আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেট উদয়ন ট্রেন দুর্ঘটনা: জানা গেল রেল দুর্ঘটনার আসল কারণ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৩ ১৫:১১:০৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যালিং ব্যবস্থাসহ অন্তত ৭টি কারণে রেল দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে রেললাইনের পাশে বনায়নের ফলে সিগন্যাল বাতি দেখতে না পারাও দুর্ঘটনার কারণ। সেই সঙ্গে রয়েছে চলন্ত অবস্থায় চালকের ঘুমিয়ে পড়াও। লোকো মাস্টার এবং রেলের গার্ডদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য বের হয়ে এসেছে।

সোমবার গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দভাগ রেল স্টেশনে ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতি দুর্ঘটনাই শুরু কিংবা শেষ নয়। নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে রেলপথে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অবৈধ লেভেল ক্রসিং দিয়ে রেললাইনে অন্যান্য যানবাহন উঠে যাওয়ার কারণে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে। তেমনি দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রিপিটার সিগন্যাল লাগানো হয়নি। যে কারণে লোকো মাস্টার দূরবর্তী সিগন্যাল দেখতে না পেলে তার কিছু করার থাকে না। অথচ রিপিটার সিগন্যাল কার্যকর থাকলে দুর্ঘটনা অনেকাংশ এড়ানো সম্ভব।

লোকো মাস্টার অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, অপরিকল্পিত বনায়ন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে লোকো মাস্টার মোহাম্মদ হানিফ বলেন, অবৈধ লেভেল ক্রসিং মারাত্মক সমস্যা। লাইনে গাড়ি উঠে গেলে আসলে তখন কিছু করার থাকে না।  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন আড়াইশ'র বেশি ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন রয়েছে দেড়শ’র বেশি। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখতে হচ্ছে রেল যোগাযোগ। সেই সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যাল ব্যবস্থাও রেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে দাবি ইঞ্জিন চালক বা লোকো মাস্টারদের।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের লোকো মাস্টার জাহিদুল ইসলাম বলেন, গাড়িটি কন্ট্রোল করার জন্য যে অটোমেটিক ব্রেক সেগুলো অনেক সময় কাজ করে না। সেজন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। 

লোকো মাস্টার মজিবুর রহমান বলেন, ফগ সিগন্যালের ব্যবস্থা আছে রেলওয়েতে, এটা অদ্যাবধি চাকরিতে আসার পর থেকে তা পাইনি। 

রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে শীত মৌসুমে সবচে বেশি বেকায়দায় পড়তে হয়। কুয়াশার কারণে সিগন্যাল বাতি দেখা না যাওয়ার কারণে ফগ লাইট লাগানোর নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ পথে এখনো ফগ লাইটের ব্যবস্থা করা হয়নি।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের গার্ড মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, সিগন্যালের লাইটটা হয়তো সঠিক জ্বলে না। কোনোটা হালকা থাকে আবার কোনোটা উজ্জ্বল থাকে। উজ্জ্বল থাকলে সমস্যা থাকে না। যেটা আলো কম থাকে চোখে পড়ে না, ওটার কারণে হয়তো পারে।

রেলওয়ে গার্ড কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন শামীম বলেন, সিগন্যালটা হয়তো প্রথম থেকে অথবা দূর থেকে হয়তো সেটা দেখা যাচ্ছে, এমন সময় হয়তো সেটা ফ্লাই ব্যাক করছে, হ্যাঁ দুষ্কৃতকারীরা অনেক সময় ফ্লাই ব্যাগ করে, এ ধরনের কারণও হতে পারে।

তবে চলতি পথে লোকো মাস্টারের ঘুমিয়ে পড়ার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিটি ট্রেনে কাজ করার আগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের বিশ্রাম দেয়া হয়। কারণ তিনি মানসিকভাবে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে, যাতে প্রতিটি ট্রেনে সে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারেন।

বছরে আড়াই থেকে তিন কোটি যাত্রী পরিবহন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে গত তিন দশকে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিনশ’ মানুষের।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোর রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা আর সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষে কয়েকটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ১৬ জন মারা যান ও শতাধিক যাত্রী আহত হন।


সৌজন্যে- বাংলাদেশ প্রতিদিন
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ নভেম্বর ২০১৯/ডেস্ক/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন