Sylhet View 24 PRINT

বড়লেখায় আগুন দিয়ে স্ত্রীর শরীর পুড়িয়ে দিল স্বামী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-১২ ১৮:৩০:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় স্বর্ণলঙ্কার না পেয়ে স্ত্রীর শরীর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন স্বামী। ঈদের আগের রাত মঙ্গলবার (০৫ জুন) উপজেলার মুছেগুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীর নাম আছমিন বেগম (৬০)।

তিনি বড়লেখা সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের ছমির উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী সাহেদ আহমদ মুছেগুল গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১১ জুন) ওই নারীর বাবা বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় মামলা করেছেন।

এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছমিনা বেগমকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তি করা হলে সেখানে তাঁকে সঠিক চিকিৎসা না করেই ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৬০ ভাগ পোড়া শরীর নিয়ে গত ৯ দিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন আছমিনা বেগম।

আছমিনার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের হত দরিদ্র ছমির উদ্দিন ৩ বছর পূর্বে মূছেগুল গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে সাহেদ আহমদের সাথে মেয়ে আছমিনা বেগমের বিয়ে দেন। তাদের ২ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই স্বামীর মারধরের শিকার হতেন আছমিনা। সংসার ধরে রাখার চেষ্টায় মুখ বুঝে সব সহ্য করতেন। কিন্তু বন্ধ হয়নি নির্যাতন। ঘটনার কয়েকদিন আগে আছমিনার কানের স্বর্ণের অলংকার বিক্রি করার চেষ্টা করেন স্বামী সাহেদ। বিষয়টি বুঝতে পেরে আছমিনা এগুলো বাবার বাড়িতে গিয়ে সেখানে রেখে আসেন। ঘটনার ভোররাতে আছমিনার কাছে স্বর্ণের অলংকার চান সাহেদ। তখন আছমিনা বাবার বাড়িতে রেখে আসার কথা জানায়। এতে সাহেদ ক্ষুব্ধ হয়ে ঘরে থাকা আছমিনার সব কাপড় চোপড় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আছমিনা বাধা দিতে গেলে শারীরিকভাবে আঘাত করে আগুনের মধ্যে চেপে ধরে রাখে। এতে আছমিনা বেগমের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ঝলসে যায়। এরপর মুমুর্ষ অবস্থায় আছমিনাকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে পাষণ্ড স্বামী সাহেদ আহমদ পালিয়ে যায়। জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খবর পেয়ে আছমিনার বাবা-মা ও বোন বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মুমূর্ষ আছমিনাকে দেখতে পান। এ সময় চিকিৎসকরা আছমিনাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওইদিন মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে আছমিনাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৫ দিন চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আছমিনা বেগমকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। বর্তমানে সে মুমূর্ষ অবস্থায় তাঁর বাবার বাড়ি রয়েছে।

মামলার বাদী ও আছমিনা বাবা ছমির উদ্দিন বলেন, ‘মাত্র ৫ দিন চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়েকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি গরীব মানুষ। মেয়েকে যে চিকিৎসা করাবো। এই সামর্থ নেই। বাড়িতে কষ্ট করছিল। মেয়ের উন্নত চিকিৎসা দরকার। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব ও পুলিশের সহযোগিতায় রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।’

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। খবর পেয়ে ওই নারীকে দেখতে পুলিয়া পাঠিয়েছি। ওই নারীর পরিবার খুবই গরিব। তাঁর বাবার পক্ষে তাকে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।
মেয়েটির দ্রুত ভালো চিকিৎসা করানো দরকার। তাই আমি নিজেই ঢাকা পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানও সহযোগিতা করছেন। ঢাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।\'

তিনি বলেন, \'এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ আছমিনার বাবা তাঁর স্বামী ও শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।\'


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ জুন ২০১৯/এজেএল/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.