আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সিলেটে প্রাসাদসম বাড়ী করেন সেই শামীম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১৭ ১২:১০:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস :: ফার ইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (এফআইসিএল) নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় প্রাসাদসম বাড়ী নির্মাণ করেছেন শামীম কবির।

শুধু সিলেটেই নয়, আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে তার নিজ গ্রামও প্রাসাদসম বাড়ী নির্মাণ করেছে। এছাড়াও চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানা, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্লট, ফ্লাটসহ বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

তিনি জানান, শামীম কবির ফার ইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ মোট ২৮টি মামলা রয়েছে। তিনি চার বছর থেকে পলাতক ছিলেন। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৯ জুলাই সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালের জুন মাসে কুমিল্লা জেলা সমবায় কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন দেয়া হয়। যার নিবন্ধন নং- ১৫১/৩। নিবন্ধন পাওয়ার পর শামীম কবির ও তার নিকট আত্মীয়সহ স্থানীয় কিছু যুবকদের নিয়ে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট বাজারে একটি কার্যালয় খুলে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ওই সমিতিটি মুন্সিরহাট অফিসের নিবন্ধন সংশোধন করে থানা থেকে জেলা পর্যায়ে এবং পরে চট্টগ্রাম বিভাগের অনুমোদন নিয়ে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন জায়গায় শাখা অফিসের অনুমোদন নেয়।

সিআইডি ওই কর্মকর্তা জানান, শামীম ইসলাম ধর্মকে পুঁজি করে ধর্মভীরু ও স্বল্প শিক্ষিত লোকজনদেরকে তার অফিসে আমন্ত্রণ জানায়। অফিসে আসার পর পবিত্র কোরান শরীফসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বাণী শুনিয়ে টাকা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। এক পর্যায়ে পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ মাহফিল করে নিজেকে ধর্মের বরপুত্র হিসেবে দাবি করে শামীম।

ফার ইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছে জানিয়ে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকৃত এক লাখ টাকায় মাসে ২ হাজার টাকা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে মুনাফা দেয়ার আশ্বাস দেয়। এ অনুসারে সে লিফলেট প্রচার এবং পত্র পত্রিকায় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে।

তিনি জানান, শুরুর দিকে ওয়াদা অনুযায়ী মুনাফা দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে। কিন্তু কয়েক বছর লাভজনক মুনাফা পেয়ে সাধারণ মানুষ নিজের বহু কষ্টে অর্জিত টাকা ফার ইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে জমা রাখতো। বেশী মুনাফার আশায় কেউ কেউ অন্য জায়গা থেকে টাকা ঋণ নিয়ে বা জমি বিক্রি করে সমিতিতে টাকা রাখতো। আবার সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীরা তাদের পেনশনের টাকা বাসায় না নিয়ে জমাকৃত টাকা দ্বিগুণ তিনগুণ করার জন্য সেই সমিতিতে জমা রাখে।

এক পর্যায়ে এক এক করে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৫টি অফিস খুলে শামীম। সেই অফিসগুলো থেকেও আমানত সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করে। ওইসব অফিস থেকে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক সংগ্রহ করে। শুধু তাই নয়, তাদের কাছ থেকে তিনশত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। পরবর্তীতে ২০১৩-১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়ে সে কৌশলে আত্মগোপন করে। এক পর্যায়ে শামীম মালয়েশিয়ায় চলে গেছে বলে প্রচার করতে থাকে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ জুলাই ২০১৯/কেআরএস/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন