Sylhet View 24 PRINT

ফেঞ্চুগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১১ ০০:২৬:১৯

ফেঞ্চুগঞ্জ প্রতিনিধি :: আজ ১১ ডিসেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ঐ দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ফেঞ্চুগঞ্জের সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজয় বরন করে।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা ফেঞ্চুগঞ্জ হাকালুকি হাওরে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই হয়। একই সাথে ফেঞ্চুগঞ্জের সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ফেঞ্চুগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে পাকসেনাদের ব্যাংকারে গোলাবর্ষণ করতে করতে ব্যাংকার অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে। দীর্ঘ লড়াইয়ে পুরপুরি সফলতা লাভ করে মুক্তিযোদ্ধারা। স্মরণকালের এ লড়াইয়ে বিপুল সংখ্যক পাক সেনা নিহত হয়। জীবিত অবস্থায় অস্ত্রসহ অনেক পাকবাহিনীকে ধরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধের দাবানলের সূচনালগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তৎকালীন আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান নেতা মরহুম আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ ফেঞ্চুগঞ্জ থানা থেকে অস্ত্র নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে পাহারা বসানো হয়। ফেঞ্চুগঞ্জের কৃতি সাহসী যোদ্ধা মরহুম সৈয়দ মকবুল আলী, শহীদ ডাঃ ফয়েজ মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া, বর্তমান আনসার কমান্ডার আজমল হোসেন রইফসহ কয়েকজন পাহারায় অংশ নেয়। এরই মধ্যে কয়েকজন সাহসী যোদ্ধা পাক সেনারা ফেঞ্চুগঞ্জ আগমনে প্রতিবন্ধকতা হিসাবে ফেঞ্চুগঞ্জ ইলাশপুর রেলওয়ে ব্রীজ ডিনামাইট বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়।

১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে দল বেঁধে ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকা প্রবেশ করে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের ‘কাইয়ার গুদামে’ আস্তানা গড়ে। শুরুতেই রাজাকারদের সহায়তায় ফেঞ্চুগঞ্জ ইসলামপুর গ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম হাজী আছকর আলীর বাড়িতে হানা দেয়। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে কুখ্যাত রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা মরহুম আছকর আলীর পুত্র তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্মী আছাদুজ্জামান বাচ্চুকে ধরে নিয়ে যায়। এ ছাত্রনেতা আর ফিরে আসেনি জল্লাদদের হাত থেকে। বিভিন্ন জনের ভাস্যমতে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ফেঞ্চুগঞ্জের প্রথম শহীদ আছাদুজ্জামান বাচ্চু। ফেঞ্চুগঞ্জের ‘কাইয়ার গুদাম’ জল্লাদখানা তৈরি করে ফেঞ্চুগঞ্জের অসংখ্য নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
 
জল্লাদখানা কাইয়ার গুদামে নির্যাতনের শিকার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৈয়দ আমিনুর রশিদ মকুল সিলেটভিউয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, রাতের বেলা হঠাৎ করে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার মানিককোনার আসলাম আলী তার দল নিয়ে আক্রমন করে। সৈয়দ ইন্তাজ আলী, সৈয়দ সুহেল আহমদ, সৈয়দ রিয়াছত আলী কে জোর করে জল্লাদখানা কাইয়ার গুদামেম ধরে নিয়ে যায়। ও মুক্তি বাহিনীকে খবর দিতে বলে। তারা মুখ না খোলায় চলে অমানুষীক নির্যাতন। রাকাকার কমান্ডর আসলাম, মোগলপুরের সুরুজ আলী, পাঠানটিলার আছমত আলী মিলে তাদেরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে হান্ডার (পিটানোর অস্ত্র) দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটাতে থাকে। অসহ্য যন্ত্রনায় কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে গেলে বাকিদের উপর চলতে থাকে নানা কৌশলের অত্যাচার। এ সময় নির্যাতনে মৃত একজনকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এ সময় রমজান মাস ছিল।

দুই দিনের অভুক্ত তারা নির্জীব হয়ে যাচ্ছিলেন। পরে পাক বাহিনীর একজন তাদের কে কলা ও রুটি দেয়, কিন্তু তাদের সামনেই একটি লাশ ফেলতে দেখে মৃত্যু ভয়ে কিছুই গলা দিয়া নামছিলো না।

জল্লাদখানা কাইয়ার গুদাম নিয়ে গনকবি মফজ্জিল আলী সিলেটভিউয়ে দেওয়া সাক্ষাতকারে জানান, এই কাইয়ার গুদামে নিরীহ বাঙ্গালীদের ধরে এনে হত্যা করা হত, নারীদের ইজ্জত লুট করে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করে পাশের কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেওয়া হত।

নারী পুরুষ ধরে এনে গুদামের সামনেই কুশিয়ারা নদীর কাছে নিয়ে বেয়েনেট চার্জ ও গুলি করে হত্যা করে ওরা নদীতে ফেলে দিত। মফজ্জিল আলীর মামা ইজ্জত আলী শাহ, মায়ের চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম শাহ, খালাতো ভাই নাসিরুদ্দিন রতন, কলা মিয়া, একদিনে সাত-আটজন লোককে পাকিস্তানিরা ধরে আনে কাইয়ার গুদামে। অনেক টর্চার করছে ওরা। ওরা বলত- ‘তোদের আমরা গুলি করে মারব না। তোরা ধুকে ধুকে মরবি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই।’ তাই হয়েছিল। আমার মামাও তেমনি কয়েক মাসের মধ্যে মারা যায়।

স্মৃতি চারণ করে তিনি বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ যেদিন মুক্ত হয় সেদিন প্রথম এসে কাইয়ার গুদামে ঢুকি। প্রথমে একটা কক্ষে দেখি মেঝেতে জমাট জমাট রক্ত! কক্ষের পিছনে একটা ছোট্ট ড্রেন ছিল। ড্রেনটা ছিল মানুষের রক্তে ভর্তি। বড় ড্রেনটা রক্ত আর মাছিতে ভরা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এত বড় একটা ইতিহাস প্রায় চাপা পড়ে যাচ্ছে! এই জায়গাটাকে উপজেলা প্রশাসন বধ্যভূমি হিসাবে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন ঠিকই কিন্তু এখানকার ইতিহাস বাচাবার কোন দায় দায়িত্ব কারো নেই!

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১১ ডিসেম্বর ২০১৯/এফইউ/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.