Sylhet View 24 PRINT

সিলেটে দুই কারণে ভয়াবহ যানজট

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১০ ০০:০৮:০৬

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :: ‘সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার থেকে রিকশায় হুমায়ুন চত্বর যেতে লেগেছে প্রায় দেড় ঘন্টা। অথচ রিকশায় এ দূরত্ব পাড়ি দিতে বিশ-পঁচিশ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু ভয়াবহ যানজটের কারণে ঘন্টাখানেক সময় বেশি লেগেছে।’ নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্বরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত খন্দকার মকসুদ। ঢাকায় যাওয়ার বাস ধরতেই হুমায়ুন চত্বরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যানজটের কবলে পড়ে নির্ধারিত বাস ধরতে না পেরে হতাশাই ঝরছিল তাঁর চোখে-মুখে।

এই একজনই নয়, সিলেট নগরীর ভয়াবহ যানজটে এখন নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতাও যেন বাঁধ মানতে চাইছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট নগরীতে মূলত দুটি কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এর একটি ট্রাফিক এডুকেশন, অপরটি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

সিলেট নগরীর প্রধান কয়েকটি সমস্যার অন্যতম যানজট। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সকল সড়কে যানজট লেগেই থাকে। নগরীর কোর্টপয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার থেকে বারুতখানা হয়ে জেলরোড পেরিয়ে কুমারপাড়া পয়েন্ট, চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা, চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার ও মধুশহীদ পেরিয়ে মেডিকেল রোড, চৌহাট্টা থেকে মীরবক্সটুলা হয়ে নয়াসড়ক, আম্বরখানা থেকে সুবিদবাজার, আম্বরখানা থেকে চৌকিদেখী, জিন্দাবাজার থেকে জল্লারপাড় হয়ে লামাবাজার, লামাবাজার থেকে শেখঘাট, লামাবাজার থেকে রিকাবীবাজার প্রত্যেকটি সড়কে যানজনটের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিত্যদিনকার।

সিলেট নগর পুলিশের (এসএমপি) ট্রাফিক শাখায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন উপ-কমিশনার ফয়সাল মাহমুদ। এই অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তার মতে, সিলেট নগরীতে ট্রাফিক এডুকেশন ও ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের না থাকার কারণেই ভয়াবহ যানজট পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। সিলেটভিউয়ের সাথে আলাপকালে এ দুটি বিষয়ের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।

ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘ট্রাফিক এডুকেশনের বিষয়টি হচ্ছে ট্রাফিক সংক্রান্ত যতো নিয়মনীতি আছে, সেগুলো মেনে চলা। দ্রুতগতিতে গাড়ি না চালানো, ওভারটেকিং ও রং পার্কিং না করা, ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের হাঁটা এসব বিষয় ট্রাফিক এডুকেশনের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু সিলেট নগরীতে এ বিষয়গুলো কেউ মানতে চায় না। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করা হয়, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো হয়, ওভারটেকিং হয়। পথচারীরাও ফুটপাত দিয়ে না হেঁটে সড়ক দিয়ে চলেন।’

ফুটপাত দখল হয়ে থাকে, বাধ্য হয়ে পথচারীরা সড়ক দিয়ে হাঁটেন এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হলে এসএমপির এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে সচেতন হতে হবে। ফুটপাত হাঁটার জন্য। এখান দিয়ে আমি হাঁটবো। আমার এ অধিকার যাতে কেউ ক্ষুণœ করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক আইন অমান্য করায় প্রতি মাসে আমরা গড়ে পাঁচ হাজার মামলা দিচ্ছি। কিন্তু তারপরও মানুষের সচেতনতা বাড়ছে না।’

এসএমপির উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়ে সিলেটভিউকে বলেন, ‘সিলেট নগরীতে হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এটা দেড়শ বছরের পুরনো পদ্ধতি। এই ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ডিজিাটালাইজড করতে হবে। ডিজিটাল ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করতে হবে। আধুনিক সিগন্যাল বাতি লাগাতে হবে। এগুলো হচ্ছে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং।’

তিনি আরো বলেন, ‘নগরীতে সকল সড়ক প্রশস্ত করতে হবে, সড়কের দুই পাশে ফুটপাত থাকবে। সড়কে গর্ত থাকবে না, সংস্কার কাজ করা হবে দ্রুত। এগুলোও ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়। এসব বিষয়ের সুরাহা না হলে শুধুমাত্র ট্রাফিক এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে না।’

জানা গেছে, এসএমপির ট্রাফিক শাখায় বর্তমানে ২১২ জন সদস্য কর্মরত আছেন। তবে আরো অন্তত একশ সদস্য প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ফয়সাল মাহমুদ।

যানজটের বিষয়ে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘যানজট নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা আমাদের আছে। তবে এর আগে সড়কগুলো প্রশস্তের কাজ শেষ করতে চাই। অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর বিষয়ে সুরাহায় পৌঁছাতে চাই। একটা একটা করে আমাদেরকে এগুতে হবে। একসাথে সব করা সম্ভব নয়।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ অক্টোবর ২০১৯/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.