আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ওসমানীনগরে পল্লী বিদ্যুতের চন্দন বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-২২ ০০:১১:৫২

রনিক পাল, ওসমানীনগর :: সিলেটের ওসমানীনগরের কাশিকাপন পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের আওতাধীন কয়েকটি অভিযোগ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে একটি অভিযোগ হচ্ছে উপজেলার সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্র। উপজেলার বুরুঙ্গা, সাদীপুর, পশ্চিম পৈলনপুর ও গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের আংশিক গ্রামগুলোর গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে উপজেলার কলারাই বাজার ১৯ মাইল এলাকায় স্থাপন করা হয় সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্র। এই অভিযোগ কেন্দ্রে ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন চন্দন কুমার সরকার। এই চন্দন কুমার সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠেছে।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, চন্দন কুমার সরকার এখানে যোগদানের পর থেকে কারণে-অকারণে গ্রাহকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি একই কর্মস্থলে থাকার সুবাধে স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানদের নিয়ে এলাকায় একটি শক্তিশালী দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন। আর তাই দালাল চক্রটির মাধ্যমে সেবার নামে গ্রাহকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করা তার নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চন্দন কুমার বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে এই সাদীপুর অভিযোগে কেন্দ্রের ইনচার্জ ছিলেন। তৎকালীন সময়ে তিনি পল্লী বিদ্যুতের খাম্বা বাণিজ্য করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর তাকে অন্যত্র বদলি করা হলেও তিনি কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বছর তিনেক পূর্বে আবারো সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি তাকে অন্যত্র বদলির আদেশ দেন। কিন্তু তিনি বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়ঝাপ করে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এখানেই বহাল রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চন্দন কুমার এখানে যোগদানের পর থেকে তিনি গ্রাহকদেরকে জিম্মি করে অর্থ আত্মসাতসহ অনিয়ম, দুর্নীতি করে আসছেন। এছাড়া ওই অভিযোগ কেন্দ্রের নিধারিত অফিসিয়াল নাম্বারে ফোন দিলেও চন্দন কুমার গ্রাহকদের ফোন রিসিভ করেননা। কখনো কখনো ফোন রিসিভ করলেও ওই কর্মকর্তা গ্রাহকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করার নজির রয়েছে। এছাড়াও সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্রের আওতাধীন এলাকার গ্রাহকদের বিদ্যুতিক লাইনে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে গ্রাহকরা চন্দন কুমারের কাছে যান। এতে তিনি তার দালাল চক্রের চাহিদানুযায়ী বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেন। চাহিদা মত টাকা না দিলে দিনের পর দিন অন্ধকারে থাকলেও ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন অজুহাতে লাইন মেরামত করে দিতে বিলম্ব করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার এমন আচরণে ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সাধারন গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এনিয়ে গ্রাহকরা তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে সমাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নানা মন্তব্য করে যাচ্ছেন। অধিকাংশ গ্রাহকরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে চন্দন কুমারের অপসারণের দাবি জানালেও টনক নড়ছেনা পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

পল্লী বিদ্যুৎ সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্রে আওতাধীন রহমতপুর গ্রামের গ্রাহক আলী আহমদ, খছরুপুর গ্রামের সেলিম মিয়া, লামা তাজপুর গ্রামের রহিম আলী, নিজবুরুঙ্গা গ্রামের তাহির আলীসহ একাধিক গ্রাহকরা অভিযোগ করে জানান, সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্রে চন্দন বাবু যোগদানের পর থেকে কারণে-অকারণে তার চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে হচ্ছে। টাকা না দিলে ওই অভিযোগ কেন্দ্র থেকে কোনো সেবাই পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া তিনি গ্রাহকদের ফোন রিসিভি করেননা। এনিয়ে গ্রাহকরা প্রতিবাদ করলেও তিনি গ্রাহকদের সাথে অশালিন আচরণ করে থাকেন। তার অনৈতিক বাণিজ্যে এ অঞ্চলের গ্রাহকরা অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন।
 
সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্রের আওতায় থাকা মোবারকপুর গ্রামের গ্রাহক সামসুল ইসলাম শামীম, সমছু মিয়াসহ আরও একাধিক গ্রাহক জানান, চন্দন বাবু এখানে যোগদানের পর থেকে তিনি আর্থিক বাণিজ্যে মেতে ওঠে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকার একটি ট্রান্সফরমারের ব্যারেল পড়ে গেলে চন্দন বাবুর চাহিদামতো তাকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে দীর্ঘসময় চলে যায় কিন্তু এটি লাগানো হয় না। সম্প্রতি আমাদের ট্রান্সফরমারের ব্যারেল পড়ে গেলে সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্রের অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি। পরবর্তী সময়ে আমরা বাধ্য হয়ে অভিযোগ কেন্দ্রে গিয়ে টান্সফরমারের ব্যারেল লাগানোর জন্য অনুরোধ করলে চন্দন বাবু বলেন, লাইনম্যানরা যাবে তাদের কাছে দুই হাজার টাকা দিয়ে দিবেন। তারপর আমরা তাকে ১২শ টাকা দেয়ার পর রাতে আমাদের ব্যারেল লাগানো হয়।

আর্থিক বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে পল্লী বিদ্যুৎ সাদীপুর অভিযোগ কেন্দ্রে ইনচার্জ চন্দন কুমার সরকার বলেন, আমার কাছে অফিশিয়াল চারটি মোবাইল ফোন রয়েছে। সরক’টিতেই কল আসে আমি সব কল রিসিভ করতে পারিনি। তাই অনেক সময় হয়ত কোনো গ্রাহকদের ফোন রিসিভ নাও হতে পারে। তার বিরুদ্ধে অনান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর অফিসে আসেন সব বিষয়ে জানতে পারবেন।

এ ব্যাপারে কাশিকাপন জোনাল অফিসের ডিজিএম ফাইজ উল্যা বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। ওই কর্মকর্তা কত দিন ধরে ওই অভিযোগ কেন্দ্রে কর্মরত আছেন তা আমার সঠিক জানা নেই। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক বাণিজ্যের লিখিত সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ এপ্রিল ২০১৯/আরপি/পিডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন