আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটে সেই পুলিশের বিরুদ্ধে দেড় মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-১৮ ০০:২০:২৯

রফিকুল ইসলাম কামাল :: ঘটনা ঘটেছিল গেল ২৭ মার্চ। এরপর পেরিয়ে গেছে দেড় মাসেরও বেশি সময়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্তই শেষ হয়নি। সেই তদন্ত করছে আবার খোদ পুলিশ! বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

ময়মনসিংহ থেকে এক দম্পতি বেড়াতে এসেছিলেন সিলেটে। গত ২৭ মার্চ সকালে দক্ষিণ সুরমার কদমতলি বাস টার্মিনালে যাওয়ার পথে তাদেরকে হেনস্থা করে পুলিশের একটি টহল দল। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) এএসআই মো. ওবাইদুর রহমান।

ওই ঘটনা আড়ালেই থেকে যেতো, যদি না স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে আসা তাসলিমা নামের ওই নারী নিজের ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দিতেন। ফেসবুকের ওই পোস্টের সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে শুরু হয় তোলপাড়। ওঠে সমালোচনার ঝড়। পুলিশ প্রশাসন তখন সাময়িক বরখাস্ত (ক্লোজড) করে অভিযুক্ত এএসআই মো. ওবাইদুর রহমানকে। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন তিনি।

এ ঘটনা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। গেল ৩০ মার্চ তদন্তের বিষয়টি সিলেটভিউকে জানিয়েছিলেন মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ গ্রহণের কথাও বলেছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তবে ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে দেড় মাসেরও বেশি সময়। দীর্ঘ এ সময়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা সিলেটভিউকে বলেন, ‘ওই ঘটনার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তদন্ত চলছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘পুলিশ যখন পুলিশের বিরুদ্ধেই তদন্ত করে, তখন সেখানে পক্ষপাতের সুযোগ থাকে। যে অভিযোগ ওঠেছিল, সেটির জন্য নির্বাহী তদন্তের প্রয়োজন ছিল। নির্বাহী বিভাগের একজনকে রেখে সাথে গণমাধ্যমের একজন এবং জেলা বারের একজন সদস্য রাখা যেতো। তাতে তদন্তের স্বচ্ছতা থাকতো।’

তাসলিমা নামের ওই নারীর অভিযোগ ছিল, স্বামীর সাথে তিনি কদমতলি বাস টার্মিনালে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চৌহাট্টায় তাদেরকে আটকে পুলিশ আলাদাভাবে জেরা করে। তাদেরকে অপ্রীতিকর নানা প্রশ্নও করা হয়। পরে টাকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশায় ৫ জন পুলিশ ছিল। আমার সঙ্গে আমার সাহেব ছিল। সিএনজি অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে আমার সাহেবকে নিয়ে গেলো তাদের গাড়িতে। বলতাছে আপনি একটু আমাদের সঙ্গে আসেন কথা আছে। ওরে নিয়ে গিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা শুরু। আপনার কি হয় ওনি? বিয়ে হলো কদিন? ছেলে-মেয়ে কজন? কি করেন? এখানে কেন আসছেন? তখন আবার চলে গেলো আমার সাহেবের কাছে। ওরেও গিয়ে একই কথা জিজ্ঞেস করা হলো, কিন্তু আমার আড়ালে।’

তিনি আরো উল্লেখ করেছিলেন, ‘নাস্তা না করেই গাড়িতে উঠলাম। আমার সাহেব আমার সঙ্গে একটা কথাও বলে না। ১২টা বাজে তাও কথা বলে না। আমি বারবার ওরে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি কাজ হয়নি। দুপুরে খাবার বিরতি দিলো। নামলাম খাওয়ার জন্য। ওরে বললাম দেখো আমার সঙ্গে কথা বলছো না কেন? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার সঙ্গে এমনটা করো না। তখন দেখি ওর চোখ ভিজে গেছে। ও বলতাছে, জানো আমাকে কি জিজ্ঞেস করেছে? আমাকে বলতাছে কত টাকায় ভাড়া করে নিয়ে আসছেন? আমার সাহেব তখন বললো দেখুন আমার বউটা খুবই ভালো পরিবারের মেয়ে আর আমিও ওরে খুবই যত্ন আর সম্মানে রাখি, আমাকে যা খুশি বলেন আমার বউটাকে নিয়ে কিছু বলবেন না। আমি ঘুরতে পছন্দ করি। আমার ছেলে ইন্টারে পড়ে। এখন আমাকে কাবিননামা নিয়ে ঘুরতে হবে। আমি আর কি লিখবো? তবে মরে গেলেও সিলেট কোনোদিনই আর যাবো না।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ মে ২০১৯/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন