আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং
ওমর ফারুক নাঈম, মৌলভীবাজার :: “আমি ও আমার সহপাঠীরা মহিলা কলেজে পড়ি। আমরা রাজনগর থেকে প্রতিদিন কলেজে আসি। সে ক্ষেত্রে চাঁদনীঘাট ব্রিজ হয়েই আমাদের আসতে হয়। আমরা বাড়ি থেকে যখন চাঁদনীঘাট এসে সিএনজি করে নামি। তখন অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাইভারদের কাছ থেকে ইভটিজিং-অশ্লীল কথাবার্তার শিকার হতে হয়। অনেক ড্রাইভার আমাদের শরীরের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করার চেষ্টা করেন। কিছু বখাটে যুবক এভাবেই আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। কিছু ড্রাইভার গাড়ি ভাড়া দিতে গেলে বলে আপনার ভাড়া লাগবে না। আপনার ফোন নম্বর দেন। আপনাকে আমার ভালো লাগে। অনেক সময় চাঁদনীঘাট হয়ে হেঁটে কলেজে যেতে হয়। তখন মাঝে-মধ্যে আরো বড় বড় পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। পৌরসভার পাশে যে কারস্ট্যান্ড সেখানের ছেলেরাও আমাদের সঙ্গে একই আচরণ করে। শুধু আমাদের কলেজপড়ুয়া সব মেয়েরই একই অভিযোগ। সামনে আমাদের পরীক্ষার সময় (২টা-৫টা) সেক্ষেত্রে আমাদের বাড়ি পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আমাদের নিরাপত্তা আছে কি? মেয়ে বলে কি আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই? আমরাতো বোরকা পরে বের হই। তাহলে কেন আমাদের প্রতিদিন ভয় নিয়ে যাত্রা করতে হয়। আমরা সামাজিক, শারীরিক, মানসিক অত্যাচারের শিকার। আমাদের সাহায্য করুন। মুরব্বিরা দেখেন কিন্তু তারা এড়িয়ে যান। আমরা কি পড়াশোনা বন্ধ করে দেবো?
এভাবে মৌলভীবাজার মহিলা কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী তার প্রতিদিন লাঞ্চিত হওয়ার বর্ণনা দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মৌলভীবাজারে অসহনীয় মাত্রায় বেড়েছে বখাটেপনা। এতে অতীষ্ঠ ছাত্রীরা। তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যম ফেইবুকে। চাঁদনীঘাটে ৪টি উপজেলার মানুষের জেলা শহরের সঙ্গে পরিবহনে যোগাযোগ ওখান থেকেই।
বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা (সিএনজি) ও টমটম এর স্ট্যান্ড ওখানেই। মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের উপরেই তাদের স্ট্যান্ড। চাঁদনীঘাট ব্রিজের উত্তর পাশ থেকে শুরু হয়ে প্রায় অর্ধকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবৈধ এই গাড়ি স্ট্যান্ড। কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও রাজনগরের মানুষের নির্দিষ্ট গন্তব্যে আসা-যাওয়া এখানে।
মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে মেয়েরা। বিশেষ করে কয়েকটি সিএনজি স্টেন্ডে ড্রাইভাররা নানা কৌশলে স্কুল-কলেজ গামী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগের শেষ নেই। এমন যৌন হয়রানি চলভে প্রতিনিয়ত। গাড়ির স্ট্যান্ড গুলো যেন ইভটিজিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। সবসময়ই মেয়েরা এই পয়েন্টগুলো পাড়ি দেন চরম আতঙ্কে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার চাঁদনীঘাট গাড়ি স্ট্যান্ড। এই স্থানটি নিয়ে মেয়েদের অভিযোগের যেমন শেষ নেই তেমনি ইভটিজিং এর ঘটনারও শেষ নেই। প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে চলে ওদের এমন বখাটেপনা। কিন্তু কাউকে প্রতিবাদী হতে দেখা যায় না। মাঝে-মধ্যে দুই একটা ঘটনার মিটমাট হয়। তারপর আবার যেই সেই।
সচেতন নাগরীকদের অভিযোগ- লোকলজ্জার ভয়ে নীরবে সহ্য করেন ওই সকল শিক্ষার্থীরা। পরিবার, সহপাঠী কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সবস্থানেই অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার হচ্ছে না।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, শাহ মোস্তফা কলেজ, কাশিনাথ আলাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইম্পিরিয়াল কলেজ, হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ্ হেলাল উচ্চবিদ্যালয় ও মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা এ পথেই যাওয়া আসা করেন। তাদের আসা-যাওয়ার সময় চাঁদনীঘাট গাড়িস্ট্যান্ড এলাকায় শিকার হতে হয় চরম বখাটেপনার। ওদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়ে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয় শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ অনুযায়ী শহরের এই ইভটিজিং স্পটগুলো হলো- পৌরসভা ও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের পূর্বপাশের গাড়িস্ট্যান্ড, শিল্পকলা একাডেমির সামনের গাড়িস্ট্যান্ড, শমশেরনগর রোডের সিএনজি গাড়িস্ট্যান্ড, কুসুমবাগ চৌমুহনার পশ্চিম পাশের গাড়িস্ট্যান্ড।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, অনেক গাড়িচালক ও তাদের সহযোগীদের এমন অশ্লীলতা, বখাটেপনা ও ইভটিজিংয়ের কারণে আমাদের এলাকার দুর্নাম হচ্ছে। তাদের এমন যন্ত্রণায় আমরা অতীষ্ঠ। ওই বখাটেপনা বন্ধ করতে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কুলাউড়া বাস-মিনিবাস সমিতির নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ রোপন বলেন, গত কয়েকদিন আগেই একটি মেয়ে সাহস করে আমাদের কাছে এসেছিলো। আমরা সাথে সাথেই অপরাধি কে ডেকে এনে বেধেঁ মারধর করি। তার অপরাধ ছিলো মেয়েটার গায়ে হাত দেওয়া তার সাথে অশ্লিল ভাষায় কথা বলা। এভাবেই আমরা সাথে সাথেই প্রতিটা পদক্ষেপ নেই।
জেলা যৌন হয়রানি নির্মূল নেটওয়ার্ক মৌলভীবাজার-এর আহবায়ক ও হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম জানান, যারা এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা আমাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আমাদেরও ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। অবশ্য যারা অভিযোগ দেবে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। ইভটিজিং প্রতিরোধে সকলের সচেতনতার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। তারপরও যেহেতু স্থানগুলোতে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ উঠছে তাই এখন থেকে এই স্থানগুলোর প্রতি আমাদের আরো বাড়তি নজরদারি থাকবে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ জুলাই ২০১৯/ওএফএন/এসডি