আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিশ্বনাথে ট্রাস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে টাকা ছাড় দিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৫-১৯ ১১:২৮:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা সদরস্থ কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার মুহাম্মদ রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট’র মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি মতছির খান ও কোষাধ্যক্ষ আযম খানের স্বাক্ষরে গত ৮ এপ্রিল প্রায় ২ লাখ টাকা উত্তোলন করার সুযোগ প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারী বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের সর্বশেষ নির্বাচিত ওই কমিটির মেয়াদ শেষ। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওই কমিটির নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরে টাকা ছাড়া দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাংক ম্যানেজারের এমন উদাসিন সিদ্ধান্তের কারণে নানান জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাস্টের কমিটিতে চলমান বিরোধ আরোও তীব্র আকার ধারণ করেছে। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে টাকা উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।

ট্রাস্টের পরবর্তী বিজিএম বা নির্বাচিত কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত ট্রাস্টের একাউন্ট (নম্বর ৩৬১২-০৩১১০৩৩৮৯১) থেকে কোন টাকা ছাড় (উত্তোলন করার সুযোগ) না দেওয়ার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়ে ছিলো বলেও জানা গেছে। আর এ সিদ্ধান্ত গত বছরের ১৪ অক্টোবর যুক্তরাজ্যে ট্রাস্টের সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিনের পরিচালনায় ট্রাস্টের প্রায় ৭৫% ট্রাস্টির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় ও জরুরী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। আর সেই সভাটি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন ও মেডিয়েশন কমিটির প্রধান ফিরুজ খান (পংকি খান)’র যৌথ আহবানে অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় ১ বছর পূর্বে ট্রাস্টের কিছু বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। আর সে বিরোধের জের ধরে ওই নির্বাচিত বোর্ড অব ম্যানেজম্যান্ট (কার্যকরী) কমিটির ১৭ সদস্যের মধ্যে সহ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক’সহ ৬ সদস্য কার্যকরী কমিটি থেকে ওয়াক আউট করেন এবং সেই কমিটির বেশ কিছু সিদ্ধান্তকে বয়কট করেন। ফলে অকার্যকর হয়ে পড়ে ট্রাস্টের কার্যক্রম। অবশেষে ট্রাস্টের কার্যক্রমকে ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক করার জন্য ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ট্রাস্টের সিনিয়র ট্রাস্টি ও বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরুজ খান (পংকি খান)’কে প্রধান করে এবং আরোও ১৩ জন ট্রাস্টিকে সদস্য করে একটি অন্তর্বতীকালীন মেডিয়েশন কমিটি গঠন করা হয়। আর ট্রাস্টের জটিল সমস্যাগুলো আপোষ-মিমাংশায় নিরসন না হলে উক্ত মিডিয়েশন কমিটি ট্রাস্টের আগামী নির্বাচন ও বিজিএম অনুষ্ঠানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।

বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের মেডিয়েশন কমিটির প্রধান ও বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরুজ খান (পংকি খান) বলেন, বিরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাস্টর একাউন্ট থেকে কোন টাকা উত্তোলনের জন্য কাউকে সুযোগ না দিতে আমরা ব্যাংকে গিয়ে ম্যানেজারকে বলে এসেছি লিখিতভাবে। তারপরও তিনি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিলেন কিভাবে তা বুঝতে পারছি না। ব্যাংক ম্যানেজার একটি পক্ষকে ওই টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার কারণে ট্রাস্টের সমস্যা আরোও চরম আকার ধারণ করেছে। এখন এনিয়ে কোন আনাকঙ্খিত ঘটনা সংগঠিত হলে এর দায়-দায়িত্ব ব্যাংক ম্যানেজারকেই নিতে হবে। আর মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির নেতৃবৃন্দ কিভাবে নিজেদের স্বাক্ষর দিয়ে একটি সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারেন তা ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবেন বলে আশাবাদি।

কৃষি ব্যাংক বিশ্বনাথে উপজেলা শাখার ম্যানেজার মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, ১৪ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রথমে ট্রাস্টের সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও মেডিয়েশন কমিটির প্রধান লিখিতভাবে জানিয়ে ছিলেন টাকা ছাড় না দেওয়ার জন্য এবং পরবর্তীতে ১ নভেম্বরের আরেক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ট্রাস্টের সভাপতি-কোষাধ্যক্ষ টাকা ছাড় দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানিয়ে ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে, তবে যেহেতু এখানে সমস্যা চলছে তাই ওই সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভবিষ্যৎ আর টাকা ছাড় দেওয়া হবে না।

৮ এপ্রিল টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন ট্রাস্টের স্থানীয় (বাংলাদেশ) উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিভাত পরাগ তালুকদার। তিনি বলেন ট্রাস্টের কমিটিতে থাকা দু’পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি ট্রাস্টেও কোন কার্যক্রমে যাব না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ মে ২০১৯/পিবিএ/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন