আজ মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং

কামরানে হ্যাঁ, আরিফের না

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৬ ০০:১৬:০৩

জুনেদ আহমদ চৌধুরী :: সিলেটের ঐতিহ্যের দু’চারটি নাম আসলে চলে আসে কিন ব্রিজের নাম। সিলেটবাসী এই ব্রিজকে পুরান পুল হিসেবে চেনেন। সিলেটের সুরমা নদীর উপরে নির্মিত এই ব্রিজ দুই পারকে করেছে একত্রিত। এপার আর ওপারকে সেতু বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছে এই কিন ব্রিজ।

সম্প্রতি ঐতিহ্যের এই ব্রিজকে নিয়ে শুরু হয়েছে বড় এক রাজনীতি। ব্রিজ নিয়ে একজনের হ্যাঁ আর অপরজনের না নিয়ে সিলেটে শুরু হয়েছে ব্যাপক কথাবার্তা। একজন বর্তমান সিলেটের মেয়র অপরজন সিলেটের সাবেক মেয়র। তারা হলেন আরিফুল হক চৌধুরী ও বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

কিন ব্রিজ নিয়ে কামরানের হ্যাঁ আর আরিফের না বিষয়টি নিয়ে সিলেটের রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কিন ব্রিজ দিয়ে সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং ট্রাফিক বিভাগ। সওজ ব্রিজের দুই পাশে বড় দুইটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে, ঝুঁকিপূর্ণ, যান চলাচল নিষেধ এই বলে।

ব্রিজ দিয়ে গাড়িচলাচল বন্ধ করার সময় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সে কারণে সংস্কারের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংস্কার করা শেষ হলে এই ব্রিজ খুলে দেয়া হবে। পরবর্তীতে মেয়র জানান, এই ব্রিজ হবে সম্পূর্ণ একটি পদচারী ব্রিজ। তিনি আরো বলেন, ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ব্রিটিশ শাসনামলের এই সেতুটি সংরক্ষণের জন্য এর উপর দিয়ে যান চলাচল একেবারেই বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।

ব্রিজ বন্ধের দেড় মাস পার হলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। এই ব্রিজ আদৌ কবে সংস্কার হবে কিংবা জনগণের জন্য আবার খুলে দেয়া হবে কিনা সংশ্লিষ্ট কেউ সেটি জানেননা। আর এতেই ফুঁসে উঠেছে এই ব্রিজ দিয়ে সবচেয়ে বেশি চলাচলকারী দক্ষিণ সুরমার জনগণ। প্রতিনিয়ত তারা সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন এই ব্রিজ খুলে দেয়ার দাবীতে। আগামি ২২ অক্টোবরের মধ্যে রিকসা ও মটর সাইকেল চলাচলের জন্য ব্রিজ খুলে দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে দক্ষিণ সুরমার জনগণ। ২২ তারিখের মধ্যে ব্রিজ খুলে না দিলে সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

পিইসি, জেএসসি, জেডিসি ও বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আগেই ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত কিন ব্রিজ খুলে দেয়ার জন্য দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের ২৫, ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও মুরব্বীয়ানদের সাথে সর্বস্তরের জনসাধারণের মতবিনিময় সভা গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় কিন ব্রিজের দক্ষিণ মুখে অনুষ্ঠিত হয়।

মোল্লারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. মকন মিয়ার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

তিনি বলেন, কিন ব্রিজের বাতি লাগানোর দায়িত্ব সিসিকের, সংস্কারের নয়। সিলেটে ইদানিং চলছে তুঘলকী কাণ্ড, যার যেমনি ইচ্ছা তেমনি কাজ করছে। দক্ষিণ সুরমাবাসীর সাথে আলোচনা না করে সিটি মেয়র কিন ব্রিজ বন্ধ করেছেন। কামরান আরো বলেন, ব্রিজ সংস্কার করার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের, সিসিকের নয়।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সাবেক মেয়র কামরান বলেন, সংস্কার করা লাগলে জনগণকে আগে জানাতে হয়। ব্রিজের কোথায় সংস্কার করা হবে কিংবা কোথায় ফাটল দেখা দিয়েছে মেয়রকে পরিষ্কার করে বলতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র আরিফ দক্ষিণ সুরমায় তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ১০/১৫ দিনের মধ্যে ব্রিজ খুলে দেবেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি।

ভার্থখলা স্বর্ণালী সংঘের সভাপতি শিপলু চৌধুরী বলেন, আমরা দক্ষিণ সুরমাবাসী বড় কষ্টে আছি। বিশেষ করে শহরের স্কুলে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে কষ্ট হয়। তিনি বলেন, আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়েছি। মেয়রের সাথেও বৈঠক করেছি ব্রিজ খুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবে আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। তিনি বলেন, শুধু রিকসা ও মটর সাইকেল চলাচলের জন্য খুলে দিলে আমরা উপকৃত হবো।

এ ব্যাপারে জানতে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজের সাথে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দেশের বাহিরে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে এই ব্রিজ সংরক্ষণের জন্য দাবী তুলেছে বিভিন্ন সংগঠন। সম্প্রতি সুজন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন রক্ষার নেতাকর্মীরা কিন ব্রিজ বন্ধ রাখার দাবিতে ব্রিজের উপর বড় মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে দুই সংগঠনের নেতারা পার্শ্ববর্তী কাজিরবাজার ব্রিজ ও শাহজালাল ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে এই ব্রিজ সংরক্ষণ করার আহবান জানান।

জানা গেছে, মেয়র আরিফ আপাতত ব্রিজ খুলে দিতে রাজী নয়, যেহেতু ব্রিজে সংস্কার করা দরকার। আর সাবেক মেয়র কামরান ব্রিজ খুলে দেয়ার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। আদৌ এই ব্রিজ দিয়ে আর যানচলাচল করতে দেয়া হবে, নাকি এই ব্রিজ সরক্ষণের জন্য রেখে দেয়া হবে এটা পরিষ্কার জানতে চায় সিলেটবাসী।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর কিন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নাম রাখা হয় কিন ব্রিজ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ অক্টোবর ২০১৯/জেএসি/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন