আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ সিলেটের জিল্লুরের পরিবারে এখনও অপেক্ষা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-১৮ ২১:৪১:৫৭

রাশেদুল হোসেন সোয়েব :: লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে গেল ১৩ মে তিউনিসিয়ার উপকূলবর্তী ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার যুবক জিল্লুর রহমান (২২)। দালালচক্র মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া নিয়ে যায় জিল্লুর রহমানকে। সেখানে জিল্লুর রহমানসহ অন্যান্য যুবকদেরকে বন্দি করে রাখা হয়।

এরপর উত্তাল সাগরে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে জাহাজ থেকে ছোট ছোট নৌকায় অভিবাসীদের উঠার জন্য বাধ্য করা হয়। দু’দিকে মৃত্যুর ভয় থাকার পরও বাঁচার আশায় গুলি খেয়ে মরার চেয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে স্বপ্নের দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন জিল্লুরসহ অন্য অভিবাসীরা। কিন্তু নৌকাডুবিতে সাগরে তলিয়ে যান অনেকেই। তাদের মধ্যে আছেন জিল্লুর রহমানও। এখনও খোঁজ মিলেনি তার।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ইনাত আলীপুর গ্রামে জিল্লুর রহমানের বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। নিখোঁজ ছেলের জন্য তখন আহাজারি করছিলেন তার বাবা-মা।

জিল্লুরের বাবা লেচু মিয়া জানান, নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ৩৭ জনের নামের তালিকায় জিল্লুর রহমানেরও নাম রয়েছে এমন খবর জানতে পারেন তারা। পরে যে দালালের মাধ্যমে জিল্লুর ইউরোপের পথে পাড়ি দিয়েছিলেন, সেই বশির আহমদ লিলু মিয়ার কাছে যান তারা। বশির বি. কে. এয়ার সার্ভিস এবং সিদ্দিকিয়া হজ্ব ট্রাভেল্স-এর সত্ত্বাধিকারী। সিলেট নগরীর শিবগঞ্জে মোহিনী ১১২/এ নিশি মঞ্জিলে থাকেন বশির।

লেচু মিয়া অভিযোগ করেন, বশির আহমদের কাছে গিয়ে জিল্লুরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার (লেচু) সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি নানা ভয়ভীতিও দেখান বশির।

জিল্লুর রহমান সিলেট সরকারি কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বি. কে. এয়ার সার্ভিস, সিদ্দিকিয়া হজ্ব ট্রাভেল্স-এর সত্ত্বাধিকারী বশির আহমদ লিলু মিয়ার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে জিল্লুরকে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তার পরিবার। প্রথমে ৮ লাখ টাকায় মৌখিক চুক্তি হলেও পরে লিবিয়া থেকে বিমানযোগে ইতালি পাঠানোর কথা বলে আরো ৪ লাখ টাকা নেন বশির আহমদ। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে টাকা জোগাড় করেন লেচু মিয়া।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে জিল্লুরকে লিবিয়া পাঠান দালাল বশির। কথা ছিল লিবিয়া পৌঁছার পর এক মাসের মধ্যে সেখান থেকে ইতালি পৌছাবেন জিল্লুর। ৮ লাখ টাকা আদায়ের পর ‘গেম ঘর’ নামক একটি তালাবদ্ধ ঘরে বেশকিছু যুবকের সাথে রাখা হয় জিল্লুর রহমানকে। ঘরটিতে একটি টয়লেট থাকায় অনেক কষ্ট হয় তাদের। দিনের পর দিন অল্প পরিমাণ খাবার আর গোসল ছাড়াই পড়নের কাপড় পরে থাকতে হয় তাদেরকে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সাথে কথা হলে জিল্লুর জানিয়েছিলেন, তাদেরকে তালাবদ্ধ ঘরে অনাহারে রাখা হয়। প্রতিদিন একবার মাত্র একটি করে রুটি দেওয়া হতো। কেউ খাবারের জন্য এক বারের পর দুই বার কল করলে শাস্তিসরূপ সবাইকে ৭২ ঘন্টা পর খাবার দেওয়া হতো।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে বি. কে. এয়ার সার্ভিস এবং সিদ্দিকিয়া হজ্ব ট্রাভেল্স-এর সত্ত্বাধিকারী বশির আহমদ লিলু মিয়া আত্মগোপন করেছেন। জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আদম পাচারে জড়িত। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

জিল্লুর রহমানের বাবা-মা অবিলম্বে দালাল বশিরকে গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। বশিরদের মতো দালাল যেন আর কাউকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ঠকাতে না পারে, সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, ১৩ মে নৌকাডুবির ঘটনায় জিল্লুর এখনও নিখোঁজ। তার সন্ধান পাওয়া যাবে, এমন অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ মে ২০১৯/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন