আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সাড়ে ৩ বছরেও সংস্কার কাজ শেষ হয়নি সিলেট শহরতলির সাহেবের বাজার-ধোপাগুল-হরিপুর সড়কের কাজ। অপরিকল্পিতভাবে কাজ করায় এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
জানা গেছে, ধোপাগুল থেকে সীমারবাজার সদর অংশ পর্যন্ত সড়কটি ৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। গত সাড়ে তিন বছরে ৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৬ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৯ সালের ৩ মাস অতিক্রম হলেও কাজটি এখনো অসমাপ্ত। যেটুকু কাজ হয়েছে তাও নিম্নমানের হওয়ায় ইতিমধ্যেই ভাঙন শুরু হয়েছে।
এদিকে ধোপাগুল থেকে মুহালদিকের ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের দশা খারাপ হলেও তা সংস্কার করা হচ্ছে না। এতে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিদিন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
২০১৭ সালের শেষের দিকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আহমদ বলেছিলেন, ‘২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সংস্কারের কাজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, বিষয়টি আমি অবগত। ২ সপ্তাহের মধ্যে রাস্তা সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করা হবে এবং সব ধরনের অনিয়ম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কিন্তু তার সেই ‘২ সপ্তাহ’ শেষ হয়নি অদ্যাবধি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের সাহেবের বাজার-হরিপুর রাস্তার ধোপাগুলে কয়েকটি ক্রাশার মিলের কারণে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। ক্রাশার মিলের পানি সড়কে জমে কাদা তৈরি হয়। যে কারণে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়নমূলক কাজ। দিনের পর দিন সড়কে পানি জমে থাকলেও সেদিকে নজর নেই সংশ্লিষ্টদের।
সাহেবের বাজার এলাকার শফিকুর রহমান বলেন, ‘কয়েকজন ক্রাশার মিল মালিকের কাছে জিম্মি অবস্থা থেকে পুরো এলাকাবাসীকে মুক্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে বারবার মিল মালিকদের কাছে ধরনা দেয়া হলেও কোন ইতিবাচক ফলাফল মিলছে না।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, রিপন ও মা ক্রাশার মিল, সাফা এন্টারপ্রাইজ-২, আদম স্টোন প্রভৃতি ক্রাশার মিল থেকে সড়কে এসে পানি জমা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রাশার মিলের পানি সড়কের বিভিন্ন স্থানে জমে আছে। এতে সড়কে কাদা তৈরি হয়ে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এদিকে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কেবল স্থানীয়রাই চলাচল করেন না, গোয়াইনঘাট উপজেলার মানুষজনসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরাও রাস্তাটি ব্যবহার করেন। এই রাস্তায় জাফলং রাতারগুল ও মায়াবী ঝর্ণায় যাওয়া যায়।
স্থানীয় জুনেদ, জুবের, মতিউর, জাকারিয়াসহ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কয়েকটি ক্রাশার মিল মালিকের কারণে এ এলাকার পরিবেশে হুমকির মুখে। কয়েকটি মিলের জন্য সড়কের উপর পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে বছরের পর বছর জনগণের ভোগান্তি হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের দাপটের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হবে, এটা হতে পারে না।
এ ব্যাপারে খাদিমনগর ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বর্তমান ইউপি সদস্য বশির মিয়া বলেন, ‘সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করতে এর আগে আমরা ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এর ফলে আমরা মহাদুর্ভোগ পোহাচ্ছি। অতি দ্রুত সড়কের সংস্কার কাজ শেষ না হলে আমরা ফের আন্দোলনে নামবো।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদকে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
স্থানীয় খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সিলেটভিউকে বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পড়ে আছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘সড়কের পাশে থাকা কয়েকটি ক্রাশার মিল সড়ক থেকে উঁচু স্থানে থাকায় সেগুলো থেকে পানি এসে সড়কে জমা হয়। ফলে সড়কে কাদা তৈরি হয়, ভালো সড়কেও ভাঙন ধরে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি আমরা।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ মার্চ ২০১৯/আইএ/এমই-কে/আরআই-কে