আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

কামরান আর আসাদকে ‘ব্যর্থ’ বললেন কাউন্সিলর আজাদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-০২ ০১:১৯:১৬

রফিকুল ইসলাম কামাল :: সাক্ষাৎকারের শুরুতেই যেন রীতিমতো ‘বোমা ফাটালেন’ আজাদুর রহমান আজাদ। বললেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ‘ব্যর্থ’। আর এ ‘ব্যর্থতা’ থেকে দলকে বের করে আনতেই তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে চান।

আজাদুর রহমান আজাদ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। একইসাথে তিনি নগরীর ২০নং ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরও।

সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী বৃহস্পতিবার। এ সম্মেলনের মাধ্যমে উভয় শাখার শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে বলে কানাঘুষা আছে। এক্ষেত্রে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদে আজাদুর রহমান আজাদকে ঘিরে জোর আলোচনা চলছে। এরই প্রেক্ষিতে আজাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সিলেটভিউ২৪ডটকম’র এই প্রতিবেদক।

সাক্ষাৎকারে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কাউন্সিলর আজাদ।

তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, কেন তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চাইছেন। জবাবে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেন টানা চার মেয়াদে সিটি কাউন্সিলর হওয়া এই রাজনীতিবিদ।
 
আজাদ বলেন, ‘সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব তথা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যর্থ। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তারা দায়িত্বে থেকেও মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে সম্মেলন শেষে কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা। কেন্দ্র থেকে যখন মহানগরের সম্মেলনের চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হলো, তখন তড়িগড়ি করে বাকি থাকা ৬টি ওয়ার্ডে সম্মেলন করা হলো।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ওয়ার্ড কমিটি গঠনেই ব্যর্থতা নয়, তাঁরা বিগত সিটি নির্বাচনে নিজেদের ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীও দিতে পারেননি। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির ১৪নং ওয়ার্ড এবং সাধারণ সম্পাদকের ১৭নং ওয়ার্ডে দলের কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল না। ১৭নং ওয়ার্ডটি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাওরেরও। শুধু তাই নয়, নগরীর ৪, ৬ ও ১২নং ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয় মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্ব।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরানের ওয়ার্ডে বিএনপিপন্থি নেতাকে সভাপতি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেন আজাদ। তিনি বলেন, ‘১৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শামীম। কিন্তু তিনি বিএনপি করেন। কোনোদিনই তাকে আওয়ামী লীগের মিছিল, সভায় দেখা যায়নি।’

এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কামরান ও আসাদ শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা সত্ত্বেও সিলেটে দলের কোনো স্থায়ী কার্যালয় করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন আজাদ। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে সিলেটে দলের কোনো স্থায়ী কার্যালয় নেই। এই ব্যর্থতা শীর্ষ নেতৃত্বের। কার্যালয় না থাকায় দলের এক কর্মীর সাথে আরেক কর্মীর দেখা হয় না, একজন আরেকজনকে চিনে না।’

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা ব্যস্ততার মধ্যেও দলের কার্যক্রমকে সূচারোভাবে সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু সিলেটে কামরান ও আসাদ দল চালানোর মতো সময় পান না।’-এমন মন্তব্যও করেন সিসিক কাউন্সিলর আজাদ।

মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের এই ‘ব্যর্থতা’ থেকে দলকে বের করে আনতে চান আজাদুর রহমান আজাদ। প্রবীণ আর নবীনের সমন্বয়ে গড়তে চান মহানগর আওয়ামী লীগকে। ত্যাগী, মেধাবীদের নিয়ে আসতে সামনের সারিতে। এজন্যই হতে চাইছেন সাধারণ সম্পাদক।

আজাদ সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক পদে যদি দায়িত্ব পাই, তবে নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে মহানগরের কমিটি করার চেষ্টা করবো। সিলেট নগরীতে বহু আওয়ামী লীগার আছেন, যারা নৌকায় ভোট দেন, দলের জন্য কাজ করেন। কিন্তু তারা কোনো পদপদবী পান না। তাদেরকে সামনে আনার চেষ্টা করবো। দলের জন্য একটি আধুনিক কার্যালয় করার স্বপ্ন আছে আমার। উদ্যোগ নিয়ে এটা করা হবে।’

জানা গেছে, আজাদুর রহমান আজাদের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাঁর চাচা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এডভোকেট শফিকুর রহমান জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৭৫ পরবর্তী ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শফিক। আজাদের বড় ভাই আজিজুর রহমান মানিক, সাজ্জাদুর রহমান সাজু ও শফিউর রহমান সোলেমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজনীতি করতে গিয়ে এ তিনজনই বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করেন। এছাড়া তার আরেক বড় ভাই সাঈদুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি স্টেইট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আজাদের স্ত্রী নাজমা রহমান যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি এ দল থেকে কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছেন।

আজাদুর রহমান আজাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ছাত্রজীবনে তিনি সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ১৯৮৮-৮৯ সালে তিনি সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন আজাদ।

পরবর্তী সময়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগে বিভক্তি দেখা দেয়। ওই সময় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সিলেটের যে ৬ ছাত্রনেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, তাঁদের একজন ছিলেন আজাদ। এ নেতারা সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসেন। ১৯৯৮ সালে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক হন আজাদ। ২০০২ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ২০০৩ সালে সম্মেলনে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

যুব রাজনীতিতে থাকাকালীন সময়েই ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটিতে তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হন আজাদুর রহমান আজাদ। ২০১১ সালে তিনি দায়িত্ব পান শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে।

এর আগে, ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ২০নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আজাদুর রহমান আজাদ। এরপর ২০০৮, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনেও একই পদে নির্বাচিত হন তিনি। শেষবার (২০১৮) তিনি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ জানান, তিনি ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালেও স্বৈরাচারবিরোধী ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে যান তিনি। বিএনপি সরকারের সময়ে ১৯৯২ সালে ৯ মাস, ১৯৯৪ সালে ৪ মাস, ২০০২ সালে ১০ মাস এবং ২০০৩ সালে ২ মাস কারাগারে ছিলেন আজাদ। এছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের সময় ২০০৭ সালে ১৪ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি।

রাজনীতির বাইরে সামাজিক কর্মকাণ্ড ও ক্রীড়াঙ্গনের সাথেও জড়িত আজাদুর রহমান আজাদ। তিনি সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিবন্ধিত টিলাগড় ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, সিলেট ব্যাডমিন্টন উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি, সিলেট জেলা ব্যাডমিন্টন কমিটির সদস্য। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাউন্সিলর, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। তার নিজের নামে চালু করা ‘আজাদ কাপ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট’ ও ‘আজাদ কাপ ফুটসাল টুর্নামেন্ট’ বেশ আলোচিত। তিনি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ঘুড়ি উৎসব, গ্রামীণ ক্রীড়া উৎসবও করে থাকেন। এছাড়া নিজেও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে দেশ-বিদেশে বেশকিছু প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২ ডিসেম্বর ২০১৯/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন