আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটে ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতারকরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৯ ১০:৫৫:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে একের পর এক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকরা।  গ্রাহকদের হিসাব থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। প্রতারকদের মুল টার্গেট ব্যাংকের নারী গ্রাহকরা। প্রতারণার মাধ্যমে এটিএম কার্ডের পিন হাতিয়ে নিয়ে একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে  ওই চক্র। টাকা খোয়া যাওয়ার পর ব্যাংকে গিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। প্রতারণার ঘটনায় আদালতে এক নারী গ্রাহক মামলাও করেছেন।

প্রতারণার মাধ্যমে সিলেট নগরীর সোনারপাড়ার খাইরুননেছা নাম্নী নামের এক গ্রাহকের হিসাব থেকে ৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় ওই গ্রাহক গতকাল রবিবার সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

খাইরুননেছা  নাম্নী জানান, ডাচ বাংলা ব্যাংক সিলেট শাখায় তার একটি একাউন্ট রয়েছে। গত ৬ নভেম্বর রাতে তাকে ০১৮৪১-৩৪৮৪৪৭ এই নাম্বার থেকে ফোন দেওয়া হয়। ফোনদাতা নিজেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা কাজী মারুফ নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, তার ‘নেক্সাস পে’ এটিএম কার্ডটি ‘ডিএক্টিভেট’ হয়ে গেছে। রাতের মধ্যে এক্টিভ করলে ওই কার্ড দিয়ে এক সাথে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত তোলার সুযোগ পাওয়া যাবে। আর ‘এক্টিভ’ না করলে ওই কার্ড আর ব্যবহার করা যাবে না। ফোনদাতা কাজী মারুফ নামের ওই ব্যক্তি জানান, কার্ড সচল করতে হলে তার মোবাইল নাম্বারে ‘নেক্সাস পে’ থেকে কয়েকটি কোড নাম্বার যাবে, ওই কোড নাম্বারটি তাকে জানাতে। কিছু সময় পর খাইরুননেছার মোবাইলে তার একাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফারের ম্যাসেজ আসতে থাকে। তখন তিনি কাজী মারুফ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিকে ফোন দিলে তিনি জানান, তার টাকা অন্য একটি কার্ডে ট্রান্সফার হচ্ছে। সকালে ব্যাংক থেকে নতুন কার্ড সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন তিনি। পরদিন সকালে ব্যাংকে গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পারেন খাইরুন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে বিষয়টি অবগত করলে এ ব্যাপারে তার কিছু করার নেই বলে ফিরিয়ে দেন তাকে।

একই দিন প্রতারণার শিকার হন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ওই শাখার আরেক নারী গ্রাহক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর ঝেরঝেরিপাড়ার ওই গ্রাহক জানান, ৫ নভেম্বর তিনি তার একাউন্টে ১ লাখ টাকা জমা দিয়ে আসেন। পরদিন তাকে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, তিনি যে টাকা জমা দিয়েছেন তা একাউন্টে জমা হচ্ছে না। একাউন্ট এক্টিভ করার জন্য তার কাছ থেকে একইভাবে ‘নেক্সাস পে’ কার্ডের পিন নাম্বার নেওয়া হয়। এরপর তার একাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনিও ব্যাংকে গিয়ে অভিযোগ করে কোন সমাধান পাননি।

৭ নভেম্বর ব্যাংকের একটি শাখার মাছুমা নামের আরেক গ্রাহকের হিসাব থেকে একইভাবে তুলে নেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।

প্রতারিত গ্রাহকদের সন্দেহ এই প্রতারক চক্রের সাথে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারেন। তা না হলে গ্রাহকের লেনদেনের তথ্য প্রতারকরা পাওয়ার কথা নয় বলে দাবি তাদের।

এদিকে, প্রতারকদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে (০১৮৪১-৩৪৮৪৪৭) ফোন দেওয়া হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নারীকন্ঠে বাজতে থাকে ‘ ডাচ বাংলা কাস্টমার কেয়ারের আপনাকে স্বাগতম’। এরপর ভাষা নির্বাচন, পরিষেবার জন্য নাম্বার চাপ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। যা ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের স্বয়ংক্রিয় কন্ঠের সাথে হুবহু মিল রয়েছে। 

গ্রাহকদের হিসাব থেকে প্রতারকরা কিভাবে টাকা তুলে নিচ্ছে এ ব্যাপারে জানতে ডাচ বাংলা ব্যাংক সিলেট শাখার ব্যবস্থাপক মো. তাহমিদ বখত চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ নভেম্বর ২০১৯/শাদিআচৌ/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন