আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটজুড়ে কল্লা-কাটরার গুজব, আতংক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-২৪ ০০:২০:০৫

এনামুল কবীর :: স্কুলে বাচ্চাকে পাঠিয়ে অশান্তিতে অভিভাবক। এমনকি বয়স্করা বাড়ির বাইরে থাকলেও আতংক, অমুক কোথায়? কখন গেছেন? আসছেন না কেন? খুঁজে দেখো।

গত কয়েকদিন থেকে সিলেটজুড়ে বিরাজ করছে এমন আতংক। শুধু কি সিলেট? নেত্রকোনায় রবিনকান্ডের পর সম্ভবতঃ সারাদেশ জুড়েই সাধারণ মানুষ এমন আতংকে।

এই আতংক থেকে ঘটছে নানা অঘটন। ছেলেধরা বা কল্লা-কাটরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হচ্ছে নিরীহ লোকজন। এদের মধ্যে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।

সোমবার (২২ জুলাই) বিকেলের দিকে বিয়ানীবাজারের আছিরগঞ্জ বাজার থেক একজন স্বাস্থ্যকর্মিকে নিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা রওয়ানা হয় গোলাপগঞ্জের চন্দরপুরের উদ্দেশ্যে। পথে অটোটি বাঁক নিতে গতি কিছুটা কমানোর সাথেসাথে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়েন ঐ স্বাস্থ্যকর্মি। ছেলে ধরা বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে আশ-পাশের লোকজন ছুটে এসে চালককে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে একজন চালককে চিনতে পারেন। তার বাড়ি গোলাপগঞ্জের বুধবারীবাজার ইউনিয়নের কালিজুরি গ্রামে। পরে চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রবিবার (২১ জুলাই) রাতে গোলাপগঞ্জের বাগলায় বাড়িতে ছেলে ধরা ঢুকেছে, এমন সন্দেহে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন এক গৃহকর্তা। দ্রুত আশ-পাশের লোকজন ছুটে এসে গণপিটুনি শুরুর পর আবিষ্কার করেন লোকটি পাশের বাড়ির অতিথি। অন্ধকারে ভূল করে ঐ বাড়িতে প্রবেশ করেছেন।

গত শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার শাহবাজপুরে ছেলেধরা সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয় জনসাধারণ। প্রায় প্রতিদিন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন একাধিক ঘটনার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।

এরআগে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এধরণের গুজবের কারণে গণপিটুনিতে বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

ছেলেধরা আতংকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অবস্থা খুবই খারাপ। বাচ্চাকে স্কুলে বা কলেজে পাঠিয়ে তারা চরম হতাশায় ভুগছেন। না জানি ছেলে ধরা পায় কি-না! উদ্বেগ উৎকন্ঠার পাশাপাশি তারা বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও গ্রহন করছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন হয়ে উঠছে প্রশাসনের লোকজনজনও। কানাইঘাট থানা পুলিশের উদ্যোগে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, অন্যান্য থানায়ও অনুরূপ কার্যক্রম শুরু হবে খুব তাড়াতাড়ি।

এদিকে সারাদেশে প্রায় ৬১ লাখ আনসার সদস্যও প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ। তারা গ্রাম পর্যায়ে পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে বলে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা প্রতিরোধে প্রচারণা চালাবেন।

তবে সচেতন মহল মনে করছেন, শুধু আনসার বাহিনীকে দিয়ে প্রচারণা চালালে হবেনা। গ্রাম পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতা, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে মাঠে নামতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই আতংক ও ভিতি থেকে সিলেটবাসীসহ দেশের মানুষকে মুক্ত করা সম্ভব হতে পারে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৪ জুলাই ২০১৯/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন