আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

লন্ডন থেকে পোকা এলো বিশ্বনাথে!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-০৯ ০০:১৩:৪০

প্রনঞ্জয় বৈদ্য অপু, বিশ্বনাথ :: কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খামার স্থাপনের লক্ষ্যে কম মূল্যে পাখি-মুরগীর খাবারের ব্যবস্থা করতেই যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর থেকে মা পোকা এনে সিলেটের বিশ্বনাথে ‘প্যারেট পোকা (ব্ল্যাক শোল্ডার ফ্লাই)’র চাষ শুরু করেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী। নিজ বাড়ির পাশেই স্থাপন করেছেন ‘হাজী বায়োসাইকেল কোম্পানী’ নামের প্যারেট পোকার এই খামারটি। কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর জন্য অন্যতম পুষ্টিকর খাবার হচ্ছে প্যারেট পোকা। আর খলিলুরের লক্ষ্য প্যারেট পোকা খেয়ে ভবিষ্যতে করা তার নিজস্ব খামারে বড় হওয়া কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীও মানুষের জন্য অন্যতম এক পুষ্টিকর খাবারে পরিণত হবে।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান উপজেলা খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের মৃত আশরাফুর রহমানের ছেলে। এ ধরনের পোকা চাষের ক্ষেত্রে খলিলুরের খামারটিই হচ্ছে বিশ্বনাথ উপজেলার প্রথম খামার। নিজের দেশপ্রেম থেকেই খামারটি স্থাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন খলিলুর। বর্তমান সময়ের তুলনায় কম খরচে মানুষের চাহিদা পূরণে কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খামার স্থাপন করাই হচ্ছে প্রবাসী খলিলুরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

জানা গেছে, বর্তমান সময়ে কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খাবারে অনেক দাম থাকায়, নিজ পিতৃভূমি বিশ্বনাথে কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খামার স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান প্রথমে চিন্তা করেন কিভাবে কম খরছে কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খাবার সংগ্রহ করা যায়। ওই চিন্তা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ‘প্যারেট পোকা’ চাষের জন্য খামার করার। যাতে কম খরছে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। এজন্যই তিনি যুক্তরাজ্যের একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় দেড় শত পোকা) পোকা সংগ্রহ করেন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর গত ২৬ জুন থেকে নিজের বাড়ির পাশে একটি খামার তৈরী করে প্যারেট পোকার চাষ শুরু করেন।

একটি টিনশেডের ঘরে ৫টি মশারি দিয়ে সুন্দর করে ৫টি খাঁচা তৈরী করে এগুলোর মধ্যেই প্যারেট পোকার চাষ শুরু করেছেন প্রবাসী খলিলুর রহমান। আর বিভিন্ন ধরনের পরিত্যক্ত ও পঁচা খাবারই হচ্ছে প্যারেট পোকার খাদ্য। পরিত্যক্ত ও পঁচা খাবার খেয়ে বড় হলেও ওই প্যারেট পোকাই হচ্ছে কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর অন্যতম পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ প্যারেট পোকায় রয়েছে প্রায় ৪০% প্রোটিন ও ২০% ফ্যাট।

খামারের উদ্যোগক্তা প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, একটি স্ত্রী পোকা ৫শত থেকে ৬শত ডিম পাড়তে পারে। ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। আর জন্মের ২১ দিন পর এসব প্যারেট পোকা পরিপূর্ণ হয় এবং তা কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেওয়ার উপযুক্ত হয়। তবে ডিম দেওয়ার পরই ওই মা পোকা মারা যায়। সঠিক ভাবে চাষ করতে পারলে যে কেউ একটি লাভজনক খামার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। চাষের জন্য প্রতি কেজি ১২ হাজার টাকা দামে এবং কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খাবারের জন্য ৩৫/৪০ টাকা দামে প্রতি কেজি প্যারেট পোকা বিক্রয় করা সম্ভব।

খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস্ ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা যায় জানিয়ে প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যেই ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করে ছিলেন তিনি। আর বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার পোকা রয়েছে। প্যারেট পোকা চাষের প্রক্রিয়াটি লাভজনক হওয়াতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরোও বড় খামার তৈরীর পরিকল্পনা আছে তার।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯/প্রনঞ্জয়/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন