Sylhet View 24 PRINT

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী পালন করেনি মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ

পরে সাজানো কর্মসূচি পালন, তদন্ত করছেন সদর উপজেলা ইউএনও

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-১২ ১৭:৫২:৩৭

সিলেট :: সিলেট নগরীর শামীমাবাদস্থ এমপিওভুক্ত মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ গত ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেনি। বিষয়টি জানাজানির পর সাজানো একটি কর্মসূচি পালন করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত করছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ করেছেন ওই কলেজের প্রভাষক (আপিলকারী) মো. মাহবুবুর রউফ।

বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি। মাহবুবুর রউফ আরো অভিযোগ করেন, কলেজের অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে গিয়াস তাকে প্রভাষক পদ থেকে বরখাস্ত করেন, তবে বিষয়টি এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুবুর রউফ বলেন, ‘‘১৫ই আগস্ট বাঙালি জাতির সবচেয়ে শোকের দিন। দিনটি বাংলাদেশে ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ দিবসে বাধ্যতামূলকভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি পালন করতে হয়। কিন্তু গত ১৫ই আগস্ট মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়নি। এমনকি শোক দিবসের কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে কমিটি গঠন কিংবা প্রস্তুতি সভাও হয়নি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত দিবসে কোনোও কর্মসূচি পালন না করার ঘটনা আমাকে এবং আমার কয়েকজন সহকর্মীকে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে। আমি ও আমার কয়েকজন সহকর্মী বিষয়টি কয়েকজন সাংবাদিক ভাইকে অবহিত করি। এরপর ‘শোক দিবস পালন করেনি মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ’ শীর্ষক সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।’’

তিনি বলেন, ‘কলেজে শোক দিবস পালন না করার সংবাদে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন সুলতানা এ বিষয়টি তদন্তের জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজকে লিখিত নির্দেশ দেন। তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর কলেজে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেন। তবে এখনও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। এদিকে কলেজে শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলে বিপাকে পড়েন কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি গত ১৮ আগস্ট তড়িগড়ি করে একটি ব্যানার বানিয়ে ৩/৪ জন জুনিয়র শিক্ষককে ডেকে এনে ভুয়া ও সাজানো কর্মসূচি পালন করেন। ওই কর্মসূচিতে কলেজের বাকি প্রায় ৫০ জন শিক্ষকই অনুপস্থিত ছিলেন। মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়নি এবং ১৮ই আগস্ট যে সাজানো ও ভুয়া কর্মসূচি পালন করা হয়, তা কলেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ওই সাজানো কর্মসূচিতে মোবাইল ফোনে তোলা ছবি পরীক্ষা করলেই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। ওই সাজানো ও ভুয়া কর্মসূচিতে কলেজে সিনিয়র অধ্যাপকবৃন্দসহ সিংহভাগ শিক্ষক এবং কোনো শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন না, তাও খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসবে। এর মধ্য দিয়ে প্রতিয়মান হয়, অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন নিজের আত্মরক্ষার্থে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচি নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। এটি বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও অবজ্ঞার শামিল।’

মাহবুবুর রউফ আরো বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি বিধি মোতাবেক মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে আমি ২০১৬ সালের ১ ফেব্র“য়ারি থেকে অনার্স কোর্সের নিয়মিত প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। কলেজের অনার্স শিক্ষকদেরকে মাসিক সম্মানিত ভাতা দেওয়া হতো ৫ হাজার টাকা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্তৃক ২০১৬ সালের ১ জুন প্রেরিত অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শতভাগ বেতন ভাতা ২২ হাজার টাকা প্রদানের প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পরপরই আমি অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনের নিকট শতভাগ বেতন ভাতা দেওয়ার দাবি জানাই। এরপর থেকে গিয়াস উদ্দিন আমাকে চাকরিচ্যুত করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কয়েক মাস পর কলেজ অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনের কিছু দুর্নীতি ও অনিয়ম আমার নজরে এলে আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অবহিত করি। অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো হলো- কলেজের অনার্স শিক্ষকদের যোগদান নিয়ে প্রতারণা, অনার্স শিক্ষকদের মাসিক বেতনের টাকা আত্মসাৎ, অনার্স প্যানেলভুক্ত সকল শিক্ষকদের যোগদান না করিয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ, গ্র্যাচুয়িটির নামে কলেজ ফান্ড থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গ করে একইসাথে মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ এবং মইন উদ্দিন সামসী স্কুল অব ক্রিয়েটিব লার্নিং এর অধ্যক্ষ (প্রতিষ্ঠাকালীন) হিসেবে কাজ করা, কলেজে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে বিলম্ব করা, কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ না করা প্রভৃতি।’

তিনি আরো বলেন, ‘অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার সন্তান সমতুল্য দ্বাদশ শ্রেণির ৮/১০ জন শিক্ষার্থীকে ভুল বুঝিয়ে আমার বিপক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দাঁড় করান। শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দেয়। দীর্ঘ কয়েক মাস ওই অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি অধ্যক্ষ। ওই অভিযোগ চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি গভর্নিং বডিতে এজেন্ডাভুক্ত না করেই আমাকে শোকজ ও সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে আমি লিখিতভাবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শোকজের জবাব দেই। জবাব পেয়ে অধ্যক্ষ আরো ক্ষিপ্ত হন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির শর্তাবলীর রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৫ আইন এবং তদন্ত কমিটি অমান্য করে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে ১৯ ফেব্রুয়ারি বরখাস্ত করেন। গত ৫ মার্চ অধ্যক্ষের ইস্যুকৃত বরখাস্তের চিঠি পেয়ে আমি এই অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ১৪ মার্চ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর আপিল করি। এরপর ২ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আমার আপিল মঞ্জুর করে ১৩ মে উভয়পক্ষের শুনানি করে। এ শুনানির পর এখন পর্যন্ত আপিলের কোনো চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়নি। আপিলের শুনানির রায় না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আমাকে বরখাস্তের বিষয়টির সুরাহা হয়নি। কিন্তু অধ্যক্ষ নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর আমাকে বরখাস্তের বিষয়ে সংবাদবিজ্ঞপ্তি দেন, যা অনৈতিক। মূলত শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করার তথ্য সংবাদমাধ্যমকে দেয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এই সংবাদবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

মাহবুবুর রউফ এসব বিষয়ে প্রশাসনকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখার আহবান জানান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/সিজেপ্রে/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.