আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শফিক চৌধুরীর কাঁধেই ‘গুরুদায়িত্ব’!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-০৪ ০০:৩০:০২

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :: সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের নভেম্বরে। ওই সময় সভাপতি হন আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। বর্ষিয়ান এই নেতা মারা যান ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান এডভোকেট লুৎফুর রহমান চৌধুরী।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতে, বয়োবৃদ্ধ লুৎফুর দলের কর্মকাণ্ডে ততোটা সময় দিতে পারেন না। এছাড়া তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন।

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইফতেখার হোসেন শামীম প্রয়াত। সহসভাপতি পদে থাকা ইমরান আহমদ সিলেট-৪ আসনের সাংসদ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস সিলেট-৩ আসনের সাংসদ; আরেক সহসভাপতি আশফাক আহমদ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জনপ্রতিনিধি হওয়ায় দলীয় কর্মকা-ে তাঁরা খুব বেশি সময় দিতে পারেন না।

এরকম অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগকে সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রায় একাই টেনে নিচ্ছেন, এরকম অভিমত আছে দলটির নেতাকর্মীদের।

জানা গেছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে (আগামীকাল বৃহস্পতিবার) শফিকুর রহমান চৌধুরীর কাঁধে ‘গুরুদায়িত্ব’ ওঠতে পারে। এ দায়িত্ব হতে পারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র এমন আভাস দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমানকে বয়সের বিবেচনায় এবার আর সভাপতি পদে না রাখার চিন্তা করছে দলের হাইকমান্ড। তাকে উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে শফিক চৌধুরীকেই পরবর্তী সভাপতি হিসেবে ভাবছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘দলের জন্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে তিনি পরিশ্রমী নেতা হিসেবে স্বীকৃত। দলের নেত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তিনি টানা দুইবার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াননি। কিন্তু সাংসদ হতে না পারলেও দলকে সর্বোচ্চটা দিয়ে এসেছেন। তার সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ এখন শফিক চৌধুরীর কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। সিলেটজুড়ে দলীয় কর্মসূচি পালন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও সংগঠিত রাখা, বিপদে-আপদে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো সবক্ষেত্রেই অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন শফিক। এছাড়া দলের যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবার অগ্রভাগে থাকেন তিনি। বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলের যে কোনো বিষয়ে দিকনির্দেশনা নিতে শফিকের কাছে ছুটে আসেন।

দলের প্রতি শফিক চৌধুরীর নিবেদন ও ত্যাগ, তাঁর দক্ষতা এসব কারণে এবার তাঁকেই সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে শফিক চৌধুরী বলছেন, তাঁর কাছে পদপদবী মুখ্য নয়, তিনি দলের জন্য কাজ করে যেতে চান।

শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘২০১১ সালে দায়িত্ব পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করে গেছি। গ্রুপিংমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, প্রতিহিংসামুক্ত দল গড়েছি। পদপদবী মুখ্য বিষয় নয়। দলের প্রতি, দলের নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল থাকাটাই বড়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দেশ ও দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁদের দেখানো পথ ধরেই আমি চলছি। মাননীয় নেত্রী যে দায়িত্ব দেবেন, সে দায়িত্বই আমি পালন করবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পেলে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবো। দলকে আরো সুসংগঠিত, সামনে এগিয়ে নিতে, দালালমুক্ত রাখতে বিরামহীনভাবে কাজ করে যাবো।’

শফিক চৌধুরী জানান, এবারের সম্মেলনের পরপরই তাঁর মূল লক্ষ্য হবে সিলেটে দলের একটি স্থায়ী কার্যালয় গড়ে তোলা। এছাড়া দলের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

শফিক চৌধুরীর কাছ থেকে জানা গেছে, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বনাথ সফরে এলে তাঁর হাত ধরে আরো সামনে এগিয়ে যান তিনি। শফিক চৌধুরীর বাবা মরহুম আব্দুল মতলিব চৌধুরী যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন। তাঁর বড় ভাই মরহুম মতিউর রহমান চৌধুরী ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। পারিবারিক ঐতিহ্য ও বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণাতেই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ।

জানা গেছে, ছাত্রজীবনে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং ছাত্রলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ৮০’র দশকে যুক্তরাজ্য যাবার পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকও হন। তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত গঠন ও প্রবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণে নিরলস কাজ করেন। যুক্তরাজ্য ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন যাবত দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাজনীতি করতে গিয়ে শফিকুর রহমান চৌধুরী কারাভোগও করেছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানানোর অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাসনামলে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থা জারির পর নিজ বাড়িতে এক পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য ও প্রবাসী নেতৃবৃন্দসহ আটক করা হয়। এজন্য ‘বিনা অপরাধে’ ৪ মাস ২২ দিন জেলে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সাংসদ হয়েছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৪ ডিসেম্বর ২০১৯/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন