আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ধর্ষিত হওয়ার লজ্জায় আত্মহত্যা করে বিশ্বনাথের পপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৪ ০১:১১:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিশ্বনাথ :: দাফনের ২দিন পর মেয়ের ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে মা খুঁজে পেলেন একটি ‘চিরকুট বা সুইসাইড নোট’। আর সেই সুইসাইড নোট থেকেই জানা গেলে আত্মহত্যা করার পূর্বের রাতেই (গত ৯ অক্টোবর) দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের চেরাগী গ্রামস্থ বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লালটেক গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে পপি বেগম (১৯) গণধর্ষণের শিকার হয়ে ছিলো।

আর গণধর্ষণের শিকার হওয়াতে লোকলজ্জার ভয়ে পর দিন (১০ অক্টোবর) নিজের বাড়িতে ফিরে পরিবারের সকলের অজান্তে আত্মহত্যা করে পপি। আর ওই দিন বিকেলে নিজ বসতঘর থেকে পপির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে গণধর্ষণের ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলেনি সে। তবে কৌশলে নিজের ভ্যানেটি ব্যাগে রেখে গেছে সুইসাইড নোট বা চিরকুটটি।

গণধর্ষণের শিকার হওয়াতেই পপি লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এমন সংবাদ পেয়ে রবিবার দুপুরে বিশ্বনাথের স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি দল পপির নিজ বাড়িতে যান। পপির পরিবারের সদস্যদের আলাপকালে পপির মা জ্যোৎসনাা বেগম তার (পপি) ভ্যানেটি ব্যাগে সুইসাইড নোট বা চিরকুটটি পাওয়ার সত্যতা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। পপির চিরকুট অনুযায়ী তার আত্মহত্যার কারণ পরিবারের লোকজন থানা পুলিশকে অবহিত করেছেন।

পপির রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট বা চিরকুট থেকে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন গত বুধবার (৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের চেরাগী গ্রামস্থ বড় বোনের শ্বশুড় বাড়িতে অবস্থানকালে বাথরুমে যাওয়ার জন্য পপি বেগম ঘরের বাহিরে যায়। তখন পূর্ব থেকে সেখানে উৎপেতে থাকা দুই ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বক অন্যত্র উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর পপির মুখ, হাত ও পা বেঁধে মারধর করে রাতভর পালাক্রমে গণধর্ষণ করা হয়। এরপর ভোররাতে পুনঃরায় পপিকে তার বোনের বাড়িতে (যেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সেই স্থানে) ফেলে রেখে যায় ওই দুই ব্যক্তি। তবে ওই দুই জনকে পপি চিনতে পেরেছে এবং তাদের নামও সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পপি বেগম গত রবিবার বেড়াতে যায় বড় বোন হেপি বেগমের স্বামীর বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের চেরাগী গ্রামে। সেখান থেকে রবিবার তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার কথা থাকলেও। গত বৃহস্পতিবার সকালে পপি নিজ বাড়িতে চলে আসতে কান্না কাটি শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে ওই দিন দুপুরে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন ভগ্নিপতি ফয়জুল ইসলাম। এরই মধ্যে ফয়জুল ইসলামের বড় ভাই নুরুল ইসলাম তেতলী পয়েন্টে গিয়ে লোকমুখে জানতে পারেন তার ভাইয়ের শালিকা পপিকে সারা রাত বাহিরে পেয়ে স্থানীয় চেরাগী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) নামের এক যুবক বাড়িতে পৌছে দেয়।

এমন সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক লালটেক গ্রামের পপির বাড়িতে ছুটে আসেন নুরুল ইসলাম এবং তিনি পপির সাথে একান্তে আলাপ করে রাতে কোন ঘটনা ঘটেছে কি না তা জানতে চান। কিন্ত পপি তাকে কিছুই না বলায় তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে শুনতে পান পপি আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। এরপর ময়না তদন্ত শেষে পরদিন শুক্রবার নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এ ব্যাপারে নিহতের মা জ্যোৎসনা বেগম জানান, রবিবার মেয়ে পপি বেগমের ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ হাতে নিয়ে মেয়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি দেখতে গিয়ে ওই ব্যাগের মধ্যে পপির নিজ হাতে লেখা একটি কাগজ দেখতে পান। এসময় প্রতিবেশী লোকজনকে ডেকে কাগজটি পড়তে বলেন। তখন জানতে পারেন গণধর্ষণের শিকার হয়ে লোকলজ্জার ভয়ে পপি আত্মহত্যা করেছে।

বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, নিহতের পরিবারের মৌখিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে তা খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ অক্টোবর ২০১৯/পিবিএ/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন