আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পুলিশ সুপার বরাবর ইয়াবা সুমনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর স্মারকলিপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৯ ২২:১২:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিশ্বনাথ  :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত আলকাছ আলীর পুত্র তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমনের বিরুদ্ধে ‘চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা’র সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে পুলিশ সুপার বরাবরে গত বুধবার স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী।

এলাকার বিভিন্ন গ্রামের ২৮৩ জন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত স্মারকলিপির মাধ্যমে পুলিশ সুপারের কাছে এলাকাবাসী চিহ্নিত অপরাধী তবারক ওরফে ইয়াবা সুমনের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে দ্রুত তাকে আইনের আওতায় আনার ও তার পক্ষে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী উপজেলার রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল আহমদসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

এদিকে পুলিশ সুপার বরাবরে এলাকাবাসীর স্মারকলিপি দায়েরের পরদিন (বৃহস্পতিবার) মাদক বিরোধী ওই স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর দেওয়ার কারণে তবারক বাহিনীর করা হামলার সময় ছুরিকাঘাতে গুরুত্বর আহত পাঠাকইন গ্রামের ময়না মিয়ার পুত্র চুনু মিয়া (৩৮)। হামলার ঘটনায় তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমনসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেছেন চুনু মিয়া। মামলা নং ১২ (তাং ১৮.১০.১৯ইং)।
 
স্মারকলিপিতে এলাকাবাসী উল্লেখ করেছেন, তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমন একজন চিহ্নিত অপরাধী। সে ‘চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা’র সাথে জড়িত রয়েছে। এরপরও রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ২/৩ জন মেম্বারসহ ও এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাকে (তবারক) রক্ষা করার জন্য তার পক্ষালম্বন করে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিগত সময়ে পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবারক ও তার বাহিনীর এমন কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ চরম অশান্তিতে রয়েছেন। আর নিজের (তবারক) ও তার বাহিনীর অপকর্ম ঢাকতে আশুগঞ্জ স্কুলের নির্বাচন ইস্যুকে সামনে আনছে। ইতিপূর্বে তবারক আলীর বাড়ির পাশে পাওয়া দুটি লাশের হত্যাকারী ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছে, তবুও এনিয়ে এলাকাবাসীকে জড়ানো হাস্যকর ও পাগলের প্রলাপ। আর তাই তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমনের ব্যাপারে প্রকৃত বিষয় প্রশাসনের নজরে আনার জন্যই এলাকাবাসীর পক্ষে গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ রয়েছে।

এলাকাবাসী স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছেন, তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমনের বিরুদ্ধে থাকা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় থাকা একাধিক মামলার তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সে (তবারক) বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং পরিবারের সদস্যদের অন্নের সংস্থান করার জন্য তার (তবারক) মা ও ভাইয়েরা এলাকার বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। সেই তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমন কি এমন ‘আলাদিনের প্রদীপ’ পেয়ে মাত্র ৩ বছরে মুনতাহা পরিবহন নামে ১৯টি সিএনজি (অটোরিক্সা), ৭টি হাইয়েস, সিলেট-ঢাকা ও গাজীপুর-টাঙ্গাইল সড়কে ৭টি বাস, ৩টি ট্রাক, ইলিয়েনসহ ৩টি কার, নোহা ২টি, বিশ্বনাথের আল-হেরা মার্কেটে ৩টি দোকান, লালা বাজারে ১টি দোকান, কুরুয়া বাজারে ১টি, সিলেট ব্লু ওয়াটারে ৩টি দোকানের মালিক হয়েছে। এছাড়া বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের পশ্চিম চান্দশিরকাপন ও তার নিজ গ্রাম পাঠাকইনে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণাধীন থাকাসহ বিগত ৬ মাসে প্রায় কোটি টাকার জায়গা-জমি ক্রয় সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখায় তার (তবারক) ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগমের নামে কোটি কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে, যা সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে দাবী এলাকাবাসীর।

তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমনের অবৈধ সম্পদ বৈধ করার জন্য পুলিশ সুপার বরাবরে তার (তবারক) পক্ষের লোকজনের দায়ের করা স্মারকলিপিতে তবারকের একভাই ১০/১২ বছর যাবত সৌদিতে ব্যবসা করতেছে ও আরেক ভাই ফ্রান্স প্রবাসী বলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন বলে দাবী এলাকাবাসীর। আর প্রকৃত সত্য হিসেবে ২ বছর পূর্বে তবারকের ভাই সৌদিতে যায় ও বর্তমানে তুরস্কে থাকা অপর ভাই ২ মাস পূর্বেও সিএনজি (অটোরিক্সা) চালাত এবং সিএনজির মাধ্যমে তবারক আলী ওরফে ইয়াবা সুমনের মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রন করতো বলে এলাকাবাসীর ধারণা। গত ২৬ আগস্ট বিশ্বনাথ-লামাকাজী সড়কের ‘উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের সামন থেকে গাঁজাসহ ফয়ছল আহমদ ও গফুর আলী নামে দুজনকে গ্রেপ্তার এবং তবারক আলীর স্ত্রী সাবিনা বেগমের মালিকানাধীন অটোরিক্সা (সুনামগঞ্জ-থ ১১-২০৬৭) জব্দ করে পুলিশ। তবারকের নির্দেশে তারা মাদক ব্যবসায় পরিচালনা করে মর্মে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিলে তাকে (তবারক)’সহ গ্রেপ্তারকৃতদের অভিযুক্ত করে মাদকদ্রব্য আইনে বিশ্বনাথ থানার এসআই দেবাশীষ শর্ম্মা বাদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৪ (তাং ২৬.০৮.১৯ইং)।

এব্যাপারে তবারক আলীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার পক্ষে থাকা উপজেলার রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল আহমদ বলেন, আমাদের দায়ের করা স্মারকলিপির তথ্য সঠিক। আমাদের জানা মতে তবারক আলীকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। শুধু তবারক আলী কেন, যে কেউ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলে আমরা তার সাথে নেই।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ অক্টোবর ২০১৯/পিবিও/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন