আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেট জেলা ছাত্রলীগ: কমিটিহীন দেড় বছর, বাড়ছে হতাশা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-২৩ ০০:০৪:৩৫

দিব্য জ্যোতি সী :: প্রায় দেড় বছর ধরে কমিটি নেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সিলেট জেলা শাখার। কমিটি না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে নেতাকর্মীরা দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিলেও অস্তিত্ব হারাচ্ছে ছাত্রলীগের সিলেটের শক্তিশালী এই ইউনিটটি। আর দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় সংগঠনের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন কর্মীরা। কেউ কেউ হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে বেছে নিচ্ছেন প্রবাসযাত্রার পথও। অনেকেই যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন পেশায়।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ নানা কোন্দল এবং সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধের কারণে নতুন কমিটি আলোর মুখ দেখছে না। আর একাধিকবার কমিটি গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে সিলেট জেলা কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরও।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। শাহরিয়ার আলম সামাদকে সভাপতি ও এম. রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে সে সময় গঠন করা হয় ১০ সদস্যের আংশিক কমিটি। পরের বছর ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর আরো ১৩১ সদস্য যোগ করে ১৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়। এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকেই প্রকাশ্যে দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পরে জেলা ছাত্রলীগ। ঘটে সংঘর্ষ এবং একাধিক উত্তেজনাকর ঘটনা। যার ফলে মাত্র চার মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র।

কমিটি স্থগিত হওয়ার পর বেশকিছু দিন শান্ত ছিল জেলা ছাত্রলীগ। তাই প্রায় ৯ মাস পর ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর কমিটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সাথে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন আয়োজনের জন্য তারিখ নির্ধারণে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয় সামাদ-রায়হান নেতৃত্বাধীন কমিটি। এরপর সংগঠন বিরোধী কয়েকটি কার্যকলাপে জেলা ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বিব্রত হয় কেন্দ্রীয় সংসদ।

২০১৭ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ হত্যা মামলায় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরী প্রধান আসামী হন। এর জেরে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।

একইসাথে নতুন কমিটি গঠনের জন্য ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে জীববৃত্তান্ত আহবান করেন তারা। সে সময় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৃজন ঘোষের কাছে সভাপতি পদে ৬০ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৮০টিসহ তিন শতাধিক জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা পড়ে। কিন্তু সিভি নিয়েও কমিটি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের আগে সিলেটের কমিটি করার জোর চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সিলেটের ছেলে এস এম জাকির হোসাইন। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের এক করতে না পারায় সিলেটের কমিটি দিতে পারেন নি তিনি।

এর ফলে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে গত দেড় বছর কমিটি ছাড়াই চলছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। আর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ছাড়াই অতিবাহিত হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রত্যেকটি নির্বাচনেই ছাত্রলীগের কমিটি না থাকার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় উল্লেখ করেছেন সাবেক ছাত্রনেতারা।

সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। তাদেরকে ঘিরে ধরছে হতাশা। ফলে রাজনীতির পথ ছেড়ে অন্য পথেই হাঁটছেন তারা।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ এপ্রিল ২০১৯/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন