আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটের সেই চার জঙ্গির একজন কুয়েটের ছাত্র!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-১০ ০০:০৪:০৮

রফিকুল ইসলাম কামাল :: বাংলাদেশে স্মরণকালের সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয় সিলেটে, ২০১৭ সালে। দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িস্থ আতিয়া মহলে সেই অভিযান চলাকালে ঘরের ভেতর বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয় চার জঙ্গি। ওই সময়ে সেই চার জঙ্গির মধ্যে একজনের পরিচয় পেয়েছিল পুলিশ। বাকি তিন পুরুষ জঙ্গির পরিচয় ছিল অজ্ঞাত। এদের মধ্যে আরো একজনের পরিচয় জানা গেছে, যিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থী ছিলেন।

তামিম আহমদ ফারাজী নামের ওই জঙ্গি খুলনার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়াশোনা করতেন। তামিম ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার হসপিটাল রোড এলাকার আব্দুল বারী ফারাজীর ছেলে।

মূলত একটি নিখোঁজ জিডির সূত্র ধরেই তামিমের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় চার জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করে পুলিশ। ওই চার্জশিটে তামিমের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-এর পরিদর্শক আবুল হোসেন বিষয়টি সিলেটভিউকে নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, গত শনিবার এক হাজার ৬৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই চার্জশিটে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরা হলেন- আতিয়া মহলে নিহত মর্জিনার ভাই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উত্তর বাইশারী এলাকার জহিরুল হক জসিম (২৬) ও তার স্ত্রী আর্জিনা ওরফে রাজিয়া (১৯) এবং একই এলাকার কুলিয়ামুড়া গ্রামের হাসান (২৫)। এ তিনজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা, জঙ্গিদের অর্থায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালের মার্চে আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চার জঙ্গি নিহত হয়। ওই সময় পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষায় মর্জিনার পরিচয় নিশ্চিত হয়। বাকিদের পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আতিয়া মহলের ঘটনায় দায়েরকৃত তিনটি মামলা প্রথমে পুলিশ তদন্ত করে। পরে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিখোঁজ থাকার বিষয়টি জানতে পারেন।

জানা গেছে, তামিম আহমদ ফারাজী কুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন। তার খোঁজ নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পারে তিনি বাড়ির কারো সাথেও যোগাযোগ রাখছেন না। এরপর ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি কুয়েটের তৎকালীন উপাচার্যের নির্দেশনায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. সাদেক হোসেন প্রামাণিক খুলনার খানজাহান আলী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন। জিডির নাম্বার ছিল-২৭৯, ০৯/০১/২০১৭।

মূলত ওই জিডির সূত্র ধরেই এগোতে থাকেন তদন্ত কর্মকর্তা। একপর্যায়ে তিনি তামিম আহমদ ফারাজী নামের ওই ছাত্রের স্বজনদের ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান তিনি। পরীক্ষায় আতিয়া মহলে নিহত অপর তিন জঙ্গির একজনের সাথে ডিএনএ’র মিল পাওয়া যায়। এর মধ্য দিয়েই তামিমের পরিচয় নিশ্চিত হয় পিবিআই।

পিবিআই পরিদর্শক আবুল হোসেন সোমবার রাতে সিলেটভিউকে বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬(২)/৭(৩)/৮/৯(৩) ধারায় দাখিলকৃত চার্জশিটে মর্জিনা ও তামিমের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নিহত অপর দুই জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

প্রসঙ্গত, আতিয়া মহলে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোদের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের ওই অভিযান চলাকালে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের পাশেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এতে র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন প্রধান লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ ও দুই পুলিশ পরিদর্শকসহ নিহত হন ৭ জন। এ ঘটনায় এসএমপির মোগলাবাজার থানার তৎকালীন এসআই শিপলু দাস বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া আতিয়া মহল থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় থানার তৎকালীন এসআই সুহেল আহমদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া আতিয়া মহলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৪ জঙ্গি নিহতের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয় আরেকটি। আতিয়া মহলে পাঁচদিন অভিযান চালিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা।

পিবিআই পরিদর্শক আবুল হোসেন জানান, হত্যা ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনার মামলায় গত ১৪ জুলাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়। বোমা হামলায় নেতৃত্বদানকারী জঙ্গি মোশাররফ ও নাজিম মৌলভীবাজারের দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তির আবেদন জানানো হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন