আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটে উন্নয়ন কাজ নিয়ে চেম্বার ও সিসিক মুখোমুখি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১৮ ০০:২৬:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বর্ষামৌসুমে সিলেট নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে সিটি করপোরেশন ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। উন্নয়ন ও দুর্ভোগ নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি। ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের অসুবিধার কথা চিন্তা না করে উন্নয়নের নামে নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে খুড়োখুড়ি ও ভাঙাগড়া চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট চেম্বারের প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

অন্যদিকে, মেয়রের দাবি যারা সিলেটের ভালো চান না তারাই উন্নয়নের বিরোধিতা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। আর উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসীকে ধৈর্য্য ধরার পাশাপাশি দুর্ভোগ লাঘবে চলমান কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জিন্দাবাজার-বারুতখানা সড়কের উভয়পাশে চলছে রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। অন্যদিকে আম্বরখানা থেকে বন্দরবাজার পর্যন্ত রাস্তায় চলছে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার টানার কাজ। প্রায় চারমাস ধরে ব্যস্ততম এই সড়কগুলোতে কাজ চলছে। কাজের ধীরগতির কারণে একদিকে যেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন রাস্তার পাশের ব্যবসায়ীরা অন্যদিকে পথচারীদেরও পোহাতে হচ্ছে মারাত্মক দুর্ভোগ।

এ অবস্থায় গত সোমবার গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠান সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ। বিবৃতিতে তিনি চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডকে অপরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে খোঁড়াখুড়ি চলায় নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উন্নয়ন কাজের ধীরগতির কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

তিনি বলেন, নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র হচ্ছে জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা ও জেলরোডসহ আশপাশের এলাকা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকার রাস্তায় খোড়াখুড়ি এবং নির্মাণসামগ্রী রাখায় অর্ধেকের বেশী রাস্তাই জনগণের ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে একদিকে সৃষ্টি হয় তীব্র জানযট, আরেকদিকে ক্ষতির সম্মুখিন হন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ঠিকাদাররা তাদের খেয়ালখুশি মতো কাজ করলেও নগর কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। সিটি করপোরেশন দিন দিন স্বেচ্ছাচারি ও একক আধিপত্যের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আগামী একমাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও যেসব বাসা-বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভাঙা হয়েছে সেগুলো পুন:নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

এদিকে, দুপুরে চেম্বার প্রশাসক গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানোর পরই সন্ধ্যায় পাল্টা বিবৃতি পাঠান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওই বিবৃতিতে তিনি বর্ষা মৌসুমে উন্নয়ন কাজের জন্য কিছুটা দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় নগরবাসীর কাছে দু:খ প্রকাশ করে বলেন, নগরবাসীর সহযোগিতায় ছড়া-খাল উদ্ধার ও সংস্কার কাজ করতে পারায় জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে এসেছে। রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ সমাপ্ত হলে যানজটেরও অভিশাপমুক্ত হবে সিলেট নগরী।

মেয়র বলেন, পর্যটকবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও একটি বাসযোগ্য নগরী গড়তে সিটি করপোরেশন নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এই বর্ষামৌসুমেও রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলমান রাখা হয়েছে। এতে সাময়িক দুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও কাজ সম্পুর্ণ হওয়ার পর নগরবাসী তাদের কাঙ্খিত সুফল পাবেন। আসাদ উদ্দিনকে ইঙ্গিত করে মেয়র আরিফ বলেন, সিটি করপোরেশনের এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা একটি মহল দেখেও না দেখার ভান করছেন। মূলত এই মহলটি সিলেটের উন্নয়নই চান না। তারা নানা অজুহাতে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র করছেন।

বর্ষামৌসুমে উন্নয়ন কাজের ধীরগতি ও দুর্ভোগ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, সিটি মেয়র ও চেম্বার প্রশাসক দু’জনের বক্তব্যেই যুক্তি আছে। নগরীর উন্নয়ন কাজ যে ধীরগতিতে চলছে তা অস্বীকার করার নয়। আবার উন্নয়নের জন্য কিছুটা দুর্ভোগও নগরবাসীকে মেনে নিতে হবে। তবে বর্ষার সুযোগে ঠিকাদাররা যাতে কাজে দুর্নীতি করতে না পারেন সেদিকে নগর কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিক সময়ে উন্নয়ন কাজ শেষ হলে বর্ষায় এতো দুর্ভোগ হতো না, চেম্বার প্রশাসকও প্রশ্ন তুলতে পারতেন না। এ ব্যাপারে আগামীতে মেয়র আরও মনযোগী হবেন বলে আমরা আশাবাদী।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, ভবিষ্যত সুফলের জন্য নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ মেনে নেয়া উচিত। তবে মান বজায় রেখে যাতে দ্রুত কাজ শেষ করা যায় এ ব্যাপারে মেয়রকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ জুলাই ২০১৯/শাদিআচৌ/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন