আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শ্রীমঙ্গলে ছেলে হত্যার বিচার চান আশরাফের মা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-১৫ ১৪:৩২:৫৪

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি :: শ্রীমঙ্গল রেলস্টশের পশ্চিমপাশে আউটার সিগনাল এলাকায় গত ১৫ মার্চ রেললাইনের নীচে লাশ উদ্ধার করা হয় টমটম চালক আলী আশরাফের (২২)। তার বাড়ি ভুনবির ইউনিয়নের বিশ্বরোড শাসন গ্রামে।

সে চা দোকানী রমজান আলীর দ্বিতীয় ছেলে। ছেলে আশরাফ মারা যাবার ২৯ দিন আগে তার বাবাকে হারান। তিনি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। দীর্ঘ দুইমাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসে জিআরপি থানায়।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘হেমুরাইজড এন্ট্রি মডেম ইন নেচার’। এ রিপোর্ট বিজ্ঞ আদালতে মঙ্গলবার পাঠানো হয়েছে। শুনানি আগামী ২০ মে। এখন আদালত সিদ্ধান্ত নিবেন তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা। আদালতের সিদ্ধান্তঃ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন বলে জানালেন শ্রীমঙ্গল জিআরপি থানার ওসি ইসমাইল হোসেন সিরাজি।

ওসি জানান, এ ঘটনায় আগে ইউডি মামলা জিআরপি থানায় রজু করা হয়েছিল। এরপর নিহতের বড়ভাই দিনমজুর আলী আকবর বাদি হয়ে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমল আদালতে নিহতের স্ত্রী, শশুর, চাচা শশুর, ফুফু শ্বাশুরী, শাশুরী, আশরাফের স্ত্রীর দুই ভাইসহ ১৫ জনকে আসামি করে ধারা ৩০২/২০১/৩৪ দঃবিঃ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজহারে থেকে জানা যায়, উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের সুইনগইড় গ্রামের বাসিন্দা নুর ইসলামের মেয়ে সালমা বেগমের সাথে তার মৃত্যুর তিনমাস আগে বিয়ে হয়। সে টমটম অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। বিবাহের ৫/৫দিন পর হতেই তার স্ত্রী সালমার সাথে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। বিবাহের পর ১০ থেকে ১৫ দিন আমাদের সংসারে ছিল। বাকীদিনগুলো তার স্বামীর সাথে ঝগড়া বিবাদ করে পিত্রালয়ে থাকতো। আশরাফ নিহতের অনুমান ২০ দিন আগে সালমা আশরাফের সাথে ঝগড়া করে পিত্রালয়ে চলে আসে। যাওয়ার সময় বলে আর কোনদিন তার সংসারে ফিরে আসবে না। আশরাফ মারা যাবার আগে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী শিপা আক্তারকে জানিয়ে গিয়েছিল তার স্ত্রীর সহিত বিবাহের পূর্ব থেকে অন্য লোকের সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে তার স্ত্রী সংসার করতে চায় না।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ মার্চ নিহত আলী আশরাফ টমটম চালানোর উদ্দেশ্যে তার বাড়ি থেকে বের হয়। টম টম চালানোর সময় তার বড় ভাই আলী আকবরকে সকাল ১১টারদিকে মোবাইলে জানায় তার শশুর ৫ মিনিট আগে তাকে ফোনে জানিয়েছে টম টমসহ তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। দুপুর দুইটারদিকে আশরাফ তার বড় ভাইকে জানায় তার শ্যালকের জন্য বিয়ের পাত্রী দেখতে সাতগাঁও মাধবপাশা গ্রামে যাবে। ঐদিন রাত ৮টার সময় আশরাফকে তার বড় ভাই আলী আকবর ফোন করে তার গন্তব্য জানতে চায়। তখন সে বলে রাত ১০টারদিকে বাড়িতে ফিরবে। সে বাড়িতে না আসায় রাতদুইটার দিকে আলী আকবর আবার আশরাফের ফোনে কথা বলতে চাইলে তার স্ত্রী সালমা ফোন ধরে শরীর ভাল না বলে দুর্ব্যবহার করে লাইন কেটে দেয়। তার পর অনেক চেষ্টা করেও মোবাইল বন্দ দেখায়। পর দিন সকালে আলী আকবর কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পর রাত নয়টায় আশরাফের শশুরের মোবাইল ফোনে কথা বলে। শশুর নুর ইসলাম উত্তর দেয় তোমার ভাই কোথায় আছে তা আমি জানিনা। সে আমার বাড়িতে আসে নি। এ কথা বলে সে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।

পরদিন ১৭ মার্চ সকাল ১০টায় আশরাফের খোঁজ নিতে তার শশুর বাড়িতে আলী আকবর ও তার দুলাভাই হাকিম মিয়া যান। আলী আশরাফ কোথায় আছে তার শশুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তোমার ভাই কোথায় মরেছে তা আমরা জানি না। তবে শুনছি রেল লাইনের পাশে একটি লাশ পড়ে আছে। এ কথা শুনে তারা হতবাক হয়ে রেললাইনের পাশে অনেকক্ষণ খোঁজাখুজি করে কোনো লাশ পাননি।

জিআরপি থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জানায়, ১৬ মার্চ একটি লাশ রেল লাইন থেকে তারা মৃত উদ্ধার করেছে। ওই লাশের টুকরো টুকরো ছবি ও পরনের পোষাক দেখে আলী আকবর তার ভাইয়ের লাশ বলে সনাক্ত করে। জিআরপি পুলিশ আশরাফের শশুর বাড়ির উত্তর পাশ থেকে তার মৃতদেহের হাত, পা, মাথা ইত্যাদি টুকরাবস্থায উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার পাঠায় বলেও তাদের জানায় জিআরপি পুলিশ। এরপর মৌলভীবাজার পৌরসভার টিকরবাড়ি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত আলী আশরাফের বড় ভাই আলী আকবর মামলায় উল্লেখ করেন ১৫ মার্চ রাত ৮টার পর পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তার ভাইকে তার শশুরবাড়ীর লোকজন নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে তার লাশ রেল লাইন ও এর আশপাশে ফেলে রাখে। যাতে মানুষ মনে করে আশরাফ রেলে কাটা পড়ে মারা গিয়ে লাশ টুকরো টুকরো হয়েছে।

এ মামলার বিজ্ঞ কৌশলী এড গজনবি সিদ্দিকী বলেন, নিহত আশরাফ মারা যাবার পূর্বে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়টি আমরা বিজ্ঞ আদালতে শুনানীতে তুলে ধরব।

এদিকে নিহতের মা খুর্শেদা বেগম ছেলে আশরাফকে হারিয়ে পাগলিনী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তিন বছরের শিশু সোহান, পাঁচ বছরের সোহাগ আর ২৬ বছর বয়সী আলী আকবরকে নিয়ে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে থানার বারান্দায় ঘুরপাক খাচ্ছেন। বর্তমানে এই সংসারের হাল ধরেন সংসারের বড় ছেলে আলী আকবর। মানুষের বাড়িতে কাজকর্ম করে তিনি সংসার ও মামলার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আশরাফের মা খুর্শেদা বেগম বলেন, “আজকে ভাতের সঙ্গে কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ খেয়ে রোজা রাখছি। ছোট বাচ্চা দুইটারে ভাত দিয়া যদি থাকে তাহলে পানিভাত খেয়ে ইফতার করি।”

তিনি বলেন, “মা হয়ে ছেলের মরা মুখটাও আমি দেখতে পেলাম না। কোথায় দাফন কাপন করছে তাও আমি জানিনা। আমি কিচ্ছু চাই না। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।”


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ মে ২০১৯/এমআইএ/এসডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন