আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে মন্ত্রীদের এলাকায় ‘নৌকাডুবি’!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২১ ০০:১১:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দুই দফায় শেষ হয়েছে সিলেট বিভাগের চার জেলার ৩৬টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে বিভাগের পাঁচ মন্ত্রীর এলাকায় ঘটেছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি। দলীয় প্রতীক নৌকার এই ভরাডুবির কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দলের পদবীধারী নেতাদের বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রচারণা ও প্রার্থী বাছাইয়ে নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ি করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিদ্রোহীদের এই দাপুটে জয় দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ নষ্টের আশঙ্কাও করছেন তারা।

এদিকে, সিলেট জেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির কোন প্রার্থীই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারেননি। উল্টো দলের ‘অবাধ্য’ হয়ে তাদেরকে হতে হয়েছে বহিস্কৃত। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সব কুলই হারাতে হয়েছে তাদেরকে।

গত সোমবার দ্বিতীয় পর্বে সিলেট জেলার ১২টি ও মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের ১২টি উপজেলার মধ্যে ৭টিতে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দলীয় প্রতীক নৌকাকে ঠেক্কা দিয়ে ৫টিতে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহীরা। নির্বাচনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা সিলেট সদরে নৌকার প্রার্থী আশফাক আহমদ বিজয়ী হলেও প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের নির্বাচনী এলাকা জৈন্তা, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে ঘটেছে ‘নৌকাডুবি’।

তিন উপজেলায়ই দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। জৈন্তাপুরে দলীয় প্রার্থী লিয়াকত আলীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমদ। একইভাবে গোয়াইনঘাটে গোলাম কিবরিয়া হেলালকে পরাজিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ এবং কোম্পানীগঞ্জে জাহাঙ্গীর আলমকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ।

এছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের নির্বাচনী এলাকা দুই উপজেলার মধ্যে বিয়ানীবাজারে নৌকা ডুবিয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব।

মৌলভীবাজারেও পরিবেশ ও বন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের নির্বাচনী এলাকা বড়লেখা ও জুড়িতে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে। বড়লেখায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সুন্দরের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সোয়েব আহমদ। একইভাবে জুড়ি উপজেলায় নৌকার বিপরীতে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ মুহিত।

প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও মন্ত্রীদের এলাকায় নৌকার ভরাডুবির ঘটনা ঘটেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে শুধুমাত্র দক্ষিণ সুনামগঞ্জে। এ উপজেলায় নৌকা প্রতীককে পরাস্ত করে প্রায় ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত মো. ফারুক আহমদ।

হবিগঞ্জে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলীর নির্বাচনী এলাকায়ও পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তার নির্বাচনী এলাকার চুনারুঘাটে নৌকা প্রতীক বিজয়ী হলেও হেরেছে মাধবপুরে। মাধবপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিস্কৃত নেতা এসএফএ এম শাহজাহান।

এদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিলেট জেলায় বিএনপির ১২ নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের অবাধ্য হওয়ায় নির্বাচনের আগেই তাদেরকে বহিস্কার করা হয়। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনীযুদ্ধেও বিজয়ী হতে পারেননি তারা। এমনকি গোয়াইনঘাট ছাড়া অন্য কোন উপজেলায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও আসতে পারেননি বিএনপির বহিষ্কৃতরা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ মার্চ ২০১৯/শাদিআচৌ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন