Sylhet View 24 PRINT

ইউরোপের স্বপ্নে ‘হারিয়ে যাচ্ছে’ সিলেটের তরুণরা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-২৩ ০০:০৪:০৭

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :: সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক লাখ সিলেটি বসবাস করছেন। এদের সিংহভাগই বিদেশে গেছেন বৈধ পথে। কিন্তু অবৈধ পথে পা বাড়নোর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছেন সিলেটের অসংখ্য তরুণ-যুবক। তাদের অনেকেই দুর্গম যাত্রা পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে পা রাখতে পারলেও বেশিরভাগের স্বপ্নই দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, গেল কয়েক মাসে ইউরোপের স্বপ্নে পা বাড়িয়ে মারা গেছেন সিলেটের অন্তত ২২ তরুণ-যুবক। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৮ তরুণ। গেল প্রায় ১০ মাস ধরে কোন খোঁজ মিলছে না তাদের। এসব তরুণের পরিবারে এখন ঘোর অন্ধকার।

জানা গেছে, ইউরোপে যেতে সিলেটের তরুণ-যুবকরা ঝুঁকি নিচ্ছে। তারা দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে স্বপ্নের দেশে ঢুকতে টাকা খরচ করছে। কিন্তু অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে ঢুকতে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে তাদের।

চলতি বছরের ৯ মে লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের জুয়ারা শহর থেকে অন্তত ৭৫ জন অভিবাসী নিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালির উদ্দেশ্যে সাগর পথে রওয়ানা দেয় একটি বড় নৌকা। অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৬০ জন ছিলেন বাংলাদেশি। তিউনিসিয়ার উপকূলে ওই নৌকা থেকে অভিবাসীদের ছোট একটি নৌকায় তোলার সময় সেটি ডুবে যায়। এতে নিহত হন অর্ধশতাধিক অভিবাসী। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৭ জন; যেখানে অন্তত ২০ জন ছিলেন সিলেট অঞ্চলের।

এদিকে, সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের পাগইল গ্রামের মখলিছুর রহমানের ছেলে শাহীন আহমদ বছর দুয়েক আগে ইরাকে গিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল ইতালি যাওয়া। ইরাক থেকে দালালের মাধ্যমে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে যান শাহীন। গেল ২৩ আগস্ট ইতালির উদ্দেশ্যে একটি ভ্যানে চড়ে আরো কয়েকজনের সঙ্গে রওয়ানা দেন তিনি। কিন্তু পথিমধ্যে মেসিডোনিয়ার দেবার নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন শাহীন।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ চলাকালে সে দেশে যান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের ফরিদ উদ্দিন। পরে দালালের মাধ্যমে ইউক্রেনে ঢুকেন তিনি। এরপর স্লোভাকিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জঙ্গলে মারা যান ফরিদ। গত ২৮ আগস্ট ইতালির পথে দালালসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে রওয়ানা দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না দেশে থাকা পরিবার। পরে ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার জঙ্গল থেকে ফরিদের মরদেহ উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ। গত ৩ অক্টোবর তার মরদেহ দেশে আনা হয়।

জানা গেছে, ইউরোপের দেশে যাওয়ার পথে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের অন্তত ৮ তরুণ। নিখোঁজ এই তরুণরা হলেন- কানাইঘাট উপজেলার দাওয়াদিরি গ্রামের ইমদাদ আহমদের ছেলে জাকারিয়া আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলার গড়রগ্রামের এমাদ উদ্দিনের ছেলে তোফায়েল আহমদ, বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের উত্তর গাংপার গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আলতাফ হোসেন, কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির চাতল গ্রামের মিছবাউল হকের ছেলে সুলতান মাহমুদ পলাশ, একই ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামের আছার উদ্দিনের ছেলে জুবেল আহমদ, খশির গ্রামের ছয়দুর রহমানের ছেলে আবু তাহের, খশির নয়াবাড়ী গ্রামের সাইদুল হকের ছেলে ওবায়দুল হক এবং মুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে আবু সুফিয়ান।

নিখোঁজ আলতাফ হোসেনের বাবা আব্দুল লতিফ জানান, তার ছেলে গেল বছর জুলাইয়ে ঢাকায় একটি কোম্পানির ট্রেনিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। সেখান থেকে সে বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁওয়ের দালাল মুতির মাধ্যমে লিবিয়ায় যায়। সেখানে তাকে দুই মাস জিম্মি রাখা হয়। পরে দেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়। পরে গেল বছরের ২২ ডিসেম্বর আলতাফ সিলেটের আরো কয়েকজন তরুণের সাথে সাগরপথে ইতালি যেতে নৌকায় ওঠে। নৌকায় ওঠার আগে সে ফোন করেছিল। এর পর থেকে তার আর কোন খোঁজ মিলছে না।

নিখোঁজ পলাশের বাবা মিছবাউল হক জানান, দালাল বলছে তার ছেলে আফ্রিকার কোন এক দেশের জেলে রয়েছে। তার কথায় বিশ্বাস রেখে আমরা দিন গুণছি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ নভেম্বর ২০১৯/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.