আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জগদীশ-আজাদকে তাড়িয়ে বেড়ায় সেই বিভীষিকা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২১ ০০:০৮:৫৮

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :: দিনটি ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। সেই সমাবেশ শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে দেশে এর আগে এতো ভয়ানক হামলার ঘটনা ঘটেনি। সেই গ্রেনেড হামলার বিভীষিকাময় স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন সিলেটের দুই রাজনীতিবিদ সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাশ এবং কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ।

২০০৪ সালে ঢাকার ওই সমাবেশে সিলেট থেকে যোগ দিয়েছিলেন জেলা যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। হামলায় তারা অক্ষত থাকলেও সেদিনকার বিভীষিকা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় তাদেরকে।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শেখ হাসিনার ওই সমাবেশে দুপুর থেকেই বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের ভিড়। বিকাল গড়ানোর আগেই হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে সমাবেশে।

জগদীশ চন্দ্র দাশ ও আজাদুর রহমান আজাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে আগের দিন সিলেট থেকে ঢাকায় যান জগদীশ ও আজাদ। সমাবেশের দিন বিকাল ৪টার দিকে অবস্থান নেয় যুবলীগ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে পৌঁছুলে তাঁকে মিছিল সহকারে বরণ করেন যুবলীগ নেতাকর্মীরা। মিছিলের প্রথম দিকেই ছিলেন জগদীশ ও আজাদ।

সমাবেশে শেখ হাসিনা নিজের বক্তব্যে সিলেটে গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার (২০০৪ সালের ৭ আগস্ট ওই হামলা হয়) বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নাম উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তাঁর বক্তব্যে একপর্যায়েই সমাবেশস্থলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এরপর বিস্ফোরিত হয় আরো তিনটি গ্রেনেড। পুরো সমাবেশস্থল তখন আতঙ্কিত, বিস্মিত, হতবাক; চারদিকে রক্ত আর রক্ত।

হামলার পর মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। ছত্রভঙ্গ মানুষ যে যেদিকে পারেন, দৌড়ে আত্মরক্ষা করেন। হামলা থেকে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে মানবপ্রাচীর গড়ে তুলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। মানবপ্রাচীরের পাশেই ছিলেন জগদীশ আর আজাদ।

ভয়ঙ্কর হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েন জগদীশ চন্দ্র দাশ ও আজাদুর রহমান আজাদ। লাশের সারি আর অসংখ্য নেতাকর্মীর রক্তাক্ত আর্তনাদ দেখে কি করবেন, বুঝে ওঠতে পারছিলেন না তারা। যখন কিছুটা স্থিতি ফিরে তাদের মধ্যে, তখন নিজেদেরকে রক্তে রঞ্জিত অবস্থায় দেখেন তারা। তবে ভাগ্যক্রমে ওই হামলায় তারা আহত হননি, আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে গিয়েই তাদের কাপড় রক্তে লাল হয়ে যায়।

জগদীশ চন্দ্র দাশ ও আজাদুর রহমান আজাদের তথ্যানুসারে, পরবর্তীতে তারা দুজনই আহত-নিহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু হাসপাতালে কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন না। গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের চিকিৎসা যাতে না হয়, সেজন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা কোনো রকমে চিকিৎসা চালিয়ে যান। ওই সময় এগিয়ে আসেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের চিকিৎসকরা। গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত আইভি রহমান ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে দেখতেও যান সিলেটের এই দুই নেতা।

এছাড়া গ্রেনেড হামলায় আহত দু’জনকে জগদীশ ও আজাদ দুই ব্যাগ রক্ত প্রদান করেন।

সেদিনকার সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও আঁতকে তুলে জগদীশ চন্দ্র দাশ ও আজাদুর রহমান আজাদকে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এমন নৃশংস হামলা আর কখনোই বাংলাদেশে ঘটবে না, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ আগস্ট ২০১৯/শাদিআচৌ/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন