Sylhet View 24 PRINT

জৈন্তাপুরে ইতিহাস ঐতিহ্যের হাতছানি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-১৩ ০০:০৫:৪০

এনামুল কবীর :: এবার ঈদের ছুটিতে যারা সিলেট বেড়ানোর এসেছেন, তারা জৈন্তাপুরে ঢুঁ মারতে পারেন। খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জৈন্তারাজ্যটি নানা কারণে বিখ্যাত ।

বিশেষ করে প্রবল পরাক্রমশালী মুঘল আমল আর ইংরেজ শাসন শুরুর প্রায় শতবর্ষ পরও নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারার জন্য জৈন্তারাজারা যেমন বিখ্যাত, নরবলির মতো নিষ্ঠুর কাজের জন্য তারা তেমনি কুখ্যাতও। আজো সিলেট অঞ্চলে এ রাজ্যের রাজা বা রানীদের সম্পর্কে নানা গল্প শোনা যায়, যা রূপকথাকেও হার মানায়।

রাজ্যটি একসময় বিস্তৃত ছিল উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে সিলেটের কানাইঘাট ও গোলাপগঞ্জ, পূর্বে কানাইঘাট-জকিগঞ্জ এবং পশ্চিমে গোয়াইনঘাট ও সিলেট সদর উপজেলা পর্যন্ত।

বর্তমান সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নে এ রাজ্যটির রাজধানী ছিল। বর্তমান জৈন্তা বাস স্ট্যান্ডের কাছে পাশে যে বাড়ীটি রয়েছে অনেকে তাকে রাজবাড়ী বলে ভূল করেন। আসলে তা জৈন্তেশ্বরী বাড়ী। বাড়িটি মূলতঃ সিন্টেং বা জৈন্তা রাজাদের পূজিত দেবতার বাড়ী । জৈন্তার রাজা যশোমানিক ১৬১৮ সালে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত কালি মূর্তিকে এ বাড়ীতে স্থাপন করেন এবং বাড়িটি নির্মাণ করেন। এর আশপাশে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জৈন্তারাজ্য ও রাজপরিবারের অনেক স্মৃতি।
জৈন্তারাজ্যের ইতিহাস

ঠিক কবে জৈন্তারাজদের রাজত্ব শুরু হয়েছিল তা নিশ্চিত করে কোনো ঐতিহাসিকই জানাতে পারেননি। তবে এ রাজ্যের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাচীন মহাকাব্য ও পৌরাণিক কাহিনীতে। সপ্তম থেকে অষ্টম শতকে কামরুপ রাজ্যের অধীনে ছিল জৈন্তাপুর। চন্দ্র ও বর্মণ রাজাদের পতনের পর দেব বংশের রাজত্ব শুরু হয় এতদঞ্চলে। এই বংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন জয়ন্ত রায়। তার এক মেয়ের নাম ছিল জয়ন্তি। ঐতিহাসিকদের ধারণা, রাজকুমারী জয়ন্তির নামানুসারেই এই রাজ্যের নামকরণ করা হয় জৈন্তাপুর।
যা দেখবেন
জৈন্তাপুর বাজারটিই গড়ে উঠেছে জৈন্তেশ্বরী বাড়ীর বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে। তবে এখনো পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে সেকালের অনেক গৌরবময় ঐতিহ্য। পাশাপাশি যে কারণে রাজ্যটির কুখ্যাতি, সেই নরবলির বেদী ও লাশ ফেলার কূপও আছে বাড়িটির ভেতরে। ঐতিহাসিকদের মতে, স্বাধীনচেতা জৈন্তারাজারা সেকালে বড় বড় অপরাধীদের ধরে এনে শাস্তি হিসেবে এই বেদীতে বলি দিতেন। কখনো বা দেবতাদের উদ্দেশ্যেও নরবলি দেওয়া হতো। সেক্ষেত্রে বলির ‘নর’ হতো প্রতিবেশী রাজ্য থেকে এ রাজ্যে ঢুকে পড়া কোনো হতভাগ্য। তেমনি এক বলির ঘটনায় রাজ্যটির হাজার বছরের স্বাধীন অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছিল ১৮৩২ সালে। তিন ব্রিটিশ বণিককে ধরে নিয়ে বলি দিয়েছিলেন তৎকালীন রাজা। ব্যাস। ক্ষেপে যায় ব্রিটিশরা। তারা দীর্ঘ পরিকল্পনা শেষে রাজ্যটি আক্রমণ করে। একপর্যায়ে রাজ্যটির স্বাধীন সূর্য অস্তমিত হয়। রাজা পরিণত হন মাসিক ৫০০ টাকা বেতনের এক সামান্য জমিদারে। বাড়িটির বাইরের উঁচু দেয়ালটি সেকালে ভারতের রাজস্থান থেকে আমদানি করা ইট দিয়ে তৈরি বলেও উল্লেখ করেছেন কোনোকোনো ঐতিহাসিক। তার গায়ে আঁকা তেজোদীপ্ত এক তরুণের অসাধারণ চিত্রকর্ম এখনো তাদের স্বাধীনচেতা মনোভাবের ঐতিহ্য বহন করছে। আছে দুর্লভ মেগালিথ পাথর যা মৃত রাজ -রানীদের স্মৃতি হিসেবে বসানো হয়েছিল, রাজা-রানি বা রাজকর্মচারীদের বসার স্থান, বাজারের ডান দিকের গলি দিয়ে একটু অগ্রসর হলেই পাওয়া যাবে বিশাল পুকুর। পুকুরটি উত্তর পাড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি মন্দিরের অংশবিশেষ ও তোরণ এখনো টিকে আছে। তার সামনেই আছে জৈন্তাপুরের বিশাল খেলার মাঠ। এখানে বসে উপভোগ করতে পারেন ওপারে ভারতীয় অংশের বিশাল খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের সৌন্দর্য। মাঠের পূর্বদিকের উঁচু টিলায় রয়েছে মন্দির ও মাদ্রাসার সহাবস্থান, যদিও মন্দিরটি এখন পরিত্যক্ত। কেউ আর সেখানে পুজো দেয় না।

যেভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার সায়দাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে সিলেটগামী বিলাসবহুল বাসে বা কমলাপুর থেকে ট্রেনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কদমতলীতে পৌঁছাতে পারেন। খরচ পড়বে ৫০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে। আর সিলেট শহর থেকে জৈন্তাপুর  যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। সিএনজি চালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে গেলে খরচ পড়বে সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। যেতে পারেন সোবহানীঘাট থেকে গেইটলক বাসেও। সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ট্রেনে সিলেট পৌঁছাতে খরচ পড়বে সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। বিমানে সিলেট পৌঁছাতে পারেন।
যেখানে থাকবেন
সিলেট মহানগরীর জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার-দরগাগেইট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল আছে। আছে কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেলও। সাধারণ মানের হোটেলে প্রতিদিন থাকার খরচ পড়বে ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১২ জুন ২০১৯/এক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.