজেলায়। এবারে সিলেটে বিজয়ীরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশফাক আহমদ। বিশ্বনাথ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম নুনু মিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান মফুর, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু জাহিদ, জকিগঞ্জ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মোমিন চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরী, জৈন্তাপুর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামীম আহমদ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কাশেম পল্লব।

এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ সিলেটভিউকে বলেন, ‘ বিএনপি যেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণই করেনি সেখানে বিএনপি জিরো হবে কিভাবে? তবে, বিএনপি যে নির্বাচন বর্জনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। প্রহসণের নির্বাচন জনগন প্রত্যাখ্যান করেছে।’

স্বতন্ত্র ব্যানারে বিএনপির প্রার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি জানান, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে জেতা যে সম্ভব নয় এই নির্বাচন তার প্রমাণ। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তারা অন্যায় করেছেন, এর খেসারত দিতে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেন তারা। তাদের বহিস্কারাদেশ ফিরিয়ে নেওয়া হবে কি না তা সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে কেন্দ্র পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।’

উল্লেখ্য, গতবারের নির্বাচনে সিলেটে উপজেলার হিসাবে ১৩ উপজেলায় ৯-৪ এ এগিয়ে থাকলেও এবারের অনুষ্টিতব্য উপজেলা নির্বাচনের ১২ উপজেলায় ১২-০ তে পিছিয়েই থাকলো বিএনপি। যদিও দলগতভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তবুও বিএনপির খোলসে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিএনপির প্রার্থী ধরেই ভোট দিয়েছেন সাধারণ অনেক ভোটার।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ মার্চ ২০১৯/পিডি/এমকে-এম



@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন