আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে ৫৫ কোটি টাকায় সরছে ‘জঞ্জাল’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২৭ ০০:১৯:১৫

রফিকুল ইসলাম কামাল :: প্রায় চার বছর আগে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কারাগারে যাওয়ায়। এরপর গেল বছর পুনরুজ্জীবিত হয় উদ্যোগটি। এ বছর এসে শুরু হয়েছে কাজ।

সিলেট নগরীর অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার বৈদ্যুতিক ক্যাবল আন্ডারগ্রাউন্ডে (মাটির নিচে) নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এসব ক্যাবলের প্যাঁচে বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো জঞ্জাল তৈরি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন এসব ক্যাবল মাটির নিচে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। অবশ্য কয়েকটি এলাকা নয়, সিলেট নগরীর সকল এলাকায় একইভাবে সবধরনের ক্যাবল মাটির নিচে নেয়ার কথাও বলছেন তারা।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীর আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকা থেকে চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কোর্টপয়েন্ট ও সিটি পয়েন্ট হয়ে সার্কিট হাউজ পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকার বৈদ্যুতিক ক্যাবল মাটির নিচে নেয়ার কাজ বর্তমানে চলমান। গেল ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই কাজ শুরু হয়। পুরো কাজটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

সিলেট সিটি করপোরেশনের বৈদ্যুতিক শাখার প্রধান, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন সিলেটভিউকে বলেন, ‘পিডিবি প্রকল্পের কাজ করছে, আমরা সহযোগিতা করছি। এতে ব্যয় হচ্ছে ৫৫ কোটি টাকা।’

রুহুল আমিন আরোও বলেন, ‘এই প্রকল্পের কাজে ওভারহেড (মাটির উপরস্থ) টেলিফোন ক্যাবল, ডিশের ক্যাবল প্রভৃতি ক্যাবলগুলোও সমন্বয় করা হচ্ছে। এগুলোও মাটির নিচে নেয়া হবে।’

তবে এর সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন পিডিবির সিলেট জোন পাওয়ার সিস্টেমের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন। মঙ্গলবার রাতে তিনি সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমি জানতে যতোটুকু জানতে পেরেছি, যেটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুধু বৈদ্যুতিক ক্যাবলই মাটির নিচে নেয়া হবে। এছাড়া ইন্টারনেট অপারেররা তাদের ক্যাবল মাটির নিচে নিতে কথা বলেছে। আর ডিশ বা অন্য ক্যাবল যার যেটা, তারা তা সরিয়ে নেবে। এগুলো অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

যদি শুধুমাত্র বিদ্যুতের ক্যাবল ও ইন্টারনেটের ক্যাবল মাটির নিচে নেয়া হয়, তাহলে ডিশের বা টেলিফোনের ক্যাবলগুলোর ক্ষেত্রে কি হবে, এমন প্রশ্নে প্রকল্প পরিচালক ‘সব প্রশ্নের উত্তর আগামীকাল (আজ বুধবার) দেয়ার’ কথা বলেন। কাজের মেয়াদ কতোদিন তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।

তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস সিলেটভিউকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এই প্রকল্পের কাজটি আমরা করছি। কাজ শুরু হয়েছে, ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় পানি ও গ্যাসের লাইন রাখা হয়নি। এগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। তবে এক্ষেত্রে পুরো প্রকল্পে ভজঘট দেখা দেয় কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে নাগরিক সমাজে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, কোর্টপয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, চৌহাট্টা, আম্বরখানাসহ প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের তার (ক্যাবল) এলোমেলোভাবে রয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে শুধু বৈদ্যুতিক ক্যাবলই নয়, লাগানো হয়েছে ইন্টারনেট, টেলিফোন ও ডিশের ক্যাবলও। এমনকি মার্কেট কিংবা বাসা-বাড়ির পিলার, গ্রিল, বাঁশ প্রভৃতির সাথেও ঝুলানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল। সবমিলিয়ে সর্বত্র ভয়ঙ্করভাবে ঝুলছে ক্যাবলগুলো। এতে যে কোনো সময় রয়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কা। সাথে সৌন্দর্যহানি যেন বাড়তি ক্ষতি!

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রায় চার বছর আগে, আরিফুল হক চৌধুরী নিজের প্রথম মেয়াদে মেয়র থাকাকালে নগরীর বৈদ্যুতিক ক্যাবলগুলোর মাটির নিচে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখন পিডিবিও এই উদ্যোগে সায় দেয়। তৎকালীন সময়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় দুটি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারান্তরীণ হন আরিফ। এরপর থমকে যায় এই উদ্যোগ। তবে কারামুক্ত হয়ে ফের এই উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেন মেয়র। এরপর ২০১৭ সালের শেষদিকে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয় পিডিবিতে। গেল বছরের জুনে সিসিকের বাজেটে এ প্রকল্পের বিষয়টি উল্লেখ করেন মেয়র আরিফ। এ কাজের জন্য পিডিবির পক্ষ থেকে সার্ভেও করা হয়েছিল। তখন পিডিবির সার্ভে থেকে প্রাপ্ত সুবিধা-অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অবশেষে এ বছর শুরু হলো কাজ।

এ প্রসঙ্গে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘প্রতীক্ষীত কাজ শুরু হয়েছে। পিডিবি কাজটি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্য দিয়ে নগরীর ক্যাবলের জঞ্জাল কিছুটা কমবে।’ পুরো নগরীর ক্যাবল মাটির নিচে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার কথাও বলেছেন তিনি।

কাজ শেষ হলে প্রকল্প এলাকার সকল বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৭ মার্চ ২০১৯/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন