Sylhet View 24 PRINT

কমলগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ পাত্রখোলা চা বাগানের কবরস্থান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১২ ১৮:০৭:১৬

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী মাধবপুর ইউনিয়নের ন্যাশনাল টি কোম্পানীর (এনটিসি) মালিকানাধীন পাত্রখোলা চা বাগানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করে উৎসব হিসেবে সবাই মিলে মিশে আনন্দ উপভোগ করছেন।

এ কথাটির যথার্থই প্রমাণ মেলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে একই স্থানে রয়েছে হিন্দুদের শ্মশান, মুসলিমদের কবরস্থান ও খ্রিস্টানদের সমাধিস্থল। তাই এ শ্লোগানটি বাস্তবায়িত হলো ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুদূর ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ৮ দশমিক ৯৮ একর ভূমিকে প্রথম অংশে শ্মশান, দ্বিতীয় অংশে খ্রিস্টানদের জন্য সমাধিস্থল ও সবশেষে মুসলমানদের জন্য কবরস্থান করে তিন ভাগে দিয়ে একি সাথে তিন স্থানটি রয়েছে উন্মুক্ত। এই তিন স্থানের কোথাও নেই সীমানা প্রাচীর। তাই এ এলাকায় কবরস্থান, শ্মশানঘাট ও সমাধিস্থলে তিন ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে স্ব স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও কোন বাকবিতন্ডা হয়নি আজও। শালীনতা বজায় রেখেই একইস্থানে দীর্ঘদিন ধরে মৃত ব্যাক্তিদের সৎকার করছেন এ তিন ধর্মের মানুষজন। ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশরা পাত্রখোলা চা বাগান প্রতিষ্ঠা করে। এ চা বাগানের সকল ধর্মের শ্রমিক পরিবার ও কর্মচারীদের সৎকারের জন্য এখানে ৮.৯৮একর (১৫ বিঘা) জমি বরাদ্ধ করেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। জমি বরাদ্ধের পর সেটিকে তিন ভাগ করে মুসলমানদের কবরস্থান, হিন্দুদের শ্মশান ও খ্রিস্টানদের সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এখানে তিন সম্প্রদায়ের মরদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুসারে করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একই সমাজে নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করলেও মৃত্যুর পর তাদের জন্য আলাদা আলাদা সমাধির ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এখানে সব ধর্মের মানুষের মাঝে সৌহার্দ্যরে দৃষ্টান্ত হিসেবেই এই সমাধিস্থলটি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে পাত্রখোলা চা বাগানে জন সংখ্যায় মুসলমান প্রায় সাড়ে ৪ হাজার, হিন্দু প্রায় ৮ জাজার ও খ্রিস্টানদের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার সব মিলে ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। নামাজের জন্য মুসলমানদের মসজিদ ও ঈতগাহ রয়েছে। পূজার জন্য হিন্দুদের রয়েছে মন্দির আর খ্রিস্টানদের জন্য রয়েছে গীর্জা। এখানে ধর্ম নিয়ে নেই কোন হানাহানি মতবিরোধ। এখানে পারস্পারিক সহযোগিতায় ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষরা। ফলে এই স্থানটি দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

এ ব্যাপারে পাত্রখোলা চা বাগান সার্বজনীন মন্দিরের পুরোহিত রাজেশ প্রসাদ শর্মা, পাত্রখোলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল আজিজ ও পাত্রখোলা চা বাগান গীর্জার ধর্ম যাজক যোসেফ বিশ্বাস বলেন, এখানে একই স্থানে মুসলমানদের কবরস্থান, হিন্দুদের শ্মশাঘাট ও খ্রিস্টানদের সমাধিস্থল রয়েছে। এ জমির সামনের একটি অংশে সামান্য সীমানা প্রাচীর থাকলে উন্মুক্ত রয়েছে বাকি অংশ।

তারা আরও বলেন, এখানে তিন সম্প্রদায়ের মরদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ীই দাফন কিংবা সৎকার করা হয়ে থাকে। দীর্ঘকাল ধরে এখানের লোকদের মাঝে কোন হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া-বিবাদ নেই। একসাথেই যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনটা কাটাতে পারেন। মৃত্যুর পরেও তারা একসাথেই সম্প্রীতির বন্ধনে থাকবে বলে তারা বিশ্বাস করছেন।

এ ব্যাপারে পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, পাত্রখোলা চা বাগান প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এ জমি বরাদ্ধ করা হয় মৃত্যুর পর সকল ধর্মের মানুষে এ জমি ব্যবহার করতে পারে। সব ধর্মের মানুষের মাঝে সৌহার্দ্যরে দৃষ্টান্ত হিসেবেই এই সমাধিস্থলটি গড়ে উঠার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে পাত্রখোলা চা বাগানে তিনি মনে করছেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ জুলাই ২০১৯/জেএ/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.