আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পঙ্গু স্বামী আর বিশাল সংসারের ঘানি টানছেন আবেদা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-১৯ ০০:২৫:৪৫

সাকলিন হক :: আবেদা বেগমের বাড়ি (৪৬) ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়। জীবিকার তাগিদে সিলেট শহরে তার আসা প্রায় ১৫ বছর আগে। পঙ্গু স্বামী ও ৫ সন্তানকে নিয়ে তার সংসার।

স্বামীর অ্যাক্সিডেন্টের পর থামতে বসেছিল জীবনের চাকা। পরিবারের হাল ধরতেই নির্মাণ (ঢালাই) শ্রমিকের কাজ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। গত প্রায় ১২ বছর ধরেই নিজের কোমল হাতে টেনে চলেছেন সংসারের ঘানি।

৪ ছেলে, ১ মেয়ে ও পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে তার সংসার। বর্তমানে সিলেট শহরের শেখঘাট এলাকায় বসোবাস করছেন আবেদা। জানালেন, ছেলেগুলো বাউন্ডুলে স্বভাবের হওয়ায় সব ঝড়ঝাপ্টা যাচ্ছে তার উপর দিয়েই।

একটি মাত্র মেয়ে লেখাপড়া করছ। নিজে পড়েননি। তাই কষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজকে বেছে নিতে হয়েছেন।

তবে মনেপ্রাণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে আদরের কন্যাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। স্বপ্ন দেখেন, সে লেখাপড়া করে ভালো চাকরী-বাকরী করবে।

বিভিন্ন কন্সট্রাকশন সাইটে ইটপাথর ভাঙ্গাসহ পাথর বা বালু বহনের কাজ করে থাকেন আবেদা। মাসে প্রায় ১৪/১৫ দিন কাজ করতে হয় তাকে। মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য কিংবা ঝড়-বৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও পুরুষ শ্রমিকদের সাথে কাধেকাধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

দৈনিক ৫০০/৬০০ টাকা মজুরি পান। জানান, বর্তমান সময়ে চালডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেশি থাকার কারণে সামান্য এই রোজগারে এতোগুলা মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয়। তার উপর আছে অসুস্থ স্বামীর ওষুধপত্র।

দৈনিক পারিশ্রমিক বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুটা দুঃখভরা কণ্ঠে বলেন, নিজের সহকর্মী পুরুষ নির্মাণ শ্রমিকদের কথা। একই পরিস্থিতি এবং নিয়মে কাজ করে যেখানে আবেদা পেয়ে থাকেন ৫/৬শ, সেই জায়গায় পুরুষ শ্রমিকরা পেয়ে থাকেন ৭/৮শ টাকা।

বাংলাদেশের মত স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে নারীরা পরিবার থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ পিছিয়ে পড়ছে সত্য, কিন্তু তাতে টনক নড়ছে না প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্টদের।

এমনকি, নারী অধিকার কর্মীদেরও এ ব্যাপারে খুব একটা সোচ্চার হতে দেখা যায়নি কখনো।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৯ মে ২০১৯/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন