আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ফেঞ্চুগঞ্জে ‘কৌশলী’ ভূমিকায় সাইফুল্লাহ মুছে দিলেন রুমানের নাম!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-০৯ ২১:২০:৫৮

জুনেদ আহমদ চৌধুরী :: তিনি একজন প্রকৌশলী। পাশাপাশি সিলেট এমসি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সও পাস করেছেন। বয়সে তখন ছিলেন একবারে তরুণ।২৬ পেরিয়ে সবেমাত্র ২৭ বছরে পদার্পণ করেছিলেন। এই বয়সে অনেকেই জীবন জীবিকার তাগিদে ব্যবসা কিংবা চাকুরী নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনি তাঁর মাথার উপর আসলো এলাকার মানুষের অন্যমুখী চাপ।

২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৩ মাসের মাথায় শুরু হয় সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।এলাকার মানুষের চাপ আর আবেগকে ফিরিয়ে দিতে পারেননি তিনি। মানুষের কথায় সাঁয় দিয়ে দাড়িয়েছিলেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে। এলাকার লোকজন যে আশা নিয়ে তাঁকে দাড় করিয়েছিলেন সেটা কিন্তু বিফলে যায়নি। নির্বাচনের সময় তিনি ছিলেন জেলে। এলাকার লোকজন তাঁর নির্বাচনী কাজ সারিয়েছিলেন। জেলে থাকলেও ৬ জন ভাইস চেয়ারম্যানকে টপকিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে। ডাক নাম রুমান। পুরো নাম মোহাম্মদ শহিদুর রহমান। তবে রুমান নামে বেশ পরিচিত তিনি।
 
প্রবাসী অধ্যুষিত ফেঞ্চুগব্জে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৭ হাজারেরও অধিক ভোট পেয়ে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭ হাজার খানেক ভোট। ১০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেও তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। তাঁর সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন জামায়াত নেতা সাইফুল্লাহ আল হোসাইন। সাইফুল্লাহ’র ‘কৌশলী’ ভূমিকায় ভাইস চেয়ারম্যান রুমান তাঁর ন্যায্য সম্মান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। চেয়ারম্যান এর অনার বোর্ডের তালিকা থেকে অত্যন্ত সুকৌশলে রুমানের নাম বাদ দেন সাইফুল্লাহ।

রুমান ভাইস চেয়ারম্যান থাকা কালে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ২০০৯ সালে এক মাস ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালেও আরো এক মাস ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন রুমান। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল মামলা জনিত কারনে উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তখন উচ্চ আদালতের আদেশ ও নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ পরিষদের অফিসে একটি অনার বোর্ড সাঠান। ভাইস চেয়ারম্যান রুমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও তাঁর নাম অনার বোর্ডে স্থান পায়নি।

উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ অনার বোর্ডের উপরে ‘কৌশলী’ ভুমিকা নিয়ে লিখেছেন নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের তালিকা। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন অফিসে দেখা যায়, যখন যিনি দায়িত্ব পালন করেন তাদের কার্যকালের সময় লেখা হয়। কিন্তু সে জায়গায় রুমানের নাম রয়েছে উপেক্ষিত! তৎকালীন সময়ে রুমান অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে একটি অনার বোর্ড তৈরি করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ পুণরায় চেয়ারম্যানের পদে আসীন হলে রুমানের তৈরী করা বোর্ডটি সরিয়ে দেন সাইফুল্লাহ এ দাবী করেছেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রুমান।

সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১, ২০০২ সালের দিকে সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে কিছুদিন খন্ডকালীণ শিক্ষকতাও করেন রুমান। এরপরে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ও পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কার্পণ্য করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন। ফেঞ্চুগঞ্জের অনেকেই এটাকে সাইফুল্লাহ’র ‘কৌশলী’ ভুমিকা নিয়ে রুমানের নাম মুছে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।

ইতোপূর্বে সিলেট বিভাগের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক মতিউর রহমান ফেঞ্চুগঞ্জ পরিদর্শনে যান। এসময় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান রুমান তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি তার যাবতীয় কাগজপত্র দেখালে অতিরিক্ত সচিব মতিউর রহমান তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জসীম উদ্দিনকে নাম সংশোধনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু এর দেড় মাস পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী হন।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম জাহিদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে লিখিত কোন কিছু আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে আমার আর কিছু জানা নেই।

অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক মতিউর রহমানের নির্দেশনার পরও অজ্ঞাত কারনে অনার বোর্ডের নামের তালিকার সংশোধনী করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন সময়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ভাইস চেয়ারম্যান রুমা চক্রবর্তী অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তখন রুমার নাম অনার বোর্ডে স্থান পায়।

ফেঞ্চুগঞ্জের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এটা সাবেক চেয়ারম্যান করে গেছেন। তাঁর কিছু করার নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইনের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।



শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন